ওয়ালটনের মূল চালিকাশক্তি সর্বাধুনিক ও সৃজনশীল পণ্য

ছবি : সংগৃহীত

আমদানির বিকল্প ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের মতো সম্ভাবনাময় এক নতুন দেশীয় শিল্প খাতের বিকাশ ঘটেছে বাংলাদেশে। আবার এ খাতের সিংহভাগ আমদানিনির্ভরতা কমে আসায় সাশ্রয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। ফলে প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তি খাতে গড়ে উঠছে দক্ষ জনশক্তি। এদিকে স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে দেশীয় শিল্পের পণ্য শীর্ষে থাকায় ভ্যাট ও কর খাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। বর্তমান সময়ে দেশে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের অন্যতম কোম্পানি ওয়ালটন। 

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের এক বিশাল বাজার। প্রতি বছর ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, রাইসকুকার, ব্লেন্ডারসহ অন্যান্য হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স বিক্রি হয় দেশে। এ বিশাল বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশই হচ্ছে ফ্রিজের। দেশের ফ্রিজের বাজারে সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার এখন ওয়ালটনের। এছাড়া এককভাবে দেশের টিভি ও এসির চাহিদা পূরণের দিক থেকেও শীর্ষে ওয়ালটন। দেশে তৈরি উন্নতমানের প্রযুক্তি পণ্য ক্রেতাদের হাতে সাশ্রয়ী দামে তুলে দেয়ায় শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ওয়ালটন পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ফ্রিজ, টিভি, এসি, কম্প্রেসর, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ব্লেন্ডার, রাইসকুকার, ইলেকট্রিক ফ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের হোম ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য রফতানি করছে ওয়ালটন। 

অল্প সময়ের মধ্যে ওয়ালটন দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে গবেষণা ও উদ্ভাবনী সৃজনশীল পণ্য। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই প্রযুক্তির আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উদ্ভাবনী ডিজাইন ও মডেলের পণ্য উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেজন্য পণ্য গবেষণা ও উদ্ভাবন তথা আরঅ্যান্ডআই খাতে প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ আরঅ্যান্ডআই বিভাগ। রয়েছে পণ্যভিত্তিক পৃথক গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগ। এসব বিভাগে সম্মিলিতভাবে দেশী-বিদেশী প্রায় হাজারখানেক দক্ষ ও উচ্চ প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী নিয়োজিত। প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও মডেলের সব পণ্য উৎপাদন করছেন তারা। নিশ্চিত করছেন পণ্যের সর্বোচ্চ গুণগতমান। ফলে ওয়ালটন মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা অঞ্চলের সর্বত্র স্বীকৃত মান নিয়ন্ত্রণ সনদ অর্জন করেছে। এছাড়া সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেস্টিং ল্যাব ‘এসজিএস’-এর কাছ থেকে অর্জন করেছে সিই, আরওএইচএস, ইএমসি ইত্যাদি সনদ, যেগুলো ইউরোপের বাজারে পণ্য রফতানির জন্য অত্যাবশ্যক। ফলে ইউরোপের ১৪টিরও বেশি দেশে অল্প সময়ের মধ্যে রফতানি বাজার সম্প্রসারণের অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে ওয়ালটন।

পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদনের প্রতি ওয়ালটন সবসময় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া। পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউএনডিপির সমন্বয়ে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন ও চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ওয়ালটন এসিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক সিএফসি ও এইচসিএফসি গ্যাসের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। চলতি মাসে কোম্পানিটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব আর-২৯০ গ্যাসসমৃদ্ধ ইকোজোন সিরিজের নতুন মডেলের এসি বাজারে ছেড়েছে। আর-২৯০ রেফ্রিজারেন্ট বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের কোনো ক্ষতি করবে না। এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়ালের মাত্রাও তুলনামূলক অনেক কম।

ইকোজোন সিরিজের এসি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব আর-২৯০ গ্যাসসমৃদ্ধ এসি উৎপাদনকারী দেশে পরিণত করেছে ওয়ালটন। ফলে পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র উৎপাদনে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কার্বণ নিঃসরণ কমিয়ে ওয়ালটন যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখছে, তেমনি দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের সুষম ব্যবহারও নিশ্চিত করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার আওতায় অপরিহার্য প্রতিপালন, পরিবেশগত প্রতিপালন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিপালন ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম বিবেচনা করে ওয়ালটনকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ দেয়া হয়েছে।

বিশ্ব এখন নলেজ ও টেকনোলজি বেজড চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা ডিজিটাল বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। ফলে সব টেকনোলজি ও উৎপাদন পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করাই ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের জন্য এক বড় বিষয়। তবে ওয়ালটন এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। কেননা ওয়ালটন শুরু থেকেই প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন লাইন, পণ্য গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগ, টেস্টিং ল্যাব ও কিউসি বা মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ—সর্বত্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করছে। ক্রেতাদের হাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের পণ্য তুলে দিতে ওয়ালটন কারখানায় রয়েছে প্রতিটি পণ্যের পৃথক রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। এসব সেন্টারে মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীরা উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা চালাচ্ছেন। আর তাই বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির গ্লোবাল মডেলের পণ্য উৎপাদন ও রফতানির মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম সেরা গ্লোবাল ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের তালিকায় উঠে আসার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন