সিল্করুট

মিনহাজ-ই-সিরাজ

আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া

বিভিন্ন ভাষায় তবকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থের প্রচ্ছদ

মিনহাজ-ই-সিরাজ ৫৮৯ হিজরী (১১৯৩ খ্রি.) সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ও পরিচয় ছিল কাজী-উল-কুজ্জাত সদর-ই-জাহান আবু উমর ওয়া মিনহাজ-উদ্-দীন ওসমান বিন সিরাজ-উদ্-দীন মোহাম্মদ আফসাহ্-উল-আজম উজবাত-উজ্‌-জমান ইবন-ই-মিনহাজ-উদ্-দীন আল-জোজ্‌জানী। তিনি কাজী মিনহাজ-ই-সিরাজ নামে সমধিক পরিচিত।

তাঁর পিতার নাম মওলানা সিরাজ-উদ-দীন মোহাম্মদ জোজ্‌জানী, পিতামহের নাম মওলানা মিনহাজ-উদ্-দীন ওসমানী জোজ্‌জানী, প্রপিতামহের নাম ইব্রাহিম জোজ্‌জানী ও প্রপ্রপিতামহের নাম আবদুল খালেক জোজ্‌জানী। মওলানা আবদুল খালেক একজন ইমাম ছিলেন। তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে জোজ্‌জান থেকে গজনীতে আগমন করেন এবং গজনীর তদানীন্তন সুলতান ইব্রাহিমের ৪০ জন কন্যার মধ্যে একজনের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

মিনহাজ-ই-সিরাজ যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁর পিতা লাহোরে কাজী পদে নিযুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। এ কারণে অনেকে অনুমান করেন যে, লাহোরই ছিল মিনহাজের জন্মস্থান। কিন্তু ৬২৪ হিজরী (১২২৭ খ্রি.) সনে তিনি যখন সিন্ধু রাজ্যের উচ্‌হ্ নামক স্থানে আগমনের কথা উল্লেখ করেন, সেটিই তাঁর হিন্দুস্তানে প্রথম আগমন ছিল বলে মেজর রেভার্টি অভিমত প্রকাশ করেন (রেভার্টি, p. xx)। এ কারণে রেভার্টি বলতে চান যে তিনি লাহোরে জন্মগ্রহণ করেননি। কিন্তু হাবিবী কর্তৃক সম্পাদিত গ্রন্থে এটিই যে তাঁর হিন্দুস্তানে প্রথম আগমন সে উল্লেখ নেই (১৩ পৃঃ)। মীনহাজ কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে উল্লেখ কোথাও নেই।

তাঁর পিতা৷ মওলানা সিরাজ-উদ্-দীন মোহাম্মদ ৫৯১ হিজরী (১১৯৪-৫ খ্রি.) সনে বামিয়ান রাজ্যের সুলতান বাহা-উদ্-দীন সামের অনুরোধে সে রাজ্যের কাজীর পদ গ্রহণ করেন বলে মীনহাজ উল্লেখ করেছেন। মীনহাজের বয়স তখন ৩ বছর। এরপরে তাঁর পিতা সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে। সুলতান তার্কিশ খোওয়ারজম শাহ্ বাগদাদের খলিফা নাসির-উদ্-দীন বিল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে সুলতান গিয়াস-উদ্-দীন মোহাম্মদ সাম মিনহাজের পিতাকে মাকরানের পথে বাগদাদের খলিফার নিকট প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে একদল দস্যুর হস্তে তিনি নিহত হন।

মিনহাজ-ই-সিরাজ এর মাতা ছিলেন সুলতান গিয়াস-উদ্-দীন মোহাম্মদ সামের কন্যা মাহ্ মালিকের দুধ-ভগ্নী ও বিদ্যালয়ে সহপাঠিনী। বিবাহের পরও তিনি রাজপ্রাসাদে নিযুক্ত থাকেন এবং গ্রন্থকারের কৈশোর সেখানেই অতিবাহিত হয় বলে তবকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থের বহুস্থানে উল্লেখ আছে।

৬০৭ হিজরী (১২১০ খ্রি.) সনে যখন সুলতান গিয়াস-উদ্-দীন মোহাম্মদ সাম-এর পুত্র সুলতান গিয়াস-উদ্-দীন মাহ্‌মুদ আততায়ীর হস্তে নিহত হন, গ্রন্থকার মীনহাজ তখন আঠার বছরের যুবক এবং ফিরোজ কোহ্ নামক স্থানে অবস্থানরত। এর পরে ৬১১ হিজরী (১২১৪ খ্রি.) সনে তিনি ফিরোজ কোহ্ পরিত্যাগ করেন এবং বছর দুই পরে তাঁকে সিজিস্তানের রাজধানী জারন্‌জ্‌ নামক স্থানে অবস্থানরত দেখা যায়। ৬১৭ হিজরী সন থেকে ৬২০ হিজরী (১২২০-২৩ খ্রি.) সন পর্যন্ত তিনি তোলক নামক স্থানে বসবাস করেন এবং চেঙ্গিস খান ও তাঁর অনুগামীদের আক্রমণ থেকে নগর রক্ষার কাজে ব্যাপৃত থাকেন। ৷

৬১৮ হিজরী (১২২১ খ্রি.) সনে তিনি তাঁর এক আত্মীয়াকে বিবাহ করেন। তখন তাঁর বয়স প্রায় ৩০ বছর। তিনি ৬২০ হিজরী (১২২৩ খ্রি.) সনে হিন্দুস্তানে আগমনের চেষ্টা করেন। কিন্তু মোঙ্গলদের আক্রমণের দরুন পথ বন্ধ থাকায় অকৃতকার্য হন। এর পরেও তিনি হিন্দুস্তানে আসার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন চেষ্টাই সফল হয়নি। অতঃপর ৬২৩ হিজরী (১২২৬ খ্রি.) সনে তিনি যে-প্রচেষ্টা নেন তাতে তিনি কিছু সাফল্য লাভ করেন। কিন্তু পথে মালিক তাজ উদ্-দীন বিনাল-তিঘিন-এর সিজিস্তানের সাফ্‌হেদ নামক দুর্গে তাঁকে কিছুদিনের জন্য অন্তরীণ হয়ে থাকতে হয়। অতঃপর সেখান থেকে মুক্তিলাভ করে ৬২৪ হিজরী (১২২৭ খ্রি.) সনে তিনি হিন্দুস্তানের পথে যাত্রা করেন এবং গজনী ও বনিয়ান হয়ে নৌকা যোগে সিন্ধুদেশের উচ্‌হ্ নামক স্থানে উপস্থিত হন। সুলতান নাসির-উদ্-দীন কবাচা তখন উচ্‌হ্‌ ও মুলতানের অধিপতি। তিনি মীনহাজকে উচ্‌হ্‌-এর ফিরোজীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত এবং সেই সঙ্গে তাঁর পুত্র আলা-উদ্-দীন বাহ্‌রাম শাহ্‌র সৈন্যদলের কাজীর পদও প্রদান করেন।

পর বৎসর সুলতান ইলতুৎমীশ উচ্হ্ আক্রমণ করলে মীনহাজ সুলতান ইলতুৎমীশের দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং সুলতান নাসির-উদ্-দীন কবাচার চূড়ান্ত পরাজয়ের পর তিনি সুলতানের সঙ্গে দিল্লীতে আগমন করেন। ৬২৯ হিজরী (১২৩২ খ্রি.) সনে গোওয়ালিয়র অভিযানে তিনি সুলতান ইলতুৎমীশের সহযাত্রী হন এবং সে স্থান অধিকৃত হলে তিনি সেখানে কাজী, খতীব ও ইমামের পদ লাভ করেন। এর আগে অর্থাৎ ৬২৫ হিজরী সনে দিল্লী আসার পরে তিনি কোন চাকুরি করেছিলেন কিনা তার উল্লেখ পাওয়া যায় না। ৷

সুলতান ইলতুৎমীশের মৃত্যুর পরে সুলতান রাজিয়ার রাজত্বকালে তিনি গোওয়ালিয়র থেকে দিল্লীতে ফিরে আসেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধিরা গোওয়ালিয়রে তাঁর কার্য পরিচালনা করেন। দিল্লীতে তাঁকে নাসিরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করা হয় ৬৩৫ হিজরী (১২৩৭ খ্রি.) সনে।

সুলতান মু’ইজ্জ্-উদ্-দীন বাহ্‌রাম শাহ্‌র রাজত্বকালে ৬৩৯ হিজরী (১২৪১ খ্রি.) সনে তাঁকে রাজ্যের ও দিল্লী নগরের প্রধান কাজীর পদে নিযুক্ত করা হয়। এ সময়ে সুলতান বাহ্‌রাম শাহ্‌র সঙ্গে মালিকদের সংঘাত ঘটে এবং মীনহাজ তাঁর পোষ্টা সুলতানের পক্ষে ছিলেন বলে ঘটনাবলী প্রমাণ করে। সে সময়ে উজীর মহজ্জব-উদ্-দীন একদল দুর্বৃত্ত দ্বারা জুম্মা মসজিদ গ্রন্থকারের প্রাণহানির চেষ্টা করে অকৃতকার্য হন।

৬৪০ হিজরী (১২৪২ খ্রি.) সনে সুলতান আলা-উদ্-দীন মাস্‌-উদ শাহ্ সিংহাসনের অধিকারী হলে মীনহাজ কাজীর পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়ে সুদূর লাখনৌতি রাজ্যের দিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে যাত্রা করেন। তিনি লাখনৌতি রাজ্যে দুই বৎসর বসবাস করেন এবং সেখানকার শাসনকর্তা তুঘরীল তোঘান খানের সঙ্গে উড়িষ্যা আক্রমণে সহযোগী হয়ে কাতাসীন নামক স্থান পর্যন্ত অগ্রসর হন। অচিরেই তোঘান খান যুদ্ধে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন এবং উড়িষ্যা রাজ লাখনৌতি নগর অবরোধ করেন। তোঘান খানের আবেদনে দিল্লীর সুলতান মাস্‌-উদ্ শাহ্ অযোধ্যার শাসনকর্তা মালিক তমোর খান ও অন্যান্য মালিককে সসৈন্যে লাখনৌতিতে প্রেরণ করেন। এতে উড়িষ্যা বাহিনী লাখনৌতি পরিত্যাগ করে চলে যায়। কিন্তু মালিক তমোর খান লাখনৌতি রাজ্য দাবী করে বসেন। মীনহাজের মধ্যস্থতায় আপোষ-মীমাংসা হয় এবং মালিক তমোর খানকে লাখনৌতি রাজ্য ছেড়ে দিয়ে মালিক তোঘান খান দিল্লী চলে যান। মীনহাজ মালিক তোঘান খানের সঙ্গে পরিবার-পরিজনসহ দিল্লী ফিরে যান। এই ঘটনা ঘটে ৬৪৩ হিজরী (১২৪৫ খ্রি.) সনের প্রথম দিকে। লাখনৌতিতে অবস্থানকালে মীনহাজ সে রাজ্যের ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কে জ্ঞানলাভের চেষ্টা করেন।

দিল্লীতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি তাঁর একজন নূতন (?) পৃষ্ঠপোষকের সহানুভূতি লাভে সমর্থ হন। তিনি ছিলেন আমির-ই-হাজীব উলুঘ খান-ই-আজম (পরে সুলতান গিয়াস-উদ্-দীন বলবন)। তাঁর প্রচেষ্টায় অচিরেই তিনি দিল্লীর নাসিরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদে পুনরায় নিযুক্ত হন এবং সেই সঙ্গে গোওয়ালিয়র রাজ্যের কাজীর পদও লাভ করেন। সে বছর মোঙ্গলদের হাত থেকে উচ্‌হ্ নগর মুক্ত করার উদ্দেশ্যে যে-অভিযান চালান হয়, তাতে মিনহাজ সহযাত্রী হন।

৬৪৪ হিজরী (১২৪৬ খ্রি.) সনে উলুঘ খান-ই-আজমের সক্রিয় সহায়তায় সুলতান নাসির-উদ্-দীন মাহমুদ শাহ্ সিংহাসনের অধিকারী হলে মীনহাজের ভাগ্যও উজ্জ্বল হয়। সুলতান তাঁকে জলন্ধরে বহু মূল্যবান উপহারাদি ও একটি মূল্যবান অশ্ব দান করেন। পর বৎসর তালসন্দহ্ অভিযানকে কেন্দ্র করে গ্রন্থকার ‘‌নাসিরীনামা’ নামক একখানি কাব্য রচনা করেন। প্রীত হয়ে সুলতান তাঁকে একটি বাৎসরিক বৃত্তি প্রদান করেন এবং কাহিনীর প্রকৃত ‘‌নায়ক’ মালিক উলুঘ খান-ই-আজম তাঁকে হানসী রাজ্যে একটি গ্রাম প্রদান করেন।

৬৪৯ হিজরী (১২৫১ খ্রি.) সনে মীনহাজকে দ্বিতীয় বারের মত দিল্লী রাজ্য ও নগরের প্রধান কাজীর পদে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু এর দুই বছর পরে ইমাদ-উদ্-দীন রায়হান নামক একজন স্থানীয় মালিক (মীনহাজের মতে) সুলতানের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন এবং তাঁর প্ররোচনায় মীনহাজের পোষ্টা উলুঘ খান-ই-আজম পদচ্যুত ও রাজদরবার থেকে নির্বাসিত হলে মীনহাজও তাঁর চাকুরি থেকে বরখাস্ত হন। পর বৎসর অর্থাৎ ৬৫২ হিজরী (১২৫৪ খ্ৰীঃ) সনে মীনহাজের অবস্থার কিছু উন্নতি ঘটে এবং সুলতান তাঁকে ‘‌সদর-ই-জাহান’ উপাধি দ্বারা ভূষিত করেন। পর বৎসর উলুঘ খান-ই-আজম আবারও ক্ষমতার অধিকারী হন এবং মীনহাজকে তৃতীয়বারের মত রাজ্য ও দিল্লী নগরীর প্রধান কাজীর পদে নিযুক্ত করা হয়। 

এর পরে গ্রন্থকার সম্পর্কে আর বিশেষ কোন উল্লেখ নেই। তবে এ গ্ৰন্থ রচনাকাল ৬৫৮ হিজরী (১২৬০ খ্রি.) সন পর্যন্ত যে তিনি প্রধান কাজীর পদে বহাল ছিলেন তার প্রমাণ আছে। ৬৫৮ হিজরী সনে এ গ্রন্থ সম্পর্কে তার শেষ উক্তি আছে। তখন তাঁর বয়স প্রায় ৭০ বছর। সে ৰবছরে উলুঘ খান-ই-আজমের বিদ্রোহী মিউ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযানের অসাধারণ সাফল্যের বর্ণনা এবং খোরাসান থেকে আগত হোলাকু খানের দূতের প্রতি দিল্লীর সুলতান কর্তৃক প্রদত্ত বিরাট অভ্যর্থনার বর্ণনা শেষ করে গ্রন্থকার নিজের সম্পর্কে তাঁর শেষ উক্তি করেন। তা ছিল নিম্নরূপ: ‘‌যদি জীবন বর্ধিত হয় ও মহাকাল সময়ৰবাড়িয়ে দেয় এবং (ইতিহাস লেখার) এই প্ৰবণতা৷ থাকে, তবে এর পরে যে-সমস্ত ঘটনা ঘটবে, তা লিপিবদ্ধ করা হবে।’ এর পরে তার নিজের ও পরিবার সম্পর্কে অতি সামান্য উক্তি থাকলেও এই ঘটনার পরের কাহিনী তিনি লিপিবদ্ধ করে যাননি।

৬৫৮ হিজরী সনে (১২৬০ খ্রি.) এ গ্রন্থ রচনা৷ শেষ করে তিনি তা সুলতান নাসির-উদ্-দীন মাহমুদ শাহর নামে (তবকাত-ই-নাসিরী) নামকরণ করে সুলতানের হস্তে প্রদান করলে সুলতান তাঁকে প্রচুর পুরস্কার, ১০ হাজার জিতলের বার্ষিক বৃত্তি ও একটি গ্রাম প্রদান করেন। উলুঘ খান-ই-আজমকে গ্রন্থের একটি প্রতিলিপি প্রদান করা হলে তিনিও গ্রন্থকারকে প্রচুর পুরস্কার ও ২০ হাজার জিতল নগদ মুদ্রা প্রদান করেন। ২৩ তবকতের উপসংহারে শেষোক্ত বর্ণনাগুলি আছে।

মীনহাজের শেষ জীবন সম্পর্কে কোন তথ্যই জানা যায় না।৷ ৬৫৮ হিজরী সনের পরের তাঁর কোন রচনার সন্ধানও পাওয়া যায় না। সুলতান মাহ্‌মুদ শাহ্ ৬৬৪ হিজরী (১২৬৫ খ্রি.) পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন বলে নানাসূত্রে জানা যায়। তাঁর পরে তাঁর শ্বশুর উলুঘ খান-ই-আজম (সুলতান গিয়াস-উদ্-দীন বলবন) সিংহাসনের অধিকারী হন। তাঁর সময়ে মীনহাজ মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু কবে তা ঘটেছিল এবং কোথায় তিনি সমাহিত আছেন সে সম্পর্কে কোন তথ্যই পাওয়া যায় না।

মীনহাজ-ই-সিরাজ-এর জীবনী সম্পর্কে উপরে যা লিখা হয়েছে তার প্রায় সবই তাঁর রচিত আলোচ্য ‘‌তবকাত-ই-নাসিরী’ গ্রন্থে তিনি নিজের সম্পর্কে যে-সমস্ত উক্তি করেছেন তা অবলম্বন করে। এতে তাঁর জীবনের পূর্ণ প্রতিচ্ছবি নেই। তাঁর জীবনের শিক্ষা-দীক্ষা বা জীবনের প্রস্তুতির জন্য প্রথম জীবনে তিনি কি করেছিলেন, সে সম্পর্কে বিশেষ কোন উক্তি নেই। তবে তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য এবং দিল্লী সাম্রাজ্য ও নগরের প্রধান কাজীর পদে বার বার তাঁকে নিযুক্ত হতে দেখে ধারণা করা যেতে পারে যে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা অতি উঁচু মানের ছিল।

তিনি একজন সুফী ছিলেন বলে পরবর্তীকালের কোন কোন ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে তাঁর নিজের কোন উক্তি নেই অথবা নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণও নেই।

[আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া অনূদিত তবকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থ (বাংলা একাডেমি, ১৯৮৩) থেকে সংকলিত]

আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া: পুরাতাত্ত্বিক, গবেষক ও প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক