‘বিশ্বমানের পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন আমাদের মূল লক্ষ্য’

ছবি : বণিক বার্তা

এ দেশের মানুষের সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের পণ্য উপহার দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে ইলেক্ট্রো মার্ট। নানা গবেষণায় ও নতুন নতুন টেকনোলজিতে এসব পণ্য তৈরি হচ্ছে নিজস্ব কারখানায়। ইলেক্ট্রো মার্টের কারখানা নির্মাণ এবং ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠার গল্প ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল আফছার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহি

শুরুর দিকে কী কী বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে?

বড় বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য দেশের সব প্রান্তে আমাদের পণ্যের পরিবেশক ও গ্রাহকদের সঙ্গে আমি নিজে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাদের চাহিদা সম্পর্কে জেনেছি। প্রতিনিয়ত জানতে চাইতাম আমাদের পণ্যে কী কী নতুন বিষয় সংযোজন করা যায়। প্রতিনিয়ত হালনাগাদ থাকা যায়।

ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত কারণে আমাদের দেশে বিদ্যুতের ওঠানামা হয়। বিষয়টি মাথায় রেখেও আমরা কাজ করেছি। অন্যান্য কোম্পানি যে রঙিন টিভি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করত, সে পণ্য আমরা ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় বিক্রির চেষ্টা করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন। এক্ষেত্রে আমরা কম মুনাফা করেও গ্রাহকের সুবিধার কথা চিন্তা করেছি।

কারখানা নির্মাণে দক্ষ শ্রমিকের জোগান ও যন্ত্রপাতি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল? 

শিল্প নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে মোটা অংকের অর্থায়ন প্রয়োজন হয়। সেখানেও অতিক্রম করতে হয় অনেকগুলো ধাপ। আমাদের পণ্যগুলো প্রযুক্তিকেন্দ্রিক। আবার বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রির যাত্রাটাও খুব বেশি সময় হয়নি। সেজন্য আমাদের যন্ত্রপাতি বাছাই ও কেনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।

আমরা প্রথমেই আমাদের পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতের চেষ্টা করেছি। সেজন্য ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেছে বেছে সবচেয়ে হালনাগাদ যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি। পণ্যের গুণাগুণ নিশ্চিত করার জন্য নিজেরাই বাছাই করে এসব যন্ত্র সংগ্রহ করেছি। আমরা কনকা ও গ্রী-এর পণ্য নিয়ে কাজ করি। যৌথভাবে তাদের প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে আধুনিক যন্ত্র দিয়েই পণ্য তৈরির চেষ্টা করছি।

প্রতিষ্ঠাকালে কারখানার আকার ও শ্রমিকের সংখ্যা কেমন ছিল?

আমরা যখন কারখানা শুরু করি তখন কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩০০ জনের মতো। এখন আমাদের দুই হাজারের বেশি কর্মী আছে কারখানায়। তবে সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় সাত হাজারের ওপর কর্মী রয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি আছে। তাই আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার জন্য বিদেশী প্রশিক্ষক আসেন মাঝেমধ্যে। প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে তারা আবার চলে যান। আবার আমাদের এখান থেকেও বিভিন্ন লেভেলের জনবল বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এভাবে আমরা নতুন মানবসম্পদ নিয়ে এসে তাদের দক্ষ করে শিল্পের মানোন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছি।

কর্মীদের আমরা পরিবারের সদস্য মনে করি। তাদের খাবারে ভর্তুকি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য দেয়া হয়। বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি নিয়মিত লভ্যাংশ ও বোনাস শেয়ার করি আমরা।

আপনারা কি এখন কোনো পণ্য রফতানি করছেন?

আমরা এখনো রফতানি করছি না। তবে ২০২৭-২৯ সালের মধ্যে ‘‌মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য রফতানির চেষ্টা করছি। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ফ্রিজ ও এসি রফতানি করা।

বর্তমানে আপনাদের ব্যবসার আকার ও বাজার অংশীদারত্ব কতটুকু?

মানুষ আমাদের পণ্য পছন্দ করছে। এসির বাজার চাহিদার প্রায় সিংহভাগ এখন গ্রী এসি পূরণ করছে। ফ্রিজের বাজার চাহিদার বৃহৎ অংশে আমাদের শেয়ার আছে। সিলিং ফ্যানের বাজারেও একটি বিশেষ অংশ আমাদের আছে। এছাড়া অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্সেও আমরা বাজার চাহিদার বেশকিছু অংশ সরবরাহ করছি। আশা করি শিগগির আমরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানে পৌঁছাব। সব পণ্য মিলিয়ে বাজারের সিংহভাগ শেয়ার আমাদের থাকবে।

আপনাদের ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম।

কনকা ও গ্রী— দুইটাই চাইনিজ ব্রান্ড। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব একটা ব্র্যান্ড আছে, হাইকো। সে ব্র্যান্ড নিয়েও কাজ করছি। আমরা যখন কনকা নিয়ে শুরু করি, তখন আমাদের পণ্য ছিল শুধু টিভি। নতুন কারখানা করার পর সেখানে হাইকোর ফ্রিজ, ফ্যান ও এসি উৎপাদন শুরু করেছি। আমাদের শোরুম ও চ্যানেল পার্টনাররা গ্রী-কনকার পাশাপাশি হাইকোর প্রডাক্টও সেল করছে। তবে নতুন একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা বেশ সময়ের বিষয়। আমরা ২০২৭-২৯ সালের মধ্যে গ্রী ও কনকা এসি ও ফ্রিজ রফতানি শুরু করব। আশা করছি এর মধ্যে আমাদের হাইকো ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী বাজারে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে।

এ খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাড়াতে হলে সরকারকে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?

ইলেকট্রনিকসে বাংলাদেশে একটা নতুন ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে এ খাতও তৈরি পোশাকের মতো রফতানিমুখী পণ্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য কর অব্যাহতি ও ভ্যাট-ট্যাক্সের মতো বিষয়গুলো সহজীকরণ করার জন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা থাকা দরকার। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার কাজগুলো যদি আরো সহজ ও দ্রুত করা যায়, তাহলে উদ্যোক্তারা আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘায়িত হলে এবং অনুমোদন পেতে যদি সময় লাগে,  তাহলে বিনিয়োগকারীরা কেন বিনিয়োগ করতে চাইবেন? অন্যান্য দেশে এ কাজগুলো অনেক সহজেই করা যায়। সব অনুমোদন এক ছাতার নিচেই পাওয়া যায়। এ জায়গায় উন্নতি করতে পারলে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সুদহার নিয়েও পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। সুদের হার আগে এক অংকে ছিল। এখন তা দুই অংকে গিয়ে পৌঁছেছে। এক অংকে থাকলে সব উদ্যোক্তার জন্যই আরো বেশি কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন