ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ আমানতকারী সম্পূর্ণ নিরাপদ: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক থেকে টাকা তুলে না নিতে আমানতকারীদের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংকগুলোর ৯৫ শতাংশ আমানতকারীকে সুরক্ষা দিতে আমানত বীমা স্কিমের আওতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন যদি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এ স্কিম থেকে ব্যাংকটির ৯৫ শতাংশ আমানতকারী সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাবেন। তাই আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমানতকারীদের ধৈর্যের সঙ্গে ব্যাংক খাত সংস্কারের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। গভর্নর বলেন, ‘আমরা আমানত বীমার আওতা ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মাধ্যমে প্রায় ৯৫ শতাংশ আমানতকারীর আমানত সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই শতভাগ আমানতকারীর টাকার গ্যারান্টি দিতে পারে না। কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ছোট আমানতকারীরা সঙ্গে সঙ্গে টাকা ফেরত পাবেন।’

দেশের কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘আমরা আশা করি না, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে। আবার এটিও ঠিক অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। আমরা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করব। এ ব্যাংকগুলোকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে আমরা সাহায্য করব। ইনশা আল্লাহ, এ ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। এটি কেবলই সময়ের ব্যাপার। পরবর্তী সময়ে দরকার হলে দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করব।’

গভর্নর বলেন, ‘আমরা ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি। আপনারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেবেন না। ৯৫ শতাংশ পরিবার, ব্যক্তি কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ১ টাকাও হারানোর আশঙ্কা নেই।’

পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলোর বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা একটি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে বসছি। তাদের ক্যাশ ফ্লো পজিশন পর্যালোচনা করছি। দৈনিক রিপোর্টিং মেকানিজম চালু করেছি। আমানত বাড়ল কি কমল, রেমিট্যান্সের পরিস্থিতি কী, ঋণ আদায়ের কী অবস্থা—সবকিছু মনিটর করা হচ্ছে। আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে এ ব্যাংকগুলো তারল্য ধার করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে গ্যারান্টি দেবে। টাকা না ছাপিয়ে আমরা ব্যাংক খাতের অর্থেই ব্যাংকগুলোর সংকট কাটাতে চাই।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২৫ হাজার কোটি টাকা আছে। কিন্তু এসএমই খাতে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ঋণ এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এসএমই খাতে শত শত কোটি টাকা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমরা সে ঋণ নিতে পারছি না। আমাদের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এসএমই খাতে ঋণের প্রবাহ অনেক বাড়বে। এসএমই খাতের ঋণ যাতে যোগ্যরা পায়, সেটি তদারকি করা হবে। এ খাতের ঋণ যাতে বড়দের কাছে চলে না যায়, সেটিও নিশ্চিত করা হবে।’

ব্যাংক খাত সংস্কার ও শক্তিশালী করতে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, যুক্তরাজ্য সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে টাস্কফোর্সগুলো কাজ শুরু করতে পারবে।’ বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় পরিবারতন্ত্র ভেঙে দেয়া হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনগত প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়েও কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের স্টে অর্ডারসহ আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য আমরা আইন উপদেষ্টা, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করব। আমরা কোনো কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করিনি। কেবল ব্যক্তি হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আমরা কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হাত দিতে চাই না। কর্মসংস্থান নষ্ট কিংবা উৎপাদন ব্যাহত হোক, সেটি আমরা চাই না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন