আমদানির অনুমতি নিয়ে জটিলতা : ব্রহ্মপুত্রে আটকে আছে দুটি পাথরবোঝাই জাহাজ

বাদশাহ্ সৈকত কুড়িগ্রাম

নৌপথে ভারত থেকে ভুটানি পাথর আমদানি করে বিপাকে পড়েছেন দুই ব্যবসায়ী। তাদের আমদানি করা পাথরবোঝাই দুটি জাহাজ ১৩ দিন ধরে কুড়িগ্রামের চিলমারী ঘাটের পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র নদে আটকে আছে। শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা দিয়ে ভুটানি পাথর আমদানি করার অনুমতি আছে। এ ব্যবসায়ীরা তা না জেনেই পাথর আমদানি করেছেন। এ কারণে পাথরবোঝাই জাহাজ দুটি আটকে নয়, বরং ‘চলচ্ছক্তিহীন’ করে রাখা হয়েছে। তবে আমদানিকারকদের দাবি, দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্প গ্রুপও এর আগে একই পথে ভুটানি পাথর আমদানি করেছিল।

জানা গেছে, নাসির উদ্দিন ও মুকুল নামের শেরপুরের দুই পাথর ব্যবসায়ী ভারতের আসাম থেকে ৫০০ টন ভুটানি পাথর কেনেন। এসব পাথর তারা এমবি ঈগল ও এমবি বদিউজ্জামান-২ নামের দুটি জাহাজে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে দেশে নিয়ে আসেন। তবে গত ২৫ জুলাই কাস্টমস কর্মকর্তারা ক্লিয়ারেন্স না থাকার অজুহাতে জাহাজ দুটি আটকে দেন। সেই থেকে জাহাজগুলো কুড়িগ্রামের চিলমারী ঘাটের পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র নদে আটকে আছে। সব নিয়ম মেনেই পাথর আমদানি করেছেন বলে দাবি দুই ব্যবসায়ীর।

পাথর ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন খান বলেন, গত ২৫ জুলাই থেকে জাহাজ দুটি আটক রেখে নানা টালবাহানা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তারা বাণিজ্য সম্ভাবনার একটি নতুন দিগন্তকে গলা টিপে হত্যা করতে চাইছেন।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর আসাম থেকে জলপথে পাথর আমদানির এটা দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ১৮ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপ ভুটান থেকে এ পথেই পাথর আমদানি করেছে। কিন্তু এখন অজানা কারণে কাস্টমস ১৩ দিন ধরে আমাদের পাথরবোঝাই জাহাজ দুটো আটকে রেখেছে। জাহাজ দুটি আটক থাকার কারণে আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

শুল্ক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ভুটানের পণ্য শুধু বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা দিয়ে আমদানির অনুমোদন আছে। এ দুই ব্যবসায়ী কাস্টমসের কোনো অনুমোদন না নিয়েই নৌপথে পাথর আমদানি করেছেন। পাথরবোঝাই জাহাজ দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে রংপুর কাস্টমস। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে জাহাজগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে কুড়িগ্রামের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জাহাজ দুটোকে আটকে রাখা হয়েছে বলতে নারাজ কাস্টমসের রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা আকতার হোসাইন। তার ভাষায়, জাহাজ দুটিকে সাময়িকভাবে ‘চলচ্ছক্তিহীন’ করে রাখা হয়েছে।

আমদানির সব প্রক্রিয়া মানার পরও এ ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র দিয়ে নৌরুটে পণ্য আমদানির বিষয়ে চুক্তি হলেও বাস্তবিক পক্ষে আমরা এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। কারণ আমদানি তদারক করতে চিলমারী পয়েন্টে আমাদের লোকবল এখনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। এটি না জেনেই শেরপুরের দুজন ব্যবসায়ী ভারত থেকে পাথর আমদানি করেছেন।

তিনি আরো বলেন, জাহাজ দুটোকে সাময়িকভাবে ‘চলচ্ছক্তিহীন’ করে রাখা হয়েছে মাত্র। ওই ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছেন। কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নৌপথে এর আগে পাথর আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিসাপেক্ষে সেটা হয়েছে। আপাতত বুড়িমারী ও বাংলাবান্দা রুট ছাড়া অন্য কোনো রুটে ভুটানের পাথর আমদানির কোনো অনুমতি নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন