চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৬% ডেঙ্গু রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৬৮ জন। আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ২৭ হাজার ৮৭৬ জন। গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক নিয়মিত পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার, ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান।

সভায় জানানো হয়, গত ৭ আগস্টের তুলনায় ৮ ও ৯ আগস্ট চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা রোগীর হার বেড়েছে যথাক্রমে ২৪ ও ১৯ শতাংশ। সারা দেশে বর্তমানে মোট রোগী ভর্তি আছে ৮ হাজার ৭৬৩ জন। ঢাকার ৪০টি সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে এ মুহূর্তে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬ জন, যা গত তিনদিনের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তবে রাজধানী বাদ দিয়ে ঢাকাসহ মোট আট বিভাগে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৬৮৭ জন। গত ৮ আগস্টও এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় (৮ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৯ আগস্ট সকাল ৮টা) পর্যন্ত নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, নতুন করে রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। গত ৭ ও ৮ আগস্টের তুলনায় ৯ আগস্ট দেশে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর হার কমেছে যথাক্রমে ১৮ ও ১৪ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ৯ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ১০ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৪০টি হাসপাতালে ২ হাজার ১৭৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এসব হাসপাতালে আগে থেকে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৪২০। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ২৯ হাজার ৩৯৫ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৩৮ জন। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ১৮৪ ও জুলাইয়ে ছিল ১৬ হাজার ২৫৩।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি আছে ৮৪৮ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ৬৩ জন, বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৪১৮ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ২৪ জন, বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ১৬৭ জন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮ জন, বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৪৫০ জন। বিএসএমএমইউতে নতুন ভর্তি হয়েছে ৩০ জন, বর্তমানে ভর্তি আছে ১৮৯ জন। পুলিশ হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ১৪ জন আর বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ১২৭ জন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ১১৩ জন, বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৫৫৩ জন। বিজিবি হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে দুজন, বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ২৬ জন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ২৪ জন, বর্তমানে ভর্তি আছে ২২১ জন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ৭২ জন, মোট ভর্তি আছে ৩৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোয় নতুন ভর্তি হয়েছে ২৭৭ জন এবং বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯১২ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ভর্তি হয়েছে ২২৬ জন, বর্তমানে ভর্তি আছে ৭৬৭ জন। খুলনা বিভাগে নতুন ভর্তি হয়েছে ১২৬ জন, বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৬৬৫ জন। রংপুর বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৭১ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছে ৩০৩ জন। রাজশাহী বিভাগে ভর্তি হয়েছে ১১৪ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছে ৫০৬ জন। বরিশাল বিভাগে ভর্তি হয়েছে ১৭৮ জন, বর্তমানে ভর্তি আছে ৬০০ জন। সিলেট বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৩২ জন আর ভর্তি আছে ১০৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৮৭ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছে ৩০২ জন।

বরিশালে একজনের মৃত্যু: বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুশা আক্তার (১০) নামের এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সকাল ১০টার দিকে মারা গেছে। এর আগে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকীর হোসেন জানান, রুশার পরিবার ঢাকায় থাকে। ঢাকায় অবস্থানকালেই সে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। দুই দিন আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রুশা রাজাপুরের গ্রামের বাড়ি আসে। পথে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল নগরীর বেসরকারি রাহাত-আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রুশাকে মুমূর্ষু অবস্থায় শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে গত এক মাসে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন এবং গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন