আইডিএলসি : দায়িত্বশীল অর্থায়নের অগ্রদূত

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমাগত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুশাসন ও স্থায়িত্বশীলতা গঠনে এবং এর নিদর্শন তৈরিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নেও ক্রমাগতভাবে অবদান রেখে চলেছে। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করছে, যেখানে আর্থিক সাফল্য, সামাজিক অগ্রগতি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ।

টেকসই অর্থায়ন সেসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর একটি মূল অংশ হয়ে উঠছে, যারা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মতো বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখতে চায়। বর্তমানে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন প্রকল্পগুলোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যা সামাজিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। এরই একটি উদাহরণ নেট-জিরো ব্যাংকিং অ্যালায়েন্স, যা তাদের সদস্যদের ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে। ২০২১ সালে আইডিএলসি ফাইন্যান্স বাংলাদেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা এ অ্যালায়েন্সে স্বাক্ষরকারী। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় আইডিএলসি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি-দক্ষ যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের জন্য পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন প্রদান করছে। এটি এসডিজি ৭-কে (সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি) সমর্থন করে এবং কার্বন নির্গমন হ্রাসে অবদান রাখে।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করে দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসএমই ব্যবসা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে ভূমিকা রাখে। এ ব্যবসাকে টেকসই অর্থায়ন প্রদান করে আইডিএলসির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসডিজি ১-এর (দারিদ্র্য বিমোচন) সমর্থনে কাজ করছে।

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের মুখপাত্র মাসুদ করিম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত লোনের ৩৪ দশমিক ৫৩ শতাংশই টেকসই লোন, যার একটি বড় অংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।’ এ অর্থায়ন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং তাদের পারিপার্শ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন সেবা প্রদান করছে, যা প্রান্তিক ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে সহায়তা করছে। ডিজিটাল সঞ্চয় পরিকল্পনা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান অনগ্রসর সম্প্রদায়কে আর্থিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরে নিয়ে আসতে পারছে। উদাহরণস্বরূপ ২০২১ সালে বিকাশ ও আইডিএলসি প্রথমবারের মতো দেশে এমএফএসের মাধ্যমে ডিজিটাল সঞ্চয়সেবা চালু করেছে। এ সেবা দেশের অর্থনৈতিক অসমতা হ্রাসকে (এসডিজি ১০) সমর্থন এবং বেশির ভাগ মানুষকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে, তা হচ্ছে সব লিঙ্গের প্রতি সমতা। নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর্থিক ব্যবস্থার অধিগম্যতার ক্ষেত্রে সমতা সৃষ্টি করতে সহায়তা করছে, যা এসডিজি ৫-কে (লিঙ্গ সমতা) সমর্থন করে। এ উদ্যোগগুলো নারীদের অর্থনীতিতে আরো সক্রিয়ভাবে অবদান রাখতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের মূল প্রেরণা হলো পরিবেশগত দায়বদ্ধতা, যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন প্রকল্পে অর্থায়ন করবে, যা শিল্পদূষণ হ্রাস এবং টেকসই ব্যবসার চর্চাকে উৎসাহিত করে। এ উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কারখানাগুলোর অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টে (ইটিপি) অর্থায়ন, যা পানির দূষণ হ্রাস এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে, যা এসডিজি ৬ (পরিচ্ছন্ন পানি ও স্যানিটেশন) এবং এসডিজি ১৪-এর (সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের প্রবৃদ্ধি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় ইতিবাচক অবদান রাখছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংবিধিবদ্ধ প্রয়োজনীয় সীমার বাইরেও এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে শুধু পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন সম্প্রসারণের জন্য। এ প্রচেষ্টাগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি—একটি অগ্রগামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নকে তাদের মূল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংযুক্ত করেছে। 

আইডিএলসির মুখপাত্র বলেন, ‘২০২৩ সালে আইডিএলসি টেকসই অর্থায়নের অধীনে ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদেনপক্ষে ২০ শতাংশ বার্ষিক বিতরণসীমার চেয়েও বেশি। আইডিএলসি পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের অধীনে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ মেয়াদি ঋণ বিতরণও নিশ্চিত করেছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ৫ শতাংশের চেয়ে বেশি।’

আইডিএলসি দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করে এবং পরিবেশবান্ধব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে (এসএমই) সমর্থন করে সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, যা সামাজিক অগ্রগতি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বে সহায়তা করে। তাদের সেবা ‘পূর্ণতা’ নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য নিবেদিত, যা নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে এবং এসডিজি ৫-এ অবদান রাখছে। 

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের সিইও ও এমডি এম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা আমাদের গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ঠিক তেমনই পরিবেশ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।’

বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন আইডিএলসির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রমাণ করছে যে একটি সুষম, সমৃদ্ধ এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সবার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন