শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে

বণিক বার্তা ডেস্ক

শ্রীলংকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে ছবি: রয়টার্স

শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন মার্ক্সবাদী নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। গতকাল দ্বিতীয় ধাপে ভোট গণনার পর তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আজ দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।

এবার শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯ জন। তবে লড়াই হয় মূলত তিন প্রার্থীর মধ্যে। তারা হলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) সাজিথ প্রেমাদাসা ও ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা কুমারা দিশানায়েকে। 

এনপিপি জোটের নেতৃত্বে রয়েছে দিশানায়েকের মার্ক্সবাদী দল ‘জনতা বিমুক্তি পেরেমুনা’ (জেভিপি)। শ্রীলংকার পার্লামেন্টে জেভিপির আসন রয়েছে মাত্র তিনটি। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতির কারণে ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।  

রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দিশানায়েকে নিজেকে পরিবর্তনের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ৪৫ দিনের মধ্যে বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে তিনি দেশে নতুন নির্বাচন দেবেন।

নির্বাচন কমিশন জানায়, প্রথম দফার ভোট গণনা শেষে বামপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দিশানায়েকে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পান সাজিদ প্রেমাদাসা। রনিল বিক্রমাসিংহে পান ১৭ শতাংশ ভোট।

প্রথম দফার ভোট গণনায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ফলে ভোট গণনা গড়ায় দ্বিতীয় ধাপে। তাতে এগিয়ে থাকায় বিজয়ী হন দিশানায়েকে। শ্রীলংকার ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা দ্বিতীয় ধাপে গড়াল। 

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়াও পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে হয়। দ্বিতীয় দফার গণনা করা হয় সেই তালিকা দেখেই। তাতে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। 

গতকাল রাতে নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণার পর এনপিপি জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ সকালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন দিশানায়েকে। শপথ অনুষ্ঠান হবে সচিবালয়ে। 

শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হয় শনিবার। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে টানা ভোট গ্রহণ চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। দেশটিতে ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

বছর দুয়েক আগে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলংকা। বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে। পরে ওই বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণ করেন ৭৫ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহে। রাজাপাকসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার সরকারের মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালনের জন্য বিক্রমাসিংহেকে নির্বাচিত করে দেশটির পার্লামেন্ট। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণসহায়তা নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় অনেকটাই কাটিয়ে তুলেছে শ্রীলংকা। ২০২২ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭০ শতাংশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, সেটি এখন ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে শুরু করে। তবে এক্ষেত্রে দেশটির সরকারের চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং সংস্কারকে কৃতিত্ব দেয়া হয় বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন