আমরা অস্ত্রধারীদের মেনে নেব না: র‌্যাব মহাপরিচালক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বান্দরবান

ছবি : বণিক বার্তা

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, দেশে কোনো সশস্ত্র সংগঠন থাকবে এটি আমরা চাই না। যারা এই বিপথে গিয়েছে, আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা নিশ্চয়ই ভালোটা বুঝতে পারবে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাইবে। যদি কেউ কোনো কারণে প্রভাবিত হয়ে বিপথে যেয়ে থাকে, আমি মনে করি তারা তাদের ভুল বুঝবে। আপনারা জানেন র‌্যাবের কাছে সর্বহারা পার্টি আত্মসমর্পণ করেছে, আমরা তাদের বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসন করেছি।

তিনি বলেন, জলদস্যুরাও আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা তাদেরকেও পুনর্বাসন করেছি। আমরা চাই, যারা বিপথে গিয়েছে, এই সশস্ত্র পথ ছেড়ে দিয়ে তারা যদি মনে করে, আমরা যা করেছি তা ঠিক হয়নি। দেশের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমরা অন্যায় করেছি, অপরাধ করেছি। তারা যদি আত্মসমর্পণ করতে চায় আমরা তাদের পুনর্বাসন করব। পুনর্বাসনের জন্য যা যা দরকার আমরা তা করব। কিন্তু স্বাধীন দেশে এ ধরনের অস্ত্রধারীদের আমরা মেনে নেব না।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে বান্দরবান সার্কিট হাউজে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি হেলিকপ্টারে রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, এরা (কেএনএফ) যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তির পথে না আসবে আমাদের যৌথ অভিযান চলমান থাকবে। অভিযান আমরা মাত্র শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে আমাদের অভিযানের মাত্রা বাড়তে থাকবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুমা থেকে কেএনএফের লুট করা সরকারি অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবাই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী যে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হব।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপ পানি ছড়া পাড়া, সেপ্রুপাড়া ও হাতিছড়াপাড়া থেকে সশস্ত্র গ্রুপটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর আটজনকে আটক করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য বলে কেন আখ্যায়িত করা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের ডিজি বলেন, আপনাদেরকে একটা জিনিস বুঝতে হবে। সেটা হলো, একটা বিশাল পুকুর আছে, আমি পুকুরে মাছ চাষ করি। আমি যখন ধরব টার্গেট করব বড় মাছটাই ধরব। বড় মাছ ধরার জন্য আমি জাল ফেলি। বড় মাছ যখন ধরতে যায় তার সঙ্গে জালে ছোট ছোট মাছও চলে আসে। এখন আমি যাদেরকে ধরব টার্গেট করব। তাদেরকে ধরতে গিয়ে যদি অন্য কিছু চলে আসে, নিশ্চয় আমরা সেটাকে প্রসিড করব না। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে নিয়ে আসা মানে তো জেল ফাঁসি দিয়ে দিচ্ছি না।

বম জনগোষ্ঠীর কথা বলা হলেও সবাই তো খারাপ না জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো মুষ্টিমেয় কয়েকজন জড়িত। এখন এ মুষ্টিমেয়দের তথ্য অন্যরা জানে, চেনে। আমি তো হঠাৎ করে ঢাকা থেকে এসে তাদেরকে চিনব না। ওদেরকে তারা চেনে। তারা বলুক যে কারা কারা এ কাজগুলো করে। বান্দরবানবাসী যারা আছেন, বম জনগোষ্ঠীর যারা আছেন তারা বলুন যে এ ছেলেগুলো খারাপ। তাদেরকে নিয়ে যান। আপনারা অপারেশন করবেন না। আমরা অপারেশন করব না। আমরা শান্তি চাই।

প্রধানমন্ত্রী কী করেছেন জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেছেন। শান্তি চুক্তি করেছেন। তিনি চেয়েছেন, পার্বত্য এলাকায় যে জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, তারা এ এলাকায় শান্তিতে থাকবে। এটিই সরকার চায়। সরকার প্রধান চায়। সেভাবে শান্তি চুক্তি হয়েছে। আমরা সেটিই চাই। সেখান থেকে অশান্তি তৈরি করলে আমরা সে অশান্তি অ্যালাউ করতে পারব না। এখন যদি আপনি ব্যাংক লুট করেন, হামলা করেন, সরকারি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যান। তখন আমরা কী করব জানতে চেয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে শান্তি চাই। এ দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। এখন তারা যদি শান্তিতে আসতে চায়, তাহলে তো কোনো অসুবিধা নেই। আমরা স্বাগত জানাব।

চলমান অভিযানে সাধারণ মানুষের জন্য সম্পুর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলে, মন্তব্য করে। এসব সম্পুর্ণ মিথ্যা কথা। সাধারণ মানুষ তার বাড়িঘরে থাকবে। এতে কোনো বাহিনী বিরক্ত করবে না। আমরা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান। যখন কোনো এলাকায় অভিযান চলে তখন সেখানে কিছু বিধিনিষেধ থাকে। আপনারা জানেন, আমরা যখন জঙ্গি, সর্বহারাদের বিরুদ্ধে অভিযান করেছি, তখন দেখেছি। তারা কিন্তু হাটবাজারে আসত না। কিছু লোক ছিল, যারা তাদেরকে সাপোর্ট দিত। এখন একটা পরিবারে কতটুকু চাল লাগবে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগবে। এখন আমার তা দেখার বিষয়। আমি এটা দেখব না? তাহলে সরকার আমাকে বেতন, রেশন দিয়ে কেন পুষছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ সময় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (র‌্যাব অপারেশনস) কর্নেল মো. মাহাবুব আলম, জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজা‌হিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন, বান্দরবান সেক্টর সদর দফতরের কর্নেল সোহেল আহমেদ, ডি‌জিএফআইয়ের কর্নেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ জামশেদসহ বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন