উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় এমপি, মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় কোন্দল নিরসন ও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করা এবং নির্বাচনকে প্রভাব মুক্ত রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিমত ছিল, দলীয় প্রতীক বরাদ্দের কারণে দলের তৃণমূলে গ্রুপিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেয়ার ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দলের হাইকমান্ড। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে, দলের প্রভাবশালী নেতা বিশেষ করে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় আত্মীয়-স্বজন পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করছেন, অথবা মাই ম্যান সৃষ্টির জন্য পক্ষের লোককে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন এ কারণে দলের তৃণমূলে কমান্ড ভেঙে পড়েছে। যেহেতু এমপি, মন্ত্রীদের প্রশাসনের ওপর খবরদারির সুযোগ আছে সে কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, যেসব এমপি, মন্ত্রী পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করছেন- তারা নির্বাচন করতে পারবে না, এমনকি তাদের পছন্দের লোকের পক্ষেও সমর্থন দিতে পারবে না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা পেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব বিভাগীয় এমপি, মন্ত্রীদের ফোন করে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেছেন এবং কাউকে সমর্থন দিতে নিষেধ করেছেন। এবার উপজেলা নির্বাচনে এমপি, মন্ত্রীরা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, মাই ম্যান যেন সৃষ্টি করতে না পারে, যারা নিকট আত্মীয়দের দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ নেতা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি, মন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের বলে দেয়, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ না নেয়ার জন্য। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।’

এ নির্দেশনার কারণ ব্যাখ্যা করে নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ চায় একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সরকার সে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী এমপি, মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছে। ফলে ওই মন্ত্রী এমপিদের প্রভাবের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে খবর এসেছে। যে কারণে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ রাখতেই এ সিদ্ধান্ত।’

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক, টাঙ্গাইলের আব্দুর রাজ্জাকের ভাগ্নেকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার জন্য তাদের ফোন করে বলা হয়েছে।

 আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ এম কামাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেসব এমপি, মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের ফোন করে নিষেধ করতে। আমি অনেককে এরই মধ্যে বলে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ যথাযথভাবে পালনে আমি বদ্ধপরিকর। আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করছি। আজ সকালে আমাকে বলার পর থেকেই কাজ শুরু করেছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন