রেফ্রিজারেটর ও এসি

স্বল্প আয় থেকে উচ্চবিত্তের ঘরে আস্থার প্রতীক ‘‌ভিশন’

ছবি : সংগৃহীত

দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের সংযোগ। আবার নগরজীবনে ব্যস্ততাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। তাই বসবাস থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, শিক্ষা কার্যক্রম ও দৈনন্দিন কাজকে সহজ করতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের দিকে ঝুঁকছে সব শ্রেণীর মানুষ। এর মধ্যে ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, ব্লেন্ডার, গ্রাইন্ডার, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো পণ্য রয়েছে। তাছাড়া একসময় এসি, ওয়াশিং মেশিনের মতো বেশকিছু ইলেকট্রনিক পণ্যকে বিলাসপণ্য মনে করা হলেও এখন সময়ের প্রয়োজনে সেগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভোক্তাদের চাহিদা বিবেচনায় বাজারে আসে ভিশন ইলেকট্রনিকস।

যেভাবে শুরু: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা। তবে একসময় দেশে ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে ছিল বিদেশী ব্র্যান্ডের জয়জয়কার। পরবর্তী সময়ে ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে এবং দেশের আমদানিনির্ভরতা কমাতে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসায় যুক্ত হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপ। ২০১৩ সালে নরসিংদীর ডাঙ্গায় আড়াই লাখ বর্গফুট জায়গায় তৈরি করা হয় ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা, যেখানে শুরু হয় রেফ্রিজারেটর উৎপাদন।

কারখানায় বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থ সংস্থান করা হয়। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হয় জার্মানি, কোরিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে। কারখানায় শুরুতে মাত্র ৩০০ শ্রমিক দিয়ে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। সে সময় ইলেকট্রনিক খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব ছিল বেশ। স্থানীয় লোকজনকে শুরুতে প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারখানায় শ্রমিকদের আনা-নেয়ার জন্য রাখা হয়েছে দ্রুত ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাও। তখন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও গ্যাসের সংযোগ ছিল না। তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে খুব দ্রুত কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়তে থাকে। শুরুর দিকে দিনে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০টি রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করতে পারলেও এখন সেটি কয়েক হাজারে দাঁড়িয়েছে। কারখানায় এখন যোগ হয়েছে ইতালিয়ান প্রযুক্তি, হয়েছে অটোমেশন। আর তাতে সব মিলিয়ে বছরে আরএফএল গ্রুপের কারখানায় শুধু রেফ্রিজারেটরের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ লাখ ইউনিট। 

শুধু রেফ্রিজারেটর নয়, আরএফএল গ্রুপের কারখানাটি যেমন বড় হতে থাকে তেমনি যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন পণ্য। এখন ভিশনের ডাঙ্গা কারখানায় তৈরি হচ্ছে এসি, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কফি ভেন্ডিং মেশিনসহ বেশ কয়েকটি পণ্য। বর্তমানে কারখানাটিতে এসির উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ইউনিট। আর এসব পণ্য উৎপাদনে কারখানায় কাজ করছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। এছাড়া ভিশনের অন্যান্য কারখানায় তৈরি হচ্ছে টিভি, ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, রাইসকুকার, ইলেকট্রিক চুলাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য।         

আস্থার প্রতীক: পণ্যের গুণগত মান ও সাশ্রয়ী দামের কারণে রেফ্রিজারেটর ও এসির বাজারে ভোক্তার আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে ভিশন। ইতালিয়ান প্রযুক্তিতে হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে ভিশন রেফ্রিজারেটর ও এসি। উন্নতমানের কম্প্রেসর ও শতভাগ কপার কনডেন্সার ব্যবহার হওয়ায় ভিশন ফ্রিজ ও এসি অত্যন্ত বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। ভিশন কারখানায় রয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরির জন্য এ বিভাগের কর্মীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এ কারণে সর্বোচ্চ গুণগতমানের পণ্য কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এছাড়া ৩০০-এর অধিক দক্ষ টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে ভিশনের রয়েছে নিজস্ব সার্ভিস টিম, যারা কোনো সমস্যা দেখা দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসি ও ফ্রিজের সার্ভিসিং করে থাকে। 

ভিশন রেফ্রিজারেটরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। বর্তমানে ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট, ডিপ ফ্রিজ—এ তিন ধরনের প্রায় ১২০টি মডেলের ভিশন রেফ্রিজারেটর বাজারে রয়েছে। ৫০ লিটার থেকে শুরু করে ৫৬৬ লিটার সক্ষমতার ভিশন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ এখন কিনতে পারছেন ক্রেতারা। ভিশন এম্পোরিয়াম, আরএফএল বেস্ট বাই, ভিশনের ডিলার এবং অথবা ডটকমের মাধ্যমে ক্রেতারা দেশের সর্বত্র ভিশন রেফ্রিজারেটর কিনতে পারছেন। সঙ্গে মিলছে এ কোম্পানির অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যও।  

রফতানিতে ভিশন: নরসিংদীর ডাঙ্গার ভিশন কারখানার পণ্য শুধু দেশে নয়, রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। ভিশন ইলেকট্রনিক পণ্য রফতানি শুরু হয়েছে ২০২০ সাল থেকে। নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, ফিজি ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেমন গিনি, ভানুয়াতু, জিবুতি, বুরকিনা ফাসো, সিয়েরা লিওন, কঙ্গোসহ আরো কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে ভিশনের পণ্য। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন