ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি ও যানজট : সিএনজি স্টেশনের জন্য জমি দিতে চায় না রেলওয়ে

সুজিত সাহা চট্টগ্রাম ব্যুরো

যানবাহনের জ্বালানি রূপান্তর ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য দুই দশকে ৪১টি প্রতিষ্ঠানকে জমি ইজারা দিয়েছিল রেলওয়ে। তবে এবার এ খাতে জমি ইজারা দেয়া বন্ধ করতে চাইছে সংস্থাটি। একই কারণে চুক্তি নবায়নের আবেদনে থাকা ইজারার মেয়াদও বাড়াতে চাইছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেললাইন এলাকায় যানজট, ট্রেন চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও উন্নয়নকাজের জন্য ভূমির প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে ভূমি ইজারা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ কারণে চালু থাকা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের ইজারার চুক্তি নবায়ন করা হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভূমি ইজারা দেয়া হয়েছিল, বিভিন্ন কারণে এর মধ্যে ২২টির বরাদ্দ আদেশ বাতিল করা হয়েছে। কার্যক্রম চালু থাকা ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ছয়টি ও চট্টগ্রামে ১১টি। এর মধ্যে আবার চট্টগ্রামের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করলেও ইজারা নবায়ন করতে আগ্রহী নয় রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগ। রেলের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, যানজট ও রেল চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এসব কারণে তাদের ইজারা নবায়ন করা হয়নি। তবে নিয়মিত ইজারামূল্য পরিশোধসাপেক্ষে তারা কার্যক্রম চালু রেখেছে।

সূত্র জানায়, স্পিড ট্র্যাক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের জন্য ২০০৩ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামে শূন্য দশমিক ৪৯৫ একর জমি ইজারা দেয়া হয়, যা হস্তান্তর করা হয় ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি। চট্টগ্রামের ইস্পাহানি রেলগেট-সংলগ্ন এই ফিলিং স্টেশনটির ইজারার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি আরো পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়নের আবেদন করলে রেলের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্যরা ইজারাকৃত জমি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিং স্টেশনটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মূল লাইন থেকে মাত্র ৯ দশমিক ১৫ মিটার বা ৩০ ফুট দূরে অবস্থিত। রেলপথের খুব সন্নিকটে থাকায় ফিলিং স্টেশনটি ট্রেনচালকের দৃষ্টিসীমার মধ্যে পড়ে যায়। এতে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস রিফিল করার জন্য আসা যানবাহন সড়কের পাশেই লাইন ধরে রাখা হয়, এতে ওই এলাকায় যানজট তৈরি হয়। অনেক সময় যানবাহন লাইন ধরতে গিয়ে রেললাইন পার হয়ে যায়। পরিদর্শনকালে রেলের কর্মকর্তারা গ্যাস রিফিল করতে আসা যানবাহনগুলো রেললাইনের ওপর উঠে যেতেও দেখেছেন। এতে ট্রেন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

সম্প্রতি রেলওয়ের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও সিএনজি ফিলিং স্টেশন নিয়ে কর্তৃপক্ষের দুশ্চিতার কথা জানা যায়। রেলের উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের তৈরি ওই প্রতিবেদনে নতুন করে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের জন্য জমি ইজারা না দেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। পারতপক্ষে সংশ্লিষ্ট জমি রেলের অদূর ভবিষ্যতে প্রয়োজন হবে কিনা, তা নিশ্চিত করে প্রতি বছর বর্ধিত মূল্যে বাণিজ্যিক হারে ইজারা দেয়ার কথা বলা হয়।

রেলের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামের অধিকাংশ চালু সিএনজি ফিলিং স্টেশনই ব্যস্ত সড়কের পাশে, এমনকি রেলপথের সন্নিকটে ইজারা দেয়া হয়েছে। ফলে এসব ফিলিং স্টেশনের কারণে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর একটি হলো শহরের মাদারবাড়ী এলাকার ফোর স্টার সিএনজি ফিলিং স্টেশন। এ ফিলিং স্টেশনে আসা যানবাহনের চাপে ওই এলাকায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। ফিলিং স্টেশনটির কাছে থাকা রেল ক্রসিংয়ে প্রতি বছর একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটছে যানজট ও অব্যবস্থাপনার কারণে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, যখন ভূমি ইজারা দেয়া হয়েছিল, তখনকার প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভূমির প্রয়োজন হয়। এছাড়া মেট্রোপলিটন শহর কিংবা মহানগরীগুলোতে যানবাহন বৃদ্ধির কারণে ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনের জন্য তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রেলসংলগ্ন এলাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশন হওয়ায় ট্রেন ছাড়া সাধারণ মানুষও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছে। অন্যান্য দেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন নিরাপদ স্থানেই স্থাপন করা হয়। এ কারণে রেলওয়ে ক্রমান্বয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ইজারার খাত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে যানবাহনে সিএনজি রূপান্তর শুরু হওয়ার পর সরকারি সিদ্ধান্তে বিভিন্ন প্রান্তে ফিলিং ও রূপান্তর স্টেশনের জন্য রেলের জমি ইজারা দেয়া হয়। তবে বর্তমানে যানবাহনের জ্বালানি রূপান্তর অনেকাংশে কমে গেছে। রেলের ভূমি বরাদ্দ নীতিমালাও সংশোধন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাই কেউ কেউ চুক্তি নবায়ন করতে চাইলেও তা করা হয়নি। নতুন নীতিমালা পাস হলে উচ্ছেদ কিংবা ইজারা বাতিলের বিষয়টি রেলওয়ে বিবেচনা করবে। আপাতত নতুন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন কিংবা এ খাতে ভূমি বরাদ্দকে নিরুৎসাহিত করছে রেলওয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন