আকিজের ব্র্যান্ডগুলো অভ্যন্তরীণ কোমল পানীয়র চাহিদা মেটাতে সক্ষম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড

আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড খাদ্যপণ্য ব্যবসায় আসার প্রধান কারণ কোয়ালিটিসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা। প্রতিষ্ঠানটি সে পণ্যই উৎপাদন ও বাজারজাত করে, যা মানসম্পন্ন। ২০০৬ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি. যাত্রা শুরু করে। তার আগে ১৯৯৯ সালে খাদ্যপণ্য ব্যবসায় আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং পরিকল্পনামাফিক জমি ক্রয় ও পাশাপাশি মেশিনারিজ ক্রয় এবং স্থাপনের কাজ শুরু করে। পরিশেষে ২০০৬ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়।

কোয়ালিটি সম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের প্রথম শর্ত হলো যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ সঠিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা। আকিজ সবসময়ই কোয়ালিটিকে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বোৎকৃষ্ট উৎস থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি ব্যবস্থা করেছে। ফুড অ্যান্ড বেভারেজে পাশ্চাত্যের দেশগুলো অনেক এগিয়ে রয়েছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের বহুদিনের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সর্বোৎকৃষ্ট কাঁচামাল উৎপাদন করতে পারে। একই সঙ্গে তারা তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে নিরাপদ ও জীবাণুমুক্তভাবে কীভাবে পণ্য উৎপাদন করা যায় সে রকম মেশিনারিজও প্রস্তুত করে। ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত সব মেশিনারিজ স্টেট অব আর্ট টেকনোলজি সংবলিত এবং ইউরোপের স্বনামধন্য দেশ বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে। আকিজ ফ্যাক্টরি গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে।

ফর্মুলা

আল্লাহর রহমতে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এবং সঠিক দিকনির্দেশনায় বর্তমানে আকিজের ব্র্যান্ডগুলো বেশ ভালো পারফর্ম করছে। একটি পণ্য বা ব্র্যান্ড ভালো করার পেছনে অনেক শর্ত জড়িত থাকে। রাতারাতি কোনো ব্র্যান্ড ভালো করতে পারে না। একটি ব্র্যান্ড ভালো পারফর্ম করার পেছনে অবশ্যই তার কোয়ালিটি আর স্বাদ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আকিজ দেশী-বিদেশী ও নামিদামি সব ব্র্যান্ডকে কোয়ালিটি এবং স্বাদে পেছনে ফেলেই আজ এ অবস্থানে এসেছে। একটি পণ্যের ফর্মুলা তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয়। যাদের পণ্যের ফর্মুলা তৈরিতে অভিজ্ঞতা রয়েছে বিশেষ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও আমাদের কালচারের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রিসার্চ করে প্রতিষ্ঠানটি পণ্যের ফর্মুলা ডেভেলপ করে। আকিজের এক একটি পণ্যের ফর্মুলা ডেভেলপ করতে চার-পাঁচ বছরও লেগে যায়। কোম্পানির অনেক বড় একটি স্ট্রেন্থ হলো আমাদের পণ্যের গবেষণা বিভাগ। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট টিম আমাদের কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। সাধারণত বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে সাত-আট বছর পরে কী হতে পারে তার জন্য পণ্য ডেভেলপ করে রাখার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে আকিজের কাছে বহু পণ্যের ফর্মুলা ডেভেলপ করা রয়েছে। দেশের মার্কেট এখনো এ পণ্যগুলোর জন্য প্রস্তুত নয়।

ফ্রুট ড্রিংকস কারখানা

ঢাকার ধামরাইয়ে অবস্থিত আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ফ্যাক্টরিতে ফ্রুট ড্রিংকস যেমন ফ্রুটিকা, আফি ম্যাংগো ড্রিংকস, আকিজ ম্যাংগো ড্রিংকসহ যাবতীয় অন্যান্য কার্বোনেটেড বেভারেজ যেমন মোজো, ক্লেমন, স্পিড, টুইং, লেমু, ওয়াইল্ড ব্রু, হিউসটন, ক্লিয়ার আপ, আফি অরেঞ্জ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য যেমন ফার্ম ফ্রেশ পাস্তুরিত, ইউএইচটি ও পাউডার মিল্ক, ফার্ম ফ্রেশ ঘি, ফার্ম ফ্রেশ বাটার, ফার্ম ফ্রেশ ফ্লেভার্ড মিল্ক, ইয়ামি লাচ্ছি, ড্রিংকিং ওয়াটার ব্র্যান্ড স্পা, রিভেরা, চিপস ব্র্যান্ড চিজ পাফস ও পটেটো আর স্নাকস ব্র্যান্ড আকিজ চানাচুর ও আফি চানাচুর উৎপাদন হয়। অন্যান্য সাধারণ কারখানার মতো করে ফ্যাক্টরিতে ফ্রুট ড্রিংকস উৎপাদন হয় না। ফ্রুট ড্রিংসের মান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত নিজস্ব আমবাগান থেকে আম সংগ্রহ করে নিজস্ব কারখানায় কাঁচামাল প্রস্তুত করা হয়। পরে অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে মজুদকৃত কাঁচামাল বা পাল্প থেকে ঢাকায় ধামরাইতে অবস্থিত আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ফ্যাক্টরিতে অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতেই ফ্রুট ড্রিংক উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে একমাত্র আকিজই পিইটি বোতলে ফ্রুট ড্রিংক উৎপাদন করে। অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে ফ্রুট ড্রিংক উৎপাদন করার মূল কারণ এতে প্রিজারভেটিভ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে প্রকৃত আমের বৈশিষ্ট্য, স্বাদ ও গুণাগণ অক্ষুণ্ন থাকে।

বেভারেজ পণ্যে বোতল ও মেটাল ক্যান

আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড কোম্পানিটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া নিজস্ব ফ্যাক্টরিতেই সম্পন্ন করে। আকিজের পণ্যের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পিইটি বোতল ভার্জিন রেজিন থেকে আকিজই উৎপন্ন করে। তবে পণ্যে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম ক্যান আকিজ বাইরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করে। পরিবেশ দূষণ দূর করতে আকিজ ফ্যাক্টরিতে সর্বাধুনিক ইউরোপিয়ান একটি রিসাইকেল প্লান্ট স্থাপিত করেছে। সারা বাংলাদেশ থেকে পিইটি বোতল সংগ্রহ করে এ রিসাইকেল প্লান্টের মাধ্যমে ফুড গ্রেডের রিসাইকেল পিইটি ম্যাটারিয়াল প্রস্তুত করে পরিবেশ দূষণ রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, যা সর্বমহলে সমাদৃত।

স্ন্যাকস আইটেম ফ্যাক্টরি

কোমল পানীয় বাদে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি, কোম্পানিতে বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস আইটেম ও দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে। মূলত খাদ্য উৎপাদন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে যেকোনো ধরনের খাদ্য প্রস্তুত করা সহজ হয়ে যায়। বেভারেজ সেক্টরে সফলতা অর্জনের পর স্নাকস ইন্ডাস্ট্রিতে ইনভেস্টমেন্ট করে আকিজ এবং তাতেও সফলতা অর্জন করে। পৃথিবীর সর্বাধুনিক চিপস মেশিন আমাদের ফ্যাক্টরিতে স্থাপন করেছে। কর্নবেজ চিপস চিজ পাফস এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিক্রীত চিপস।

রফতানি

অন্যান্য ব্যবসায়িক সেক্টরে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে কিছুটা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। কারণ দেশীয় কোম্পানিগুলো ব্যবসা করে তার মুনাফা পুরোটাই দেশীয় ব্যবসা উন্নয়নে ব্যবহার করে। কিন্তু বিদেশী কোম্পানিগুলো আমাদের দেশ থেকে ব্যবসা করে মুনাফা পুরোটাই তারা নিয়ে যায়। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবসানীতিতে কিছুটা তারতম্য থাকা জরুরি। আকিজের দেশীয় কোম্পানিগুলো অভ্যন্তরীণ কোমল পানীয়র চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে সক্ষম। এতে দেশীয় শিল্পগুলো ব্যবসা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে আমরা ৪০টিরও অধিক দেশে আকিজের পণ্য রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশ বেভারেজ সেক্টরে পৃথিবীতে খুবই সম্ভাবনাময় একটি দেশ। আমাদের দেশে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ব্যবসাকে সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বর্তমানে বেভারেজ সেক্টরের ওপর মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ করে রেগুলেট করা হচ্ছে, যা সম্ভাবনাময় সেক্টরের জন্য সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশ। ড্রিংকিং ওয়াটার, যা একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সেটার ওপরও এসডি আরোপ করা হয়েছে। আমাদের বেভারেজ সেক্টরে বর্তমান ট্যাক্স কাঠামো কোনোভাবেই ব্যবসাবান্ধব নয়। দ্রুত ট্যাক্স কাঠামো সংস্কার করে ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করা না হলে আমাদের বেভারেজ সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এ সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে। এতে পণ্যের খুচরামূল্য অনেক বেড়ে মুনাফার হার সংকুচিত হয়ে যায়, যা দিয়ে সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নিরাপদ বোতলজাত খাবার পানীয়র মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপরেও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে রেগুলেটেড করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু কোমল পানীয় কনজামশন বার্ষিক গড় পাঁচ লিটারের কম, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন কনজামশনের মধ্যে একটি। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোয় মাথাপিছু কনজামশন ১২-৮৯ লিটার পর্যন্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৫৪ লিটারেরও বেশি। সম্ভাবনাময় খাতে দেশীয় বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার জন্য এ অতিরিক্ত ট্যাক্সের বোঝা আরোপ করা হয়েছে, ফলে দিনদিন এ খাতে দেশীয় বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন