সিল্করুট

টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন

শিশির কুমার নাথ

টাঙ্গাইল শাড়ির পাড়, ১৯৭০-এর দশক, সংগ্রহ: রাবেয়া খাতুন ছবি: এশিয়াটিক সোসাইটির ‘চারু ও কারুকলা’ বই থেকে

টাঙ্গাইলের শাড়ি হইলে অঙ্গে জড়াইয়া রাখতাম/ পায়ে আলতা, মাথায় বেণী বান্দিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতাম / ও বন্ধুরে.... 

বন্ধু যদি টাঙ্গাইল শাড়ি হতো, তাহলে অঙ্গে জড়িয়ে রাখা হতো। প্রচলিত এ গানের কথায় ফুটে উঠেছে নারী মনের এমন বাসনা। পাবনা অঞ্চলের মেয়েলি গীতেও সে বাসনার প্রশ্রয়—ঘরের পাশে ভাঙা হাঁড়ি/স্বামী আমার টাঙ্গাইল শাড়ি। এ থেকে বোঝা যায় টাঙ্গাইল শাড়ি কতটা আদুরে। আটপৌরে জীবন, উৎসব, পার্বণ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়ি উদযাপনের অনুষঙ্গ। পরনে শাড়ি, গোছা দুই চুড়ি আর খোঁপায় ফুল—এতেই বাঙালি নারীর সহজাত সৌন্দর্য প্রকাশ। পরান নিংড়ানো সে সৌন্দর্যে কৃষ্ণও হয়েছেন ধরাশায়ী। চণ্ডীদাসের কথায়, ‘‌চলে নীল শাড়ি, নিঙাড়ি নিঙাড়ি-পরান সহিত মোর...।’

টাঙ্গাইল জেলা প্রাচীনকাল থেকেই বয়ন শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামটি যেন প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। বলা হয়, চমচম টমটম ও শাড়ি/এই তিনে টাঙ্গাইল বাড়ি। সম্প্রতি এ শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার খবরে এ দেশের সচেতন মহল অনেকটা বিস্মিত ও বিব্রত বলা চলে। 

বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের খ্যাতি খ্রিস্টের জন্মের বহু আগেই দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ দেশের বয়ন শিল্প সম্পর্কে দীনেশচন্দ্র সেন বলেছেন, ‘‌বঙ্গদেশ বস্ত্র-বয়ন শিল্পের জন্মভূমি। বসরার যেমন গোলাপ, হিমালয়ের যেমন দেবদারু বস্ত্র-বয়ন শিল্প তেমনি বঙ্গের নিজস্ব। এক্ষেত্রে বাংলার বাঙালির প্রতিদ্বন্দ্বী নাই’। [দীনেশচন্দ্র সেন, বৃহৎবঙ্গ, পৃ. ৯৩২]। ইতিহাসবিদদের মতে, বুননশিল্পীদের জীবন ছিল অনেকটা যাযাবরের মতো। সিন্ধু নদের তীরে এদের পূর্বপুরুষদের আবাস ছিল। রাজা লক্ষ্মণ সেনের আমলে এদের একটা অংশ সিন্ধু অববাহিকা থেকে ধামরাই হয়ে টাঙ্গাইলে হাজির হয়। ধামরাই ও টাঙ্গাইলের আশপাশে এদের কিছুসংখ্যক জীবন-জীবিকার সন্ধানে বসবাস করতে থাকে। ধামরাইয়ে আসা বুননশিল্পীরা পেশা পরিবর্তন করলেও টাঙ্গাইলে আগতরা পূর্বপুরুষের জীবিকাকেই আঁকড়ে রাখে। সেই থেকে এ অঞ্চলে বুননশিল্পীদের গোড়াপত্তন। টাঙ্গাইলের কাগমারীর মসলিন দিল্লির বাদশাহদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ওলন্দাজরা কুঠি স্থাপন করেছিল এ অঞ্চলে। ওলন্দাজ পর্যটক স্টেভোরেনাস ১৭৬৯-৭১ সালে এখানে পর্যটনে আসেন। ইউরোপীয় বাজারের জন্য যেসব অঞ্চলে বস্ত্র উৎপন্ন হতো তার মধ্যে কাগমারী রয়েছে। [আমাদের প্রাচীন শিল্প, তোফায়েল আহমদ] ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ আয়োজিত ‘‌শতাব্দীর বয়ন শিল্প’ প্রদর্শনীর আয়োজনে একটি টাঙ্গাইল শাড়ি প্রদর্শিত হয়েছিল। শাড়িটি তৈরির সময়কাল ছিল ১৮৭৭। [লোকশিল্প, সৈয়দ মাহবুব আলম, পৃ ৩৪] টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তন্তুবায় শ্রেণীকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ত্রিশ শতকের শেষভাগে কেন্দ্রীয় আর্টিজেন সমবায় সমিতি স্থাপিত হয়। টাঙ্গাইল শাড়ি কতটা প্রাচীন তার সঠিক কাল নির্ণয় করা না গেলেও এসব বিষয় থেকে এ শাড়ির প্রাচীনত্ব সম্পর্কে অনেকটা আভাস পাওয়া যায়।

বিষয়-বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি বরাবরই ছিল অনন্য। এ শাড়ির সুতা এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যাতে ধোয়ার পরে পানি লেগে সুতা মোটা হয়ে না যায়। নকশা তোলার জন্য ফ্রান্স থেকে আসা জ্যাকার্ড এবং ফ্লাই সাটেল মিশ্রণে টাঙ্গাইল শাড়ি হয়ে উঠে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শ্রীত্রৈলোক্যনাথ বসু ‘‌তাঁত ও রং’ গ্রন্থে জ্যাকার্ড সম্পর্কে বলেন, ‘‌১৮০০ খ্রিস্টাব্দে জ্যাকার্ড নামক জনৈক ফরাসি নিজের নাম দিয়া এ মেশিন আবিষ্কার করেন। ইহা একটি লৌহ নির্মিত কল। এই কল ঠকঠকি তাঁতের উপরেই ফিট করিতে হয়৷ কিন্তু ফ্রেমগুলি সাধারণত ঠকঠকি তাঁতের ফ্রেম অপেক্ষা উঁচু থাকিবে। ঠকঠকি তাঁত সাধারণত দুরকম। গর্ত তাঁত ও ফ্রেম তাঁত। সমান জমিতে চার কোণায় চারটি বাঁশ বা কাঠের খুঁটি পুঁতে আদি আমলের তাঁতের মতো মাটিতে গর্ত করে বসানো হয়।’ [চারু ও কারু কলা, এশিয়াটিক সোসাইটি, পৃ. ৫২০] 

টাঙ্গাইল শাড়ির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বুননশৈলী, রঙ বিন্যাস ও শিল্পীর নিজস্ব দক্ষতা। পাড়ের নকশার সঙ্গে সংগতি রেখে রঙিন সুতার সাহায্যে জমিনের নকশা করা হয়। সনাতন টাঙ্গাইল শাড়িতে চওড়া নকশাযুক্ত পাড় দেখা যায়। জমিনের বুটি খেয়াল করলে বোঝা যায় শাড়িটা হাতে বুটি তোলা না জ্যাকার্ডে বুটি তোলা। জ্যাকার্ডের বুটির দুই পাশে সমতা লক্ষণীয়, আর হাতে বুটি তোলা নকশা অসম। টাঙ্গাইলে দুই ধরনের নকশার কাজ হয়। এক ধরন হলো ঠকঠকি তাঁতে চিকন সুতার জমিনে বুটি এবং নকশা ছাড়া পাড়, পাড়ে বড় ডোরা থাকতে পারে। অন্য ধরনে জ্যাকার্ড ব্যবহারে পাড়, আঁচল ও জমিনে নকশা থাকে। এ শাড়ি তৈরির জন্য ৮০, ৮২, ৮৪, ১০০ কাউন্টের সুতার ব্যবহার হয়। পরতে বেশ নরম ও আরাম অনুভব হয়, টেকেও অনেক দিন।

টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরিতে আবহাওয়া ও পরিবেশের ভূমিকা ব্যাপক। পানির ভিন্নতার কারণে গুণগত মানের তারতম্য ঘটে। এ শিল্প দেশের অনেক স্থানে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও গুণগতমান নিম্ন থাকায় তা সম্ভব হয়নি। টাঙ্গাইলের বাজিতপুর, সখীপুর, করটিয়া, সন্তোষ, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চণ্ডী, নলশোধা, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, কুকরাইল, বাসাইল উপজেলার বাথুলীসহ বিভিন্ন তাঁতপল্লীতে টাঙ্গাইল শাড়ি উৎপাদিত হয়। এ শিল্পের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকসহ জড়িতদের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ।

পাথরাইলের ‘‌টাঙ্গাইল কুটির’-এর উদ্যোক্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, টাঙ্গাইলের তাঁতের ঐতিহ্য বহুকালের। তার বাবা আবুল হোসেন হচ্ছেন টাঙ্গাইলের প্রথম মুসলিম তাঁতি। একসময় বসাক সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার বাবার হাত ধরে এখানে তাঁত শিল্পের ব্যাপক বিস্তার লাভ হয়। বর্তমানে আব্দুর রাজ্জাকের ২৫টি তাঁত আছে। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিচিতি পেয়েছেন দেশ-বিদেশে। জানালেন তার কারখানায় কর্মরত সুদক্ষ কারিগর আজহার মিয়ার কথা। যিনি কারুশিল্পে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী। এমন দক্ষ অনেক কারিগর আছেন আব্দুর রাজ্জাকের কারখানায়। তবে এ শিল্পের সংকট সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‌ভারতীয় নকল শাড়ির কারণে প্রকৃত তাঁতের শাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নকল শাড়িতে বাজার সয়লাব হওয়ায় ক্রেতাও ঠকছেন। তাঁতিরাও পূর্বপুরুষের পেশা হারাচ্ছে।’ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আগে তাঁতিদের বাঁচাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে টাঙ্গাইলের রঘুনাথ বসাক, নীলকমল বসাক, আনন্দ গোবিন্দসহ অনেকেই এই তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

‘‌টাঙ্গাইল কুটির’-এর আরেক উদ্যোক্তা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছোট ভাই মো. রুস্তম আল অপু (অপু হাসান) একজন স্থপতি ও অভিনেতা। তাঁত নিয়ে তার আগ্রহ যথেষ্ট, জানাশোনাও বেশ। তিনি বলেন, ‘‌এ পাথরাইলকেই টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী বলা হয়। পরিবেশ দেখে মনে হবে এটি একটি শহর। বিভিন্ন জাতের মানুষ ও বিভিন্ন পেশার মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এর ঐতিহ্য। বেশির ভাগ মানুষই তাঁতের কারিগর ও তাঁত ব্যবসায়ী। এ অঞ্চলে মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানকার হিন্দু-মুসলিমরা একে অন্যের সঙ্গে এতটাই সম্পৃক্ত যে নামগুলোও প্রায় একরকম। দুই ধর্মের সমন্বয়েও অনেকের আত্মীয়তা মানে বিবাহবন্ধন লক্ষ করা যায়। তাছাড়া ধর্মকর্ম, মন্দির মসজিদ, চিতাখোলা (শ্মশানঘাট) গোরস্থান সবই পাশাপাশি। আজব এক জায়গা। আমাদের গ্রাম দেওজানের কথাই বলি। দেওজান কবরস্থানের সীমানাপ্রাচীর যেখানে শেষ ঠিক সেখান থেকেই শ্মশান শুরু, দেওজান মসজিদ এবং চণ্ডী মন্দির একেবারেই পাশাপাশি। দেওজান গ্রাম দিয়ে বয়ে চলে লৌহজং নদী। এই গ্রামেও হিন্দু-মুসলিম সমানে সমানে বসবাস। বসাক সম্প্রদায় থেকে ধীরে ধীরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তার লাভ করে এ তাঁত শিল্প। এই দেওজান গ্রামেই টাঙ্গাইলের প্রথম মুসলিম তাঁত শিল্পী আমার বাবা আবুল হোসেনের জন্ম। যিনি তাঁত শিল্পের বিস্তারে সংগ্রাম করে গেছেন। তাকে নিয়ে তাই আমরা গর্ববোধ করি। একসময় তাঁতিদের ঘরে ছিল পর্যাপ্ত খাবার, গাড়িঘোড়া, বিনোদনের জন্য ছিল রঙিন টেলিভিশন। শুক্রবার হলেই তাঁতিরা দলবেঁধে সিনেমা দেখতে যেত। মেয়ের বাপেরা তাঁতের কাজ জানা ছেলে খুঁজতেন তাদের মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য। তাঁতিরা একসময় শিক্ষিত চাকরিজীবীদের মতোই দামি জামাকাপড় পরত। তাঁত ঘর থেকে ক্যাসেট প্লেয়ারে সুন্দর সুন্দর গান শোনা যেত। আবার তাঁতিদের উদ্যোগে রাতে গ্রাম্য নাটক হতো। কী সুন্দর জীবনযাপন ছিল। শুধু ছিল না মহাজনী বা পত্তন প্রথা।’

পাথরাইলের আরেক তাঁতি অমিত বসাকের কথায়ও এ শিল্পের অতীত গৌরবের পাশাপাশি বর্তমান সংকটের চিত্র ফুটে ওঠে। অমিত বসাক নলশোধা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, তাঁতের কাজ করে একটি শাড়ি তৈরি করতে যে খরচ হয়, সে দামে শাড়ি বিক্রি হয় না। একসময় ৩-৪ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরি করে পেরে উঠতেন না। প্রচুর চাহিদা ছিল। এখন সেভাবে নেই। নকল পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলাও দায়ী বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। একসময় এ গ্রামে পাঁচ শতাধিক বসাক পরিবার ছিল। এখন টিকে আছে ২০ পরিবার। বেশির ভাগ পরিবার একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাড়ি দিয়েছে ভারতে। সেখানে গিয়ে এখানকার তাঁতিরা এ টাঙ্গাইল শাড়ির কাজ করছেন। এটা টাঙ্গাইলের নিজস্ব ঐতিহ্য।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুর রহমান বলেন, ‘‌বসাক সম্প্রদায়ই বংশপরম্পরায় এ শাড়ি বুনে থাকে। বিভিন্ন সময়ে বসাক সম্প্রদায়ের তাঁতিরা ভারতে অভিবাসী হয়ে সেখানে তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ফলে আমাদের এখানে বয়নশিল্পী কমেছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে টাঙ্গাইল শাড়ির বয়নে যোগ হয়েছে মুসলমানরা। তর্কাতীতভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে। এ শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) কেবল বাংলাদেশেরই পাওয়ার কথা। আরো বলা দরকার যে ভারত দুটো ভুল তথ্য ব্যবহার করেছে। এক. টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গে এবং দুই. শাড়ির মোটিফ জামদানি। জামদানি সম্পূর্ণ আলাদা একটি বয়নপদ্ধতি। এটি স্মৃতি ও শ্রুতনির্ভর। এর নকশা জ্যামিতিক। টাঙ্গাইল শাড়ির নকশা জ্যামিতিক না। কাজেই দায়িত্বশীলদের এটি নিয়ে ভাবা দরকার। ভারতকে এ তথ্য নিয়ে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি এই দুটি শব্দ প্রত্যাহারের জন্য বলা উচিত। দেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণে সবারই সচেতন হওয়া দরকার।’

আশার কথা হলো, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’কে স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। তাঁত বোর্ডও কাজ করছে টাঙ্গাইলের তৈরি শাড়ি, গামছা, লুঙ্গি ও চাদর তৈরি বাজারজাত ব্যবস্থা উন্নত করতে।

এ দেশের মানুষ তার পরিবেশ ও জীবনযাত্রার সীমারেখায় জাতীয় সংস্কৃতি নির্মাণ করে চলেছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এসব উপাদান আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে। আমাদের বয়ন শিল্পের ঐতিহ্য এ দেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। এ মর্যাদা ধরে রাখতে আমাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য। আমাদের অবহেলায় যেন কোনো ঐতিহ্য বেহাত না হয়। আবার ভদ্রবিত্তের পাশাপাশি তাঁতির পরনের মলিন পোশাকও যেন পরিবর্তন হয়। জাতীয় মর্যাদা ও গৌরবের এ বস্তু নিয়ে যেন বুক ফুলিয়ে বলা যায়, ‘নদী চর খাল বিল গজারীর বন/টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন।’

শিশির কুমার নাথ: লেখক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক