দুধের গুণগত মান নির্ণয় করবে স্মার্ট মিল্ক ল্যাব

হাজিনুর রহমান শাহীন, গাজীপুর

অত্যাধুনিক টেকনোলজিসমৃদ্ধ মিল্ক ল্যাব ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। দুধ ভিটামিন ‘‌ডি’ ও ক্যালসিয়ামের উৎস। এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে আমরা বাজার থেকে যে দুধ কিনে পান করি তা কতটুকু মানসম্মত, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য থাকে না। এ সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবন করা হয়েছে স্মার্ট মিল্ক ল্যাব নামে একটি অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগার। যার মাধ্যমে জানা যাবে দুধের গুণগত মান। পাশাপাশি নির্ণয় করা যাবে প্রায় ১৪ ধরনের ভেজালের উপস্থিতি।

এছাড়া দুধে মোট ২৭টি অ্যান্টিবায়োটিকের রেসিডিও নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে বা ওপরে আছে কিনা তাও জানা যাবে দ্রুততার সঙ্গে। অত্যাধুনিক টেকনোলজিসমৃদ্ধ ল্যাবটি উদ্ভাবন করেছেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ও পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদুর রহমান।

স্মার্ট মিল্ক ল্যাবে রয়েছে অটোমেটেড মিল্ক এনালাইজার, যা দিয়ে গরু ও মহিষের দুধের ফ্যাট, প্রোটিন, ল্যাকটোজ, তাপমাত্রা, সলিডস নট ফ্যাট (এসএনএফ), ঘনত্ব, দ্রাব্য (সলিউবিলিটি), হিমাঙ্ক (ফ্রিজিং পয়েন্ট) নির্ণয় করা যাবে। এছাড়া দুধে পানি যোগ করা হয়েছে কিনা, ফরমালিন, ইউরিয়া, সোডা, লবণ ও চিনির সংমিশ্রণ রয়েছে কিনা তাও জানা যাবে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৪ ধরনের ভেজালের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদুর রহমান জানান, যদি দুধের গুণগত মান সঠিক না থাকে, তাহলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে গাভীর খাদ্য, শারীরিক অবস্থা, দুধ সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ, পরিবেশ ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব এবং অসাধুতার কারণে দুধের মান পরিবর্তন হতে পারে। এ কারণে দুধের গুণাগুণ নির্ণয় করা জরুরি। দেশে উৎপাদিত দুধের সিংহভাগ ভোক্তার কাছে পৌঁছায় অনানুষ্ঠানিক বাজারের মাধ্যমে। ফলে গুণাগুণ সম্পর্কে জানার কোনো অবকাশ থাকে না। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুধের মান যাচাইয়ের সুযোগ নেই। ফলে ভোক্তা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীও স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

ল্যাবটি তৈরির পরিকল্পনা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মোর্শেদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ২০১৯ সাল থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প ৬১টি জেলার ৪৬৫ উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো নিরাপদ প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করা। দুধের মাণ নির্ণয় করার একটি টেকসই মডেল তৈরির জন্য গবেষণা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলাম। এ প্রস্তাবটি প্রকল্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরই স্মার্ট মিল্ক ল্যাবটি তৈরির কাজ শুরু করেছি।’

ল্যাবের মাধ্যমে দুধে আফলাটক্সিন-এম-১-এর উপস্থিতি নির্ণয় করা যাবে। ল্যাবে রয়েছে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কোয়ালিটি পরীক্ষার সুবিধা। এখানে সংযোজন করা হয়েছে বায়োসেফটিক কেবিনেট-১, ইনকিউবেটর এবং রেডিমেট কালচার মিডিয়াম সিস্টেম। ফলে দুধে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের সংখ্যা জানা যাবে অনায়াসে। অত্যাধুনিক সোমাটিক সেল কাউন্টারের মাধ্যমে দুধে বিদ্যমান সোমাটিক সেল সংখ্যা নির্ণয় করে দুধের গুণগত মান ও গাভীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে দুধের চর্বি ছাড়া অন্য কোনো চর্বি মেশানো হয়েছে কিনা, তা নির্ণয় করা যাবে এ ল্যাবের বিউটারো রিফ্রাক্টোমিটারের সাহায্যে।

অধ্যাপক মোর্শেদুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর গবেষণার মাধ্যমে ল্যাবটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটিকে সরকার বৃহৎ আকারে দেশের দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে। এছাড়া ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এটি তৈরি করে এর প্রসার ঘটাতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি পরীক্ষাগার তৈরি করতে অবকাঠামো উন্নয়ন, জায়গা ও জনবলের প্রয়োজন হয়। আবার সেক্ষেত্রে সব শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। স্মার্ট মিল্ক ল্যাব এসব সমস্যা সমাধানে একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন