অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

চারটি রোগ নির্ণয় করে চুয়েট শিক্ষকের আবিষ্কৃত যন্ত্র

নাজমুল হাসান

ছবি: লেখকের সৌজন্যে

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আদিত্য চৌধুরী ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) সংকেতের বিকল্প হিসেবে ফটোপ্লেথিসমোগ্রাম (পিপিজি) সংকেত ব্যবহার করে হৃদরোগ নির্ণয়ের একটি যন্ত্রের প্রটোটাইপ তৈরি করেছেন। যন্ত্রটিও বেশ ছোট হওয়ায় বাসায় রেখে ব্যবহার করা যায়। শুধু হাতের একটি আঙুলে সেন্সর রাখলে যন্ত্রটি বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, সেরিব্রাল ইনফার্কশন, সেরিব্রোভাসকুলার রোগসহ ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারে। করোনা মহামারী চলাকালে যে প্রক্রিয়ায় শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছিল, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় এ যন্ত্রও কাজ করবে। আদিত্য চৌধুরী চুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। চুয়েটে স্নাতকোত্তর করার সময় থেকেই পিপিজি সিগনাল ব্যবহার করে রোগ নির্ণয়ে কাজ শুরু করেন। তার কাজ নিয়ে দুটি প্রবন্ধ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং আরেকটি প্রকাশের কাজ চলছে।

বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করে। এটি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশলের (ইইই) একটি শাখা। বর্তমানে ব্যাপক চাহিদার কারণে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে চালু করেছে। যন্ত্রটি ডিজাইন এবং পরীক্ষা করার জন্য  Field Programmable Gate Array (FPGA) বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ, সেরিব্রাল ইনফার্কশন, সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ এবং ডায়াবেটিস শনাক্ত করার ক্ষেত্রে যন্ত্রটি যথাক্রমে ৯৬.৩৭, ৯৩.৪৮, ৯৬.৪৩ ও ৮৮.৪৬ শতাংশ নির্ভুল তথ্য দেয়।

যন্ত্রটি মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘‌গত বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রটি দিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ডাটা নেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। যেহেতু প্রটোটাইপটি নতুন এবং হাতের আঙুলে একটি সেন্সর বসিয়ে ডাটা নেয়া লাগে। এক্ষেত্রে অনেকে ভেবেছিলেন এতে বায়োমেট্রিক তথ্যগুলোর অপব্যবহার হতে পারে। এজন্য হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তির স্বজনরা আমাদের ডাটা নিতে আগ্রহী ছিলেন না। আমরা পাঁচদিন গিয়ে মাত্র একজন রোগীর ডাটা নিতে পেরেছিলাম। তবে এ বছর চিকিৎসকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। আশা করি, এবার অনেক রোগীর তথ্য নিতে পারব।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‌এ যন্ত্রটি বাজারজাত করতে হলে আমাদের শিল্প-কারখানার সাহায্য লাগবে। বাংলাদেশ সাধারণত এ রকম কাজে শিল্প-কারখানার এগিয়ে আসার ইতিহাস খুবই নগণ্য। এক্ষেত্রে বিদেশী কোনো কোম্পানির সঙ্গে কোলাবরেশনে যাওয়ার ইচ্ছে আছে আমাদের।’ চুয়েটের ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান চৌধুরীর সুপারভিশনে কাজটি করেছিলেন আদিত্য চৌধুরী এবং হংকংয়ের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজটিকে পরীক্ষা করা হয়েছে। চুয়েটে সম্প্রতি আধুনিক এফপিজিএ বোর্ড কেনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যা হাতে এলে তারা জনসাধারণের ব্যবহারযোগ্য একটা যন্ত্র দেশেই তৈরি করতে পারবেন। পাশাপাশি স্মার্ট হাতঘড়ির সঙ্গেও প্রটোটাইপ যন্ত্রটির সংযোগ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে ড. মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, ‘‌বর্তমানে ল্যাপটপে আমাদের তৈরি করা যন্ত্রটিকে সংযুক্ত করে তথ্য বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে। কিন্তু স্মার্ট হাতঘড়ি থেকে এ আউটপুট পেতে চাইলে আমাদের মাইক্রোচিপ ডিজাইন করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের গবেষণা চলমান এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প এগিয়ে এলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহারিক যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন