২য় বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনোমি সামিটে বক্তারা

পোশাক শিল্পের বৃত্তাকার অর্থনীতি তৈরিতে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

পোশাক শিল্পে সার্কুলার ইকোনোমি তথা চক্রাকার অর্থনীতি তৈরিতে অংশীজনদের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক হওয়ায় চক্রাকার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া বৃত্তাকার অর্থনীতি তৈরি সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে দ্বিতীয় ‘‌বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনোমি সামিট’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রৈখিক অর্থনীতিকে বৃত্তাকার মডেলে রূপান্তর করে এগিয়ে নিতে এ সামিটের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ। জার্মানভিত্তিক সহায়তা সংস্থা জিআইজেড ও নেদারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় সামিটটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, গত এক দশকে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের নিরাপত্তা উন্নয়নে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা হিসেবেও এ শিল্প শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশে বর্তমানে দুই শতাধিক সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে। আমরা এ প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে চাই। তবে পরিবেশের বিনিময়ে আমরা উন্নতি চাই না। আমাদের শুধুমাত্র একটিই পৃথিবী রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একে রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। সেজন্যই বৃত্তাকার অর্থনীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, নিরাপত্তা এবং সবুজ কারখানা বিনির্মাণে বাংলাদেশ যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে, বৃত্তাকার ফ্যাশনেও বাংলাদেশ সেভাবে পথ প্রদর্শক হবে।

তবে এজন্য সমন্বিত প্রচেষ্টাই মূল চাবিকাঠি। উৎপাদক, ব্র্যান্ড, শ্রমিক সংগঠন, সরকার, উন্নয়ন সহযোগী ও গণমাধ্যমের পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া পোশাক শিল্পের সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্ত্রী মনে করেন।

দেশী-বিদেশী ক্রেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সার্কুলার ফ্যাশনের প্রচারণায় উৎপাদক ও ব্র্যান্ডের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপনাদের অংশীদার। আমি সব ব্র্যান্ডকে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি। অন্যথায় আমরা টিকতে পারব না।

তিনি বলেন, টেকসই ও বৃত্তাকার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ অনেক দূর এসেছে। পোশাক শিল্পের এ যাত্রা সহজ ছিল না। আমাদের শিল্প সর্বোচ্চ মানদণ্ড বজায় রাখে। পোশাক শিল্পোদ্যাক্তারা টেকসই অনুশীলনে খাপ খাইয়ে দুই শতাধিক কারখানার সবুজ সনদ পেয়েছে। আরো পাঁচ শতাধিক কারখানা স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ রিসাইক্লিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বৃত্তাকার অর্থনীতির প্রযুক্তি ভাগাভাগিতে উন্নত দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ খাতে বাংলাদেশ টেকসই এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার।

বৃত্তাকার অর্থনীতিতে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে সরবরাহ চেইন জুড়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজস ওডোস্ট্রা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে পণ্যের উপকরণগুলোর গঠন ও গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন নীতিমালা ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় নিয়ে ভোক্তার চাহিদা পূরণ করা যাবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে বৃত্তাকার অর্থনীতির সম্ভাবনা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি।

বৃত্তাকার অর্থনীতি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়তা করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক চমৎকার ও ইতিবাচক উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে আরো মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি বলেন, বাংলাদেশের আরো উচ্চাভিলাষী সংস্কার নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। অবশ্যই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই বিভিন্ন খাতে অগ্রগামী হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং অন্যান্য অংশীদাররা বৃত্তাকার অর্থনীতি বাস্তবায়নের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যেমন দিকনির্দেশনা দিতে পারে, তেমনি উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ব্যাপারেও ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, টেকসই উৎপাদনে বিনিয়োগ শুধুমাত্র একটি দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তই নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা টেকসই উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে জার্মানি ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নসহ বৈশ্বিক বাজারে আরো শক্তিশালী করবে।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো শিল্প বর্জ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাকে বর্জ্যের হার বের করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। কিন্তু এখন সবাই বাংলাদেশে বর্জ্যের শতকরা হার জানে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অনেক দূর এগিয়েছে এবং আমরা দিন দিন আরো উন্নতি করছি।

পরিবর্তনটা শুরু হয় ব্যক্তির নিজ থেকে। সরকারি-বেসরকারি খাত, অংশীদার ও অংশীজনরা অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করছে। সে লক্ষ্য অর্জনে সবার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। শিল্প বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, অনুগ্রহ করে এ আন্দোলনে যোগ দিন। একদিন আপনারা বাংলাদেশকে টেকসই এবং বৃত্তাকার অর্থনীতিতে শীর্ষে দেখতে পাবেন।

 সামিটে চারটি প্লেনারি সেশন ও তিনটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন