বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে নেটওয়ার্কবিহীন ৩১ দ্বীপ

আরফিন শরিয়ত

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর মধ্যে কিছু এলাকা দুর্গম ও দ্বীপ। এসব এলাকায় কেবল সংযোগ সম্ভব নয় বিধায় দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ছিল এতদিন। তবে সম্প্রতি এমন দুর্গম ও প্রত্যন্ত ৩১ দ্বীপ এলাকাকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সংযোগের আওতায় নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। এ সংযোগের মাধ্যমে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, ই-সেবা ও ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

বিএসসিএলের একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দ্বীপ ও চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছানোর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা, স্থলভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছানো সম্ভব নয়। এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয়, এর অর্থ হচ্ছে কেবল সংযোগের মাধ্যমে এসব এলাকায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণও সম্ভব নয়। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসব অঞ্চলে সংযোগ প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন।

বিএসসিএল জানায়, নির্দেশনার পর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় এসব অঞ্চলের স্কুল, কলেজ, ইউনিয়ন পরিষদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, বন অফিস, পুলিশ স্টেশনে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ সেবার মাধ্যমে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, ইন্টারনেট ও ই-সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এসব এলাকায় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে জোরদারের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিএসসিএল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুরের সিলারচর, চরকাসেম, হাইমচর, বাহারচর, বোরোচর, ভোলার মাঝের চর, চরলিউলিন, ঢালচর, চরজহিরুদ্দি, চর মোজাম্মেল, মদনপুর চর, চরপাতিলা, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর নিজাম, দৌলতখান, পটুয়াখালীর চর বোরহান, চর মন্তাজ, চর হালিম, চরগঙ্গা, চন্দ্রদ্বীপ, মাজেরচর, মনপুরা, সোনার চর, চর বিশ্বাস, চর কাজল, বড়বাইশদিয়া, বাহের চর, নোয়াখালীর ভাসানচর, চর কাশিমপুর, কক্সবাজারের টেকনাফ, রাঙামাটির নানিয়ারচর, বরিশালের চর লতা, চর খাজুরিয়া এলাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সংযোগের আওতায় এসেছে।

বিএসসিএলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ৩১টি চরাঞ্চলের ১১২টি প্রতিষ্ঠানে এ সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোলার ৪১টি, পটুয়াখালীতে ৩৭টি, চাঁদপুরে ১৭টি, কক্সবাজারে ৫টি, রাঙ্গামাটিতে পাঁচটি, বরিশালে তিনটি, নোয়াখালীতে দুটি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর পোস্ট অফিসে দেয়া হয়েছে বিএসসিএলের এ সেবা। কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‌চার-পাঁচ বছর আগে আমাদের এ সেবা দেয়া হয়েছে। আমরা ভালোভাবেই সেবা পাচ্ছি। কিন্তু এ সেবা শুধু নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এ এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো না। সেজন্য বাণিজ্যিকভাবে সেবা চালুর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়া হলে সাধারণ মানুষ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে।’

এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। কমিশনের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) থেকে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সুবিধাভোগী এসব প্রতিষ্ঠানকে একটি ওয়াইফাই এবং একটি করে কম্পিউটার দেয়া হয়।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও বিএসসিএলের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক হামেদ হাসান মুহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, ‘‌স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযুক্ত এলাকাগুলোয় ফাইবার সংযোগ নেই। যার কারণে নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানের জন্য কোনো ধরনের অপারেটরও সেখানে নেই। এসব এলাকা সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করায় এখানে মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারও নেই। যার কারণে তারা পুরো নেটওয়ার্ক সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এসব এলাকা দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় দুর্যোগের সময়ে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা নেই। দুর্যোগের সময়ও সংযোগ আগের মতোই বহাল থাকবে। আমরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে টেলিমেডিসিন ও ই-এডুকেশন সেবা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করছি। শিগগিরই এ সেবাও আমরা প্রদান করব।’

প্রকল্প সম্পর্কে চরফ্যাশন উপজেলার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অফিসার এস এম আল মাহমুদ বলেন, ‘এসব চর দুর্গম হওয়ায় ব্রডব্যান্ড কানেকশন দেয়া সম্ভব হয়নি। যার কারণে দূরবর্তী টাওয়ার থেকে সংযোগ প্রদান করা হয়। চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর লিউলিন, চর পাতিলাসহ দুর্গম চরগুলোয় একই পরিস্থিতি। এখানকার সাধারণ মানুষকে দূরবর্তী টাওয়ার থেকে সংযোগ নিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। যা খুবই দুর্বল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। মনপুরায় মাইক্রোওয়েভ (এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে তারবিহীন সংযোগ) সংযোগের মাধ্যমে টাওয়ার পরিচালিত হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলে এসব জায়গায় আর সংযোগ কাজ করে না।৷ পুরো জনগোষ্ঠী নেটওয়ার্ক সংযোগের বাইরে চলে যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন