আলোকপাত

স্বশরীরে নিয়মিত এজিএম না হওয়ায় কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না

আবু আহমেদ

ছবি : বণিক বার্তা

সারা পৃথিবীর বিনিয়োগকারীদের কাছে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) একটি পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো, এই ইভেন্টের মাধ্যমে শেয়ার বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো তাদের বার্ষিক লভ্যাংশ ঘোষণা এবং কোম্পানির অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারের মালিকানাগত অবস্থান পরিষ্কার করে। কিছু ক্ষেত্রে তারা একের অধিক সাধারণ সভা করে থাকে। এই মিটিংগুলোর উদ্দেশ্য শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনার মতবিনিময়। পাশাপাশি কোম্পানি সম্পর্কিত নানা বিষয় শেয়ারহোল্ডারদের জানানো। বিশেষ করে শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার, কোম্পানির তহবিল সম্পর্কিত তথ্য যেগুলো সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডারদের জানার পূর্ণ অধিকার রয়েছে, এজিএমে শেয়ারহোল্ডাররা সরাসরি কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীর কাছে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারে। এছাড়া বছরব্যাপী তাদের প্রতি কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের আচরণের বহিঃপ্রকাশ কেমন থাকে—এই দিনে শেয়ারহোল্ডাররা সে বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারে। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে আলোকপাত করে।

এজিএমে সব শেয়ারহোল্ডার, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের পরিচালক উপস্থিত থাকেন। এসব উচ্চ পদের পরিচালকরা মূলত শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধি। তারা শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানি সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নের উত্তরদাতা। একটি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শেয়ার থাকে—‘এ’ ক্যাটাগরি, ‘বি’ ক্যাটাগরি, নানা রকমের। এমনকি দেশের বাইরে থেকেও শেয়ারের মালিকানা নিতে পারে। আর দেশের বাইরে থেকে মালিকানা নেয়া কোম্পানিগুলো একসঙ্গে ৬০-৭০ শতাংশ মালিকানাও নিতে পারে। বিদেশী কোম্পানিগুলো এভাবে শতকরা ৬০-৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিয়ে থাকে, এগুলোকে বলা হয় হোল্ডিং কোম্পানি। তাদের প্রতিনিধিরাও পরিচালনা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

এই কোম্পানির এজিএমের মূল আয়োজনে থাকে পরিচালনা পর্ষদ। পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হলেন সভাপতি আর ম্যানেজমেন্টের প্রধান হলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। পরিচালনা পর্ষদের সবাই মিলে শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে কে চেয়ারম্যান বা এমডি কিংবা সিইও হবে তা নির্বাচন করেন। শেয়ারহোল্ডারদের সভায় এ বিষয়গুলোর অনুমোদন নিতে হয়। এ সভায় পরিচালকদের অনেক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে। কোনো একজন পরিচালক না থাকলে তার বদলে আরেকজনকে পরিচালক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। যাকে বলা হয় কো-অপ্ট। পরিচালনা পর্ষদের ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে এ নিয়মের প্রচলন রয়েছে এবং এক্ষেত্রেও এজিএমে অনুমোদন নিতে হয়। 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর বেতন কত হবে তা ধার্য করা, তারা কী ধরনের সুবিধা পাবেন—এগুলোও অনুমোদনের বিষয়বস্তু। তবে এজিএমের আসল বিষয় হলো, সারা বছরের কোম্পানির হিসাবনিকাশ, দেনা-পাওনার হিসাব বা ব্যালেন্স শিট সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডারদের অবগত করা। এর ওপরই কোম্পানির সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার তথা মালিকানার সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। 

এক্ষেত্রে কোম্পানির পক্ষে হিসাবগুলোর অডিট (নিরীক্ষা) করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটিও শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনার জায়গা থেকে অডিট করার নিয়ম নেই। ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণভাবে একটি অডিট করা হয়। শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত অডিট করা প্রতিষ্ঠান কোম্পানির আয়, কোম্পানির ইনভেন্টরি, কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ব্যয় সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেন। কোম্পানির বার্ষিক বিবরণী তথা অ্যানুয়াল রিপোর্টে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। বার্ষিক বিবরণীতে চেয়ারম্যানের দেয়া একটা স্টেটমেন্ট থাকে। এই স্টেটমেন্টে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে তারা যা করতে চায় তা তুলে ধরা হয়। এ বিবরণীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওরও স্টেটমেন্ট থাকে। 

অ্যানুয়াল রিপোর্ট তথা বার্ষিক বিবরণী হলো একটি কোম্পানির সব তথ্যের ভাণ্ডার। এ বিবরণীকে বলা যায়, কোম্পানি সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্যের সমৃদ্ধ উৎস। তাই যারা দীর্ঘ সময় ধরে কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ করে থাকেন, তাদের জন্য রিপোর্টটি বহুল প্রত্যাশিত ডকুমেন্ট। আগেকার সময়গুলোয় প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারকে কোম্পানির এ বার্ষিক বিবরণী পৌঁছে দেয়ার রীতি ছিল। এখন এ সংস্কৃতির অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। অনুমান করে নেয়া হয় যে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের গাফিলতির কারণে এমন ঘটেছে। 

বর্তমানে দেখা যায়, কোম্পানির ওয়েবসাইটে বার্ষিক বিবরণী একটি লিংকে দেয়া থাকে। সেখান থেকে যে কেউ ডাউনলোড করে কোম্পানির হালহকিকত জেনে নিতে পারে। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, শতকরা কতজন লোক ওয়েবসাইটে অ্যাকসেস করে কোম্পানির বার্ষিক বিবরণী দেখে নিতে পারে?

সময়ের পরিক্রমায় এ প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আগে কোনো শেয়ারহোল্ডার বার্ষিক বিবরণীটি না পেলে বিষয়টি শেয়ারহোল্ডারদের সভায় উত্থাপন করার সুযোগ ছিল। তখন সেখানে যারা উপস্থিত থাকতেন, সাধারণত তাদের অনেকের কাছে বার্ষিক বিবরণীর কপি পাওয়া যেত। ফলে কোনো শেয়ারহোল্ডার বিবরণীর কপি হাতে না পেলে যাদের কাছে কপি আছে তাদের থেকে নিয়ে পড়তে পারতেন।

এখন এর প্রচলন নেই। করোনাকালীন সবকিছুই ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার কারণে ওই সময় এজিএমও ডিজিটালাইজড করা হয়। সবকিছু ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার ফলে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা হলো ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্ন করা যায় না। আর ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্ন করতে না পারলে একটা কোম্পানি কীভাবে তার ভবিষ্যৎকে দেখছে, এ ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না। 

দেখা যায়, মাত্র গুটিকয়েক কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিভিন্ন দিক সামনে নিয়ে আসছে। অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, নানাভাবে সব ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। জুম পদ্ধতিতে এজিএম ইভেন্ট হওয়ার ফলে সবকিছুই ঘটছে মুহূর্তের মধ্যে। অথচ সারা পৃথিবীতে কোম্পানিগুলোর এজিএম সারা দিনব্যাপী চলে। বড় বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে দুদিন ধরে সভা চলে। কেননা সেখানে পরিচালকদের নিয়োগ দেয়ার বিষয় রয়েছে। এক্ষেত্রে যাদেরই পরিচালক হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা থাকুক না কেন, তাদের খুঁটিনাটি নানা বিষয় আলোচনা করে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়। 

এদিক থেকে বাংলাদেশে পরিচালক নির্বাচন করে পরিচালনা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নামেমাত্র হয়ে থাকে। অনলাইনে ভোটের ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাত তোলা বা ইয়েস বলার মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে কোনো তৃতীয় পক্ষ আদতে আছে কিনা যে এই ভোট দিয়ে পরিচালক নির্বাচনের বৈধতা দিতে পারে, তা বোঝার সুযোগ নেই। এখানে মোট কতজন ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে, এটা গুরত্বসহকারে প্রতিবেদনে তুলে ধরার মতো কেউ থাকে না বললেই চলে। তাই এজিএমের যে গুরুত্ব ছিল, অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানি সম্পর্কিত বিষয়গুলো জানার যে ব্যবস্থা ছিল, সেটি এই ডিজিটাল প্লাটফর্মে এখন খর্ব হয়ে গেছে। 

ডিজিটাল পদ্ধতিতে এজিএম ইভেন্ট করার ক্ষেত্রে হাইব্রিড নামে একটি পদ্ধতি দেখা গেছে। এ পদ্ধতিতে যারা অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছেন, তারা অনলাইনে থেকেছেন এবং যারা সশরীরে উপস্থিত থাকতে আগ্রহী হয়েছেন, তারা সেভাবেই এজিএমে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে কিছুদিন পর এ পদ্ধতি আবার বাতিল হয়ে যায়। পদ্ধতিটি বাতিল করার কারণ হিসেবে জানা যায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনেকেই অংশগ্রহণ করতে আসায় হাইব্রিড পদ্ধতির এজিএম ইভেন্টে খরচ বেশি হয়েছে। ফলে করোনাকালীন সময়ে যেভাবে এজিএম করা হয়েছে, সেই আগের পদ্ধতিকেই এজিএম ইভেন্টের জন্য বহাল করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ওয়েবসাইটে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নোটিস দেয়া হয়। অনেক কোম্পানিকেও অনলাইনের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

মূলত করোনাকালীন সময়ে এজিএম ইভেন্টটি হয়েছে নামে মাত্র। এ0পদ্ধতিতে যারা ক্ষুদ্র শেয়ার মালিকানা ধারণ করেন, যাদের আমরা মাইনোরিটি শেয়ারহোল্ডার বলে থাকি, তাদের অধিকার কোনোভাবেই রক্ষা করা যায় না। তাছাড়া পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে সীমিত সময়ের মধ্যে কেবল হাত তুলে কিছু বলতে চাওয়ার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের অনেক বিষয় জানার সুযোগ থাকছে না। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর বর্তমান দেনাপাওনার হিসাব ও ভবিষ্যৎ কোনদিকে এগোচ্ছে। 

শেয়ার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় যারা বিনিয়োগ করেন, সেইসব প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের রাইট কতটা ভালোভাবে বুঝে নিতে পারেন, এ বিষয়গুলো সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের দেখার বিষয়। ক্যাপিটাল মার্কেটের উদ্দেশ্য এটা নয় যে বড় বড় শেয়ারহোল্ডার বা ম্যানেজমেন্ট যারা আছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা করা, অন্য শেয়ারহোল্ডারদের তাদেরকে প্রশ্ন করতে না দেয়া। আর শেয়ারহোল্ডারদের এজিএমে সশরীরে না থাকার অর্থ হলো শেয়ারহোল্ডারদের স্বচ্ছতা থেকে দূরে রাখা। 

এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায়, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন তার লক্ষ্য নিয়ে ঠিকভাবে কাজ করছে না। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের এজিএমের জন্য এই হাইব্রিড পদ্ধতিকে অনুমোদন দেয়া হয় যা একটা প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্ত। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে যায়। 

এ সিদ্ধান্তের কারণে কিছু শেয়ারহোল্ডার সশরীরে উপস্থিত হয়ে এজিএমে অংশগ্রহণ করেছেন, কিছু শেয়ারহোল্ডার ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন। এরপর করোনাকালীন নিয়মকে করোনা-পরবর্তী জীবনে বাস্তবে রূপায়িত করে কোম্পানির বার্ষিক বিবরণী ওয়েবসাইটে দেয়া হচ্ছে, কেউ কেউ এই রিপোর্ট অ্যাকসেস করতে পারছে, আবার কেউ কেউ পারছে না। এতে একদিকে যেমন বড় বড় শেয়ারহোল্ডার বাদে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার খর্ব হচ্ছে, তেমনি কোম্পানিগুলো জবাবদিহিতা থেকে বেঁচে যাচ্ছে। আর এজিএমে যার যত শেয়ার বেশি, তার অধিকারও বেশি। খুব স্পষ্টভাবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ারহোল্ডারদের কোনো জায়গা নেই বললেই চলে। ফলে তারা ঠকে যাচ্ছেন। 

বর্তমান শেয়ারবাজারে এক ধরনের উৎকণ্ঠাও লক্ষণীয়। নির্দিষ্ট কোম্পানির বার্ষিক বিবরণী প্রকাশ করা হচ্ছে না। বাজারে এসব কোম্পানির দৈন্যদশার জন্য শেয়ারহোল্ডারদের উচিত এদের গঠনতন্ত্রকে খর্ব করে সর্বসম্মুখে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। 

বছরের পর বছর ধরে কোম্পানিগুলোয় একই পরিচালকরা পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলেও তাদের কোনো সচলতা নেই। এক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভা নিয়মিত হলে সেখানে এসব অনিয়মগুলো উত্থাপনের সুযোগ থাকত।

নব্বইয়ের দশকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কৃতি ছিল অন্য রকম। তখনকার বার্ষিক সাধারণ সভা বা অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিংগুলোয় শিক্ষিত লোকদের উপস্থিতি অধিক ছিল। তাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হতো কোম্পানির দেনা-পাওনা ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে। অনেক সাধারণ সভায় ব্যাংকের অনেক পরিচালককে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হতো। তখনকার সময়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা শেয়ারহোল্ডারদের কাছে জবাবদিহিতার জন্য একটা ভয়ে থাকত, স্বচ্ছতা ছিল। এখন আর জবাবদিহিতা নেই। একটা বিষয় হলো, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে দুটি জায়গায় গণতন্ত্রের চর্চা হয়। একটি সরকার গঠনে। অর্থাৎ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার নির্বাচন করা আর অন্যটি হলো কোম্পানিগুলোয় গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালকরা নির্বাচিত হয়ে কোম্পানির পরিচালকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হওয়া। পৃথিবীর অন্য জায়গাগুলোয় এ চর্চা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বহাল থাকলেও বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান যে ব্যবস্থা, এটা বড় পরিসরের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ খর্ব করার সিস্টেম জারি রাখছে।

আবু আহমেদ: অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন