সিল্করুট

নিমকনামার নোকতা

গঙ্গা-যমুনা-মেঘনা বদ্বীপে লবণ উৎপাদন প্রসঙ্গে

স্বাধীন সেন

অধ্যাপক কুদরাসদের প্রবন্ধে উপস্থাপিত গোলাকার চুল্লির ধ্বংসাবশেষ

লবণ, নুন, নিমক—এখন আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, লবণের ইতিহাস গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বব্দীপ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জবানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তবে লবণের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যাপনের ঐতিহাসিক লিপ্ততা নিয়ে সমাজবিদ্যার বিভিন্ন শাস্ত্রের গবেষকদের মনোযোগের ঘাটতি লক্ষণীয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের লিখিত সূত্রে আদিকাল (অন্ততপক্ষে প্রাক-সাধারণ চতুর্থ-তৃতীয় শতাব্দী থেকেই) বিভিন্ন প্রতিবেশে লবণের উৎস, উৎপাদন, আহরণ, ব্যবহার, বিপণন, উৎপাদনের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। পাহাড়, খনি কিংবা মাটি থেকে লবণ উৎপাদন-সংগ্রহ-নিষ্কাষণের উল্লেখ এসব সূত্রে যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ব্যাধি নিরাময়কারী হিসেবে কিংবা দ্রব্যাদি সংরক্ষণ কারণ হিসেবে অথবা ধর্মীয় বিভিন্ন আচারে ব্যবহৃত উপাদান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের লবণের ব্যবহারবিধির প্রসঙ্গও। গরু বা মহিষের মতো গৃহপালিত প্রাণির খাদ্য, লবণমুক্ত জমির লবণাক্ততা বাড়ানোর উপাদান, বিভিন্ন দ্রব্য পরিশোধনে বা শুদ্ধীকরণে নুনের প্রয়োগ ও ব্যবহার দৈনন্দিন যাপনের অংশই বলা যায়। ‘নুন খাই যার, গুণ গাই তার’-এর মতো বচনে, অথবা নিমকহারাম বা নিমকহালালের মতো শব্দের ব্যঞ্জনায় বদ্বীপের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, আনুগত্য, ইমানদারি ও দোস্তির দ্যোতক হয়ে উঠেছে লবণ। নুনের বা লবণের মতো ভালোবাসার কাহিনীতে পিতা ও কন্যার মধ্যকার সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসার প্রকাশও ঘটে নুনের বা লবণের উপমায়। লোকায়ত জীবনে বা বনেদি ও প্রাতিষ্ঠানিক দরবারি রীতিতে বিভিন্ন উদ্ভাসে লবণের বা নিমকের উপস্থিতি এ অঞ্চলে। খুঁজলে তুলনীয় কাহিনী বা কথন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও পাওয়া যাবে হয়তো।

দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন বিভিন্ন বাণিজ্য কেন্দ্রের বা বন্দরের সংলগ্ন বা একই প্রতিবেশে সমুদ্রের নোনা পানি বা উপকূলবর্তী নোনা মাটি থেকে স্থানীয় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণ উৎপাদনের ঐতিহ্য বা চর্চা উল্লেখযোগ্য। সময়ের পরিক্রমায় উপকূলীয় প্রতিবেশগত বদলের সঙ্গে সঙ্গে লবণ চাষ বা লবণ উৎপাদনের পদ্ধতি ও প্রযুক্তি পাল্টেছে। পাশাপাশি স্থানিক বৈচিত্র্যের ওপরে নির্ভর করেও লবণের প্রকার, ব্যবহারবিধি, চাহিদা ও উৎপাদন সম্পর্ক পাল্টেছে। লবণ উৎপাদনের ওপর কর্তৃত্ব শাসক বা সামন্তদের ছিল। অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক পণ্য হওয়ায় লবণ উৎপাদনের (খনি, বিশেষ পার্বত্য শিলাস্তর, লবণের জলজ ডিপোজিট ইত্যাদি) রাষ্ট্রীয় বা শাসকের কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা জারি ছিল। লবণের ব্যবসার ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও কর থাকত। ইজারা নেয়া ও দেয়ার আইনকানুন ছিল। অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন উপ-অঞ্চলে (যেমন বরেন্দ্র, বঙ্গ, সমতটের) জমি দান করার সময় নোনা জমি বা লবণযুক্ত ভূমির ওপরের হক গ্রহীতার ওপরে বর্তাত। 

২.

স্থানীয় বিভিন্ন গবেষকের লেখালেখিতে তারও আগে থেকে অবিভক্ত বাংলা ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে এবং সুন্দরবনের মধ্যে থাকা লবণ উৎপাদনের বিভিন্ন নিদর্শন এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা হদিস পাই। যেমন সতীশ চন্দ্র মিত্রের যশোর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে আমরা এমন উল্লেখ পাই। ঔপনিবেশিক আমলে অবিভক্ত বাংলায় উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ উৎপাদন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।

গত দুই দশক বা তারও বেশি সময় ধরেই ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরসম চীন সাগরসহ সামুদ্রিক যোগাযোগ, বাণিজ্য এবং বিভিন্ন চিন্তা-প্রযুক্তি-ধর্মীয় ঐতিহ্যের বিনিময় নিয়ে গবেষণার প্রতি বিভিন্ন শাস্ত্রের গবেষকদের ঝোঁক অনেক বেড়েছে। এসব গবেষণা প্রতিষ্ঠিত স্থল/জমিকেন্দ্রিক ইতিহাস ও সামাজিক বিদ্যার বিভিন্ন অনুমান ও প্রবণতাকে প্রশ্ন করেছে। অনেক নতুন ধারণা ও বিনিময়ের বিভিন্ন মাত্রিক ধরন আর মানবীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য সম্পর্কে তথ্য আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও অনেক গবেষণায় কিছু নির্বাচিত পণ্য এবং ভাবনাচিন্তার বিনিময় ও বাণিজ্য গুরুত্ব পেয়েছে, কিছু গবেষণায় যোগাযোগ ও বিনিময়ের বহুমাত্রিকতাও উল্লেখিত হয়েছে। কেবল রেশমবস্ত্র, মূল্যবান ধাতু ও ধাতব বস্তু, চাল, মসলা, মূল্যবান সিরামিকসের মতো পণ্য না। কড়ি, লবণ, সুগন্ধি, গন্ডারের শিং, বিশেষ ওষুধি গুণবিশিষ্ট বস্তু বা গাছপালা কিংবা গাছপালা থেকে পাওয়া পণ্যসহ নানাবিধ দ্রব্য কম ও বেশি দূরত্বের বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পশ্চিম ও পূর্ব দিকে বিভিন্ন অঞ্চলে বঙ্গীয় বদ্বীপ অঞ্চল থেকে বা বঙ্গীয় বদ্বীপের বিভিন্ন বন্দর হয়ে সমুদ্রপথে পাঠানো হতো বা আনা হতো। ষোড়শ শতাব্দীর পতুর্গিজ লিখিত উৎস থেকে জানা যায়, তৎকালীন সন্দ্বীপ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে চাল ও লবণ রফতানি করা হতো। সন্দ্বীপ থেকে প্রতি বছর ২০০ নৌকা ভরা লবণ বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাঠানো হতো। (১) একই সময় ও তারও আগে চট্টগ্রাম ছিল এ অঞ্চলের বৃহত্তম বন্দরগুলোর একটি। 

প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলে অবিভক্ত বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলে এবং সুন্দরবনের মধ্যে থাকা লবণ উৎপাদনের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ, প্রত্নপ্রতিবেশবিদ এবং ইতিহাসবিদদের মধ্যে আগ্রহ কম এখনো। তার একটা বড় কারণ হলো বড় আকারের স্থাপনা, নগরের ধ্বংসাবশেষ এবং জনপ্রিয় পরিসরে গৌরবময় অতীতের বিষয়ে অন্ধ ঝোঁক বজায় রাখার মতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে আমাদের অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ববিদ আর ইতিহাসবিদের মনোযোগ সংগতকারণেই অনেক বেশি। লবণ উৎপাদনের জন্য তৈরি করা চুল্লি ও অন্যান্য কাঠামো এবং সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন (যেমন মৃৎপাত্র) নিয়ে গবেষণা খুব কমই হয়েছে। সম্প্রতি অধ্যাপক হারমান কুদরাস ও অন্যদের লিখিত (২) এবং তারও আগে টিল হানবুথ ও অন্যদের লিখিত দুটো প্রবন্ধে (৩, ৪) লবণ উৎপাদনের চুলা সম্পর্কে আমরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জানার সুযোগ পাই। আলোচ্য প্রবন্ধ দুটো বাংলাদেশের উপকূলীয় জমিনে ও জলের সংসর্গে লবণ উৎপাদন নিয়ে বেশকিছু উপাত্ত আমাদের সামনে হাজির করেছে। 

অধ্যাপক কুদরাস ও অন্যদের লিখিত প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশের বিস্তৃত উপকূলে এবং সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে ২০০৯-১৬ সাল অবধি পরিচালিত বহুশাস্ত্রীয় গবেষণায় লবণের চুল্লির গঠন-আকার-কাঠামো এবং সেসব চুল্লিতে পরিচালিত কাজ নিয়ে উপাত্ত ও বিশেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ক্রমাগত ডেবে যাওয়া এবং অব্যাহতভাবে সেখানে সঞ্চিত পললের নিচে এসব চুল্লির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত হলেও পরবর্তীকালের জলপ্রবাহের দ্বারা পরিচালিত ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে সেগুলো উন্মোচিত হয়েছে। পাশাপাশি এসব চুল্লিতে লবণ উৎপাদনের সময় তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের ছাই, অবশেষ এবং মৃৎপাত্রের টুকরাসংবলিত ছোট ছোট ঢিবিও সংলগ্ন স্থানেই পাওয়া গেছে। গবেষকরা চুল্লিতে পাওয়া চারকোলের নমুনার রেডিওকার্বন সময় নির্ণয় করেছেন এবং চুল্লিতে পোড়া মাটির অবশেষের থার্মোলুমিনিসেন্স ও অপটিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনিসেন্স পদ্ধতিতে সময় নির্ণয় করেছেন। প্রবন্ধে উপস্থাপিত উপাত্ত ও ফলাফল বিশদভাবে এ লেখায় পরিবেশন করার সুযোগ নেই। তবে কয়েকটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করা জরুরি। গবেষণার ফলাফলের বিশ্লেষণে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে চুল্লির আকার ও গঠন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। চার ধরনের চুল্লি ও সেগুলোর সময় মোট ১১টি প্রত্নস্থানে তারা শনাক্ত করেছেন। এক. সাধারণ অষ্টম শতাব্দীর অন্তকাল থেকে নবম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ব্যবহৃত গোলাকার চুল্লি (১৪টি পাওয়া গেছে); দুই. সাধারণ নবম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে একাদশ শতাব্দীর শুরুর সময় অবধি নির্মিত ওভাল বা উপবৃত্তাকার চুল্লি (১১টি পাওয়া গেছে); তিন. সাধারণ ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্রাকার চুল্লি (১১টি); চার. ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্রাকার চুল্লি (৭০টি)।

লোনা পানি ও লোনা মাটি থেকে আগুন জ্বালিয়ে পাতন, বাষ্পীভবন ও ঘনীভবনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই লবণ নিষ্কাশিত হতো। আমরা অনুমান করতে পারি, আরো অনেক চুল্লি ও সংলগ্ন ঢিবি এতদ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুল্লিগুলোর অবস্থান ও বিস্তৃতি পর্যালোচনা করে এবং সময়ের সূত্র ব্যবহার করে এখানকার জমি-পানির সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের ও মিথস্ক্রিয়ার রূপান্তর বোঝাপড়ার ও ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি সম্পর্কিত প্রতিবেশের পরিবর্তনও চিহ্নিত করার সুযোগ রয়েছে ভবিষ্যতে। তবে আলোচ্য গবেষণার সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের বসতি ও যাপনের সংসর্গ নিয়ে তাৎপর্যময় কয়েকটি নোকতা পেশ করতে পারি।


৩.

আমার কাছে অধ্যাপক কুদরাস ও অন্যদের গবেষণা এবং স্থানীয় বিভিন্ন গবেষক ও ইতিহাসবিদের লেখালেখি থেকে লবণ উৎপাদন ও রফতানি নিয়ে যে তথ্যাদি বিশ্লেষিত হয়েছে সেগুলোর তাৎপর্য সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কয়েকটি প্রসঙ্গ-সূত্র-জিজ্ঞাসা নিচে হাজির করার সবিনয় চেষ্টা করলাম স্বল্প পরিসরে :

এক. প্রচলিত মূল্যবান ও বিশেষ কিছু নির্বাচিত ধরনের নিদর্শননির্ভর প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে আমরা বঙ্গীয় বদ্বীপের ইতিহাসের বহুমাত্রিক দিক, প্রবণতা ও অভিমুখ বিশ্লেষণ করতে পারব না। প্রতিবেশগত ইতিহাস ও প্রতিবেশের বদলের সঙ্গে স্থানীয় মানুষজনের মানিয়ে নেয়ার নানা শর্ত ও প্রক্রিয়াও ব্যাখ্যা করতে পারব না। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলসংলগ্ন জল-জমির সতত সংলগ্ন গতিময়তায় মানুষের কর্মকাণ্ডের বহু আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাত্তের গঠন প্রক্রিয়ার সেটা স্বাভাবিক একটি প্রপঞ্চ। দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটিয়ে ও বিস্তৃত করে লবনের চুল্লি, কড়ি কিংবা শামুকচুনের চুল্লি অথবা অন্য যেসব উপাত্তকে আমরা গৌণ বিবেচনা করি বা অবজ্ঞা করি, সেগুলোকে বিবেচনায় নিলে এখানের জমি-জলের সঙ্গে মানুষের যাপনের বহুমাত্রিক ধরন সম্পর্কে আমরা ধারণা করতে পারবে। পাশাপাশি জমি-জল-জঙ্গল নিয়ে আমাদের আধুনিক ও নাগরিক পূর্বানুমানগুলোর সীমাবদ্ধতাগুলোও শনাক্ত করতে পারব। জলবায়ু পরিবর্তন বোঝা ও মোকাবেলা করার জন্য আমাদের এ বোঝাবুঝি ভীষণ কার্যকর হতে পারে। 

দুই. এখনো আমরা আমাদের দৈনন্দিন আলাপে লবণ উৎপাদন করা বলি না। লবণ চাষ বলি। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাংশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন আলামতকে যদি আমরা ঐতিহাসিক ও প্রতিবেশগত পরিপ্রেক্ষিত এবং সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হিসেবে সুন্দরবন, উপকূলীয়, নদীর বিভিন্ন মোহনা, জোয়ার-ভাটাবিশিষ্ট অবিরত বদলাতে থাকা জমি ও পানির পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করি তাহলে লবণ চাষ শব্দবন্ধের ব্যবহারের ব্যঞ্জনা বুঝতে সক্ষম হতে পারি। লবণ কিংবা শামুকচুন অথবা পান-সুপারির অথবা বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের ও প্রজাতির স্থানীয় প্রজাতির ধান ও অন্যান্য শস্যের চাষাবাদ ও উৎপাদন একটি সামগ্রিক ও মিথস্ক্রিয়াময় উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। শস্য উৎপাদনই কেবল চাষাবাদ না। লবণ বা শামুকচুন তৈরি করাকেও স্থানীয় জীবনযাপনের বিধিতে চাষাবাদ হিসেবেই বিবেচনা করার রীতির প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। প্রাক-ঔপনিবেশিক কৃষক যেমন তার শস্য আবাদের পাশাপাশি বছরের ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য উৎপাদন করতেন, তেমনিই বিশেষ পেশাজীবী মানুষজনও এ উৎপাদন ও ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। এ পরিসরে তাই চাষাবাদ ও শিল্পের ভেদাভেদ সুস্পষ্ট দাগ কেটে আলাদা করা যাবে না। 

তিন. ঔপনিবেশিক সময়ের বিভিন্ন নথিতে আমরা যে তথ্যাদি পাই সেখানে লবণের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বণিকদের মলঙ্গি নামে পরিচিত হতে দেখি। লবণের ওপরে বিশেষ শুল্ক বসানো এবং সেই শুল্ক আদায়ের জন্য লবণবাহী নৌকা বা জাহাজের পথের নানা স্থানে লবণ শুল্ক আদায়ের জন্য চৌকি বসানোর কথাও উল্লেখিত হয়েছে। এ চৌকি বসানোর রীতি অন্ততপক্ষে মোগল আমলের অন্তকালীন পর্ব থেকে থাকার লিখিত তথ্য আমরা পাই। লবণ চাষ বা উৎপাদন কেবল স্থানীয় কোনো সুনির্ধারিত সীমানাবিশিষ্ট এলাকার ভোগের বা ব্যবহারের জন্য করা হতো তো কিন্তু না। ভারতের পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী লবণ উৎপাদন ও ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকার লবণ উৎপাদন এখানে বিবেচনায় নিয়ে সামুদ্রিক জলজ পরিসরের ঐতিহাসিক তাৎপর্য আমাদের অনুভব করতে হবে। সমুদ্র বা নদী কিংবা পানির পরিসর জমি অথবা ভূমির মতো কেবল না; ভূমির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংলগ্ন পরিসর ছিল যেখানে মানুষের যাপন ও বিচরণ বহুমাত্রিক ছিল।

চার. লবণ চাষের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষজন যুক্ত ছিল। এ স্থান কোনো সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় পরিসর ছিল না। নিম্ন গাঙ্গেয় বদ্বীপের চাষাবাদের যে রীতি প্রাক-ঔপনিবেশিক কাল এবং এমনকি ঔপনিবেশিক কালেও বিভিন্ন নথিতে উল্লেখিত হয়েছে, সেখানে স্থানিক, ঋতুগত এবং জলপ্রবাহের ও নিমজ্জনের ফারাকের প্রভাব বিরাট ছিল। জোয়ারে জলমগ্ন বা বর্ষাকালে জলমগ্ন জমিতে জলমগ্নতার সঙ্গে অভিযোজনে সক্ষম এবং লবণাক্ততার সঙ্গে অভিযোজনে সক্ষম বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ করতেন কৃষকরা। তারা সাময়িকভাবে এক স্থান বা জমি কিংবা বসতি থেকে অন্যত্র অভিবাসিত হতেন। এখনো লবণ চাষ করে এমন মানুষজনের জীবনযাপনকে পর্যালোচনা করলে কিছু অস্পষ্ট সূত্র পাওয়া যেতে পারে। ধান চাষ সমেত আবাদের বা অনাবাদের এ স্থানিক ও কালিক চক্র নিম্ন গাঙ্গেয় বদ্বীপের প্রতিবেশের সঙ্গে গভীরভাবে অভিযোজিত ছিল। আরেকটু ওপরের দিকেও আমরা বর্ষাকালে সামাজিকভাবে যৌথতার ভিত্তিতে নির্মিত মাটির বাঁধ ভেঙে দিয়ে জমি প্লাবিত ও জলমগ্ন করানোর রীতি (এ বাঁধ অষ্টমাসি বাঁধ হিসেবেও পরিচিত ছিল)। একফসলি জমিতে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষের এবং অন্যান্য শস্য আবাদের সঙ্গে স্থানীয় লবণ চাষ বা শামুকচুন বানানো একটি উৎপাদন চক্রে যুক্ত ছিল। জমিকে পতিত রাখা বা আবাদ না করার রীতিকেও তেমননিভাবে ‍বুঝতে হবে। 

পাঁচ. আমরা যেভাবে বর্তমানের চোখ দিয়ে চাষাবাদ ও উৎপাদন ব্যবস্থা আর বাণিজ্যকে দেখতে চাই, সেই দেখাদেখির বুনিয়াদ কেবল দুর্বলই নয়; বিভ্রান্তিকর ও আধিপত্যবাদীও বটে। মিথস্ক্রিয়ানির্ভর, পরিবর্তনশীল, বহুমাত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে বোঝার জন্য সেই বুনিয়াদ ভেঙে ফেলা দরকার। সেই সময়ের জনসংখ্যার ঘনত্ব, চাষাবাদের ধরন ও স্থানিক-কালিক বৈচিত্র্য বিবেচনায় নিলে এবং খাদ্যাভ্যাসের রীতির বহুত্বকে আমলে নিয়ে লবণ চাষের ইতিহাস, প্রযুক্তি ও জনজীবনের সঙ্গে লবণ চাষের সম্পর্ক ব্যাখ্য করা জরুরি। সুন্দরবন থাকার কারণে বা অবিরাম জল ও জমির বৈশিষ্ট্য বদলের কারণে এ অঞ্চল মানুষের বসবাসের উপযোগী ছিল না—এমন ধারণা পরিত্যাগ করার জন্য এসব গৌণ ও অবজ্ঞা করা উপাত্ত প্রয়োজনীয়। একই সঙ্গে মানুষের বসতি ও জমি-জল ব্যবহারের পরিবর্তনশীলতা ও অল্প দূরত্বের মধ্যে মানুষের ঋতুভিত্তিক বসতির বদলের ইতিহাস আমলে নিতে হবে। বসতি মানেই কৃষি বা আবাদসর্বস্ব কিংবা বসতি মানেই স্থায়ীভাবে মানুষের শিকড় গেড়ে প্রোথিত হওয়া ছিল না।

ছয়. লবণ চাষের পরিমাণ সম্ভবত স্থানীয় ব্যবহারের পাশাপাশি স্থল ও জলপথে বিভিন্ন স্থানে রফতানি করার সঙ্গেও জড়িত ছিল। সেক্ষেত্রে চাষে যুক্ত মানুষজনের সঙ্গে বণিক বা ব্যাপারিদের সম্পর্ক ছিল বলেই অনুমেয়। ছোট বন্দর থেকে বড় বন্দর, স্থলপথে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো ও বেচাকেনার প্রকার নিয়ে বিশদ গবেষণা হওয়া দরকার। ঔপনিবেশিক আমলে এ লবণ আসাম অবধি বিক্রির জন্য পাঠানো হতো বলে নথি থেকে জানা যায়। সাধারণ অষ্টম-নবম শতাব্দীতে চট্টগ্রাম হয়ে তৎকালীন কামরূপ (বর্তমান আসাম-মেঘালয়) থেকে বিভিন্ন পণ্য নদীপথে (ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদী হয়ে মেঘনা হয়ে) সমুদ্রপথে প্রেরণ করার আলামত পাওয়া যায়। এ নদীপথ ও স্থলপথের নেটওয়ার্ক পরস্পর যুক্ত ছিল।

সাত. লবণ চাষের স্থান ও জমি বিভিন্ন বছরে পরিবর্তিত হতো। জোয়ার-ভাটা, জমির জলমগ্নতার ধরন, নোনা পানির প্রবাহের দিক ও প্লাবনের প্রকারভেদ, জলমগ্নতার সময়, উপকূলের ও উপকূলসংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন উচ্চতা বা গভীরতার নিমজ্জনের ধরন ও সময়ের ভিন্নতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে পরিচিত ঋতুর ওপরে ভিত্তি করে। বাণিজ্যপথের ওপরেও এর প্রভাব ছিল। বঙ্গোপসাগর সাইক্লোনপ্রবণ ও বাতাসের প্রবাহ বিক্ষিপ্ত থাকায় অনেক সময়ে বর্তমান ভারতের ওড়িশা-অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলের বিভিন্ন বন্দর আর মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বন্দর হয়ে অনেক সময় বিভিন্ন পণ্য ও দ্রব্যাদি পরিবহন করা হতো। 

আট. বঙ্গীয় বদ্বীপের লবণ চাষ স্থানীয় প্রতিবেশের সঙ্গে মানুষের অভিযোজনের দীর্ঘ ইতিহাসের (এখানে অন্ততপক্ষে সাধারণ অষ্টম শতাব্দীর পর থেকে) সাক্ষ্য বহন করে। তারও আগের বিভিন্ন বসতির প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্য ভারতের পশ্চিম বাংলার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে থেকে এখনো পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ, প্রত্নপ্রতিবেশবিদরা কতটা নিবিড় মনোযোগ দেবেন বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক আলামত শনাক্তকরণের দিকে তার ওপরে এ প্রাপ্তি নির্ভর করছে। লবণ চাষের চুল্লির বা অবকাঠামোগুলো অন্যান্য ধরনের স্থাপত্যর ধ্বংসাবশেষ থেকে তুলনামূলকভাবে অধিক ধ্বংসপ্রবণ ও অস্থায়ী হওয়ায় তারও আগের চুল্লি শনাক্তকরণের জন্য নিবিড় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করা দরকার হতে পারে। লবণ চাষের বিভিন্ন চুল্লির অবস্থান ও বিন্যাস চিহ্নিত করে তার সঙ্গে উপকূলীয় রেখা আর পানি ব্যবস্থার পরিবর্তনকে সম্পর্কিত করে খুঁজলে সম্পর্কিত স্থাপনাবিশিষ্ট বসতি শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।৫

নয়. এর আগে ইসমে আযম ঋজু কর্তৃক আবিষ্কৃত খেজুরদানা-আড়পাঙ্গাসিয়ার ইটের তৈরি স্থাপনার জলমগ্ন ধ্বংসাবশেষ চাষাবাদ সমেত লবণ চাষ ও বিনিময় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।৬ খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একেএম সাইফুর রহমান ও আফরোজা খান মিতার গবেষণাপত্রে প্রকাশিত সুন্দরবন ও সুন্দরবনসংলগ্ন বেশ কয়েকটি স্থাপত্য কাঠামোবিশিষ্ট ঢিবি আর বসতির চিহ্নও লবণ চাষসহ সামগ্রিকভাবে চাষাবাদ ও ব্যবসার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।৭ এ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্বচর্চার প্রতি প্রচলিত অবজ্ঞা ও অনুমান ত্যাগ করে নিবিড় ও প্রণালিবদ্ধ গবেষণা পরিচালিত হলে এখানকার মানুষের বসতির ধরন, বহুত্ব, প্রতিবেশগত পরিপ্রেক্ষিত ও পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে আরো বিশদ পর্যালোচনা করার মতো তথ্য পাওয়া যাবে সেটা নিশ্চিত।৮ 

দশ. সুন্দরবন অঞ্চলের বনাঞ্চল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে লিজ নিয়ে বনাঞ্চলের গাছপালা কেটে আবাদি জমি তৈরি করার বিশাল প্রকল্প শুরু করেছিলেন টিলম্যান হেঙ্কেল ১৭৬৫ সালের পরে। এর আরেকটা নাম দেয়া হয়েছিল পতিতাবাদ। জেমস রেনেলের তৈরি করা মানচিত্রে সুন্দরবনের বিস্তার আর বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের মানচিত্রে চিহ্নিত সুন্দরবনের বিস্তারের মধ্যে তুলনা করলেই দখলের ব্যাপকতা বোঝা যাবে। স্থানীয় জমিদার বা পত্তনদার কিংবা জোতদারদের সঙ্গে সুন্দরবনের ওপরে কোম্পানির ইজারাদারদের অধিকারের সীমানা নিয়ে বিভিন্ন সময়ের বিরোধ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরেও ধারাবাহিকভাবে বজায় ছিল। কোম্পানির অধিকর্তারা বিভিন্নভাবে এবং পরে ঔপনিবেশিক সাম্রাজের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে জরিপ করে এ বিরোধের ফয়সালা করার চেষ্টা করেন। উইলিয়াম ড্যাম্পিয়ার ও আলেকজান্ডার হজেস সুন্দরবনের উত্তরসীমা নির্ধারণ করেন ১৮৩০-এর দশকে। বিভিন্ন লাট বা এলাকায় বিভক্ত করে সুন্দরবনের গাছপালা কেটে পতিতাবাদ নামে যে প্রকল্প চালু হয় সুন্দরবন ধ্বংসের এবং সুন্দরবনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত মানুষের যাপনে হস্তক্ষেপ ও পরিবর্তনের ব্যাপকতা শুরু এ ঔপনিবেশিক আমলেই।

এগারো. ঔপনিবেশিক রূপান্তর এ অঞ্চলের লবণ চাষ ও বাণিজ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলেছিল ব্যাপকভাবে। সুন্দরবন ও উপকূলসংলগ্ন এলাকার লবণের আর্থিক লাভের প্রতি নজর পড়ার পরে এ ব্যবসার ওপরে একচেটিয়া দখল কায়েম করে ঔপনিবেশিক প্রশাসন ও অনুগত ইজারাদাররা। শুল্ক বাড়ানো হয়। বিভিন্ন হস্তক্ষেপের কারণে লবণ উৎপাদনের ওপরে নানামুখী প্রভাবও পড়েছিল। ব্রিটিশ লবণ জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থানীয় লবণ চাষ ও বিনিময়ের নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া শুরু হয়। সেই ইতিহাসও সুন্দরবনের মানুষের বসতি, চাষাবাদ আর জীবনযাপনের ইতিহাস বোঝার জন্য জানা ও আমলে নেয়া জরুরি। কারণ সুন্দরবন ও এ অঞ্চলে মানুষের বসতি, চাষাবাদ ও যাপন সম্পর্কিত আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব, প্রতিবেশবিদ্যা আর ইতিহাসের যেসব প্রাতিষ্ঠানিক ও বুনিয়াদি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ জনপ্রিয়, সেগুলোর বেশির ভাগই সুন্দরবন ও সংলগ্ন গাঙ্গেয় বদ্বীপের ঔপনিবেশিক ও পশ্চিমা জ্ঞান আর বোঝাপড়ানির্ভর। 

তথ্যসূত্র

১. Rila Mukherjee, The s truggle for the Bay : the life and times of Sandwip, an almos t unknown Portuguese port in the Bay of Bengal in the sixteenth and seventeenth centuries. His tória: Revis ta Da Faculdade De Letras Da Universidade Do Porto, 9. (2018). https://ojs.letras.up.pt/index.php/his toria/article/view/3692

২. Hermann R. Kudrass, T.J.J. Hanebuth, A.M. Zander, et al. Architecture and function of salt-producing kilns from the 8th to 18th century in the coas tal Sundarbans mangrove fores t, Central Ganges-Brahmaputra Delta, Bangladesh, Archaeological Research in Asia, 32 (2022), 100412, https://doi.org/10.1016/j.ara.2022.100412; https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S2352226722000630)

৩. Till J.J. Hanebuth, Kudrass, H.R., Zander, A.M. et al., Stepwise, earthquake-driven coas tal subsidence in the Ganges–Brahmaputra Delta (Sundarbans) since the eighth century deduced from submerged in situ kiln and mangrove remnants. Nat Hazards 111, 163–190 (2022). https://doi.org/10.1007/s11069-021-05048-2

৪. Till J.J. Hanebuth, Hermann R. Kudrass, Jörg

Lins tädter, Badrul Islam, Anja M. Zander; Rapid coas tal subsidence in the central Ganges-Brahmaputra Delta (Bangladesh) since the 17th century deduced from submerged salt-producing kilns. Geology 41 (9): 987–990 (2013). doi: https://doi.org/10.1130/G34646.1

৫. ‍Swadhin Sen and A. K. M. Syfur Rahman, webinar: searching for the entangled land-water-livings in the pas ts: archaeological engagement with the Bengal Delta, Webinar (2021), doi 10/13140/RG.2.2.36315.08488. 

৬. ইফতেখার মাহমুদ, সুন্দরবনে প্রাচীন মানববসতি। প্রথম আলো, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। স্বাধীন সেন, সুন্দরবনে প্রাচীন মানববসতি: ইসমে আযমের চমকপ্রদ আবিষ্কার, প্রথম আলো, ১ মার্চ ২০১৮। 

৭. A. K. M. Syfur Rahman, and Afroza Khan Mita, Early medieval and medieval settlements on the littoral and active part of a delta: An archaeological s tudy of the southwes tern part of Bangladesh. In Swadhin Sen, Supriya Varma, and Bhairabi Prasad Sahu eds. The Archaeology of Early Medieval and Medieval South Asia: Contes ting Narratives from the Eas tern Ganga-Brahmaputra Basin, (2023). London: Routledge.

৮. দেখুন, Camelia Dwan, Misreading the Bengal Delta: Climate Change, Development, and Livelihoods in Coas tal​ Bangladesh, University of Washington Press, 2021 

স্বাধীন সেন: অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়