বগুড়ায় ফতেহ আলী সেতু নির্মাণে ধীরগতি

এইচ আলিম, বগুড়া

পুরনো সেতু ভেঙে ফেলায় সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

বগুড়া শহরের করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত ফতেহ আলী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে প্রায় অর্ধশত বছর আগে। গত বছর সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক বছরে নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। ৭৫ দশমিক ৩৩ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। নির্মাণে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ধীরগতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীর তলদেশে পাথরের স্তর থাকায় পাইলিং কাজে বিলম্ব হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় পরিবহন খাতে তাদের ব্যয় বেড়েছে। কৃষিপণ্য পরিবহনেও খরচ বাড়ায় দামও বাড়ছে। পুরনো সেতুটি ভেঙে উত্তর পাশে সাঁকো নির্মাণ করা হয়। সাঁকোটিও নড়বড়ে হয়ে গেছে। ছয় কিলোমিটার ঘুরে ফতেহ আলী বাজারে আসতে হয় তাদের। এতে সময় ও ব্যয় দুই-ই বেড়েছে।

বগুড়া সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরই বগুড়া শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি তোলা হয়। সে সময় নদীটি খরস্রোতা ছিল। সে সময় সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নদীর পূর্ব পাড়ে চারটি উপজেলা ও পশ্চিম পাড়ের বাকি আটটি উপজেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা মেরামত করা হয়। এরপর আর সংস্কার না হওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালে বগুড়া সড়ক বিভাগ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর ২০২৩ সালের মে মাসে নতুন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু। এর আগে ২০২১ সালে সেতু নির্মাণে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় নকশা ও অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করে। সেতুটি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বগুড়া শহর থেকে সরকারি গাবতলী উপজেলায় সরাসরি চলাচল করতে আগে সময় লাগত ২০ মিনিট। এখন ছয় কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। আগে খরচ হতো ২০-২৫ টাকা। এখন খরচ হয় ৩৫-৪০ টাকা।

বগুড়া শহরের চেলোপাড়ার অজিত দাস জানান, বাজার থেকে ব্যাগ ভরে অনেকেই সাঁকো পার হতে ভয় পায়। সেক্ষেত্রে তিনি ১০ টাকা করে মজুরি নিয়ে ব্যাগ পার করে দেন।

রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ জানান, আগে বগুড়ার সবজি সরাসরি বাজারে আসত। এখন সাবগ্রাম থেকে মাটিডালি হয়ে ছয়-সাত কিলোমিটার ঘুরে বাজারে আসছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শুধু কৃষিপণ্য নয়, পরিবহন খাতেও গড়ে ৩০ টাকা খরচ বেড়েছে।

সওজ বগুড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান,  সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাজ প্রায় ৩০ শতাংশ এগিয়েছে। নদীর তলদেশে পাথরের স্তর থাকায় পাইলিংয়ে সময় লেগেছে। সাধারণ মানুষের চলাচলে সেতুর দুই পাশে চার ফুট করে ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন