![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_385026_1.jpg?t=1718575148)
হত্যাকাণ্ডের শিকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের মরদেহ উদ্ধার হয়নি গতকালও। মরদেহের সন্ধান পেতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালতে গতকাল এ মামলার অন্যতম আসামি কসাই জিহাদকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় সেখানকার স্থানীয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই দিনে বাংলাদেশে এ মামলার অন্য তিন আসামি শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজিকে আটদিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত। ভারতীয় পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বাংলাদেশে মামলার তদন্তে আসা ভারতীয় পুলিশের প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃত এ তিনজনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা শেষ করেছেন।
এ তিন আসামিকে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ডিবি। এ সময় ডিবির পক্ষ থেকে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করা হয়। এ-সংক্রান্ত শুনানি শেষে তিন আসামির প্রত্যেককে আটদিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন মহানগর হাকিম দিলরুবা আফরোজ তিথি।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন জানান, এ সময় কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে রিমান্ড শুনানিতে অংশ নেননি। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার দুলাল। শুনানি চলাকালে আদালতকে তিনি বলেন, ‘ঘটনা নৃশংস। এভাবে কাউকে হত্যা করা যায় ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবশ্যই এ মামলায় রিমান্ড পাওয়া উচিত।’
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তিন আসামির মধ্যে শিলাস্তি রহমান এ সময় কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এসব ঘটনার কিছুই তিনি জানেন না। ১০ মিনিটের শুনানি শেষে বিচারক আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আসামিদের ডিবি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতার নিউ টাউনে একটি মামলা করেছে সেখানকার স্থানীয় পুলিশ। ভারতের বনগাঁয়ে আটক হওয়া জিহাদ হাওলাদারকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল স্থানীয় একটি আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। শুনানি শেষে জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন আদালত।
পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি জানিয়েছে, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। এমপি আনোয়ারুল আজীমকে খুনের প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
জিহাদ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি সবকিছু করেছেন অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশে। এ কাজে আরো চার বাংলাদেশী নাগরিক তাকে সহায়তা করেছেন। গ্রেফতারের পর জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পর সেখানে তার দেহের খণ্ডাংশ ফেলা হয়েছে বলে আসামিকে জেরা করে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে রাতের অন্ধকারে অনুসন্ধান চালিয়ে সেখান থেকে কোনো দেহাংশ মেলেনি।
এদিকে বাংলাদেশে গ্রেফতার তিনজনকে ঢাকায় ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ভারতীয় তদন্ত দলের চার প্রতিনিধি। এ সময় তারা শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজিকে হত্যার সময়, স্থান ও মরদেহ আড়াল করা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ডিবি হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজনরা ডিবির কাছে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিল, সেই একই বর্ণনা তারা ভারতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছেও দিয়েছে। আর ভারতে গ্রেফতার এক অভিযুক্তকে নিয়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ বা দেহের অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে দেশের পুলিশ।’
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা ঢাকার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।