এনভয় লিগ্যাসি ও শেলটেক গ্রুপ চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ

অন্যদের ঈদ আনন্দ দেখেই এখন আমার আনন্দ লাগে

ছবি : বণিক বার্তা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্নাতক সম্পন্ন করে ব্যাংকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আহমেদ। চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন ১৯৮৪ সালে। আজ তিনি এনভয় লিগ্যাসি, শেলটেক গ্রুপ ও গ্রিন টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান। দায়িত্ব পালন করেছেন বিজিএমইএ ও এমসিসিআইয়ের সভাপতি হিসেবেও। ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদান রাখায় পেয়েছেন স্পেনের সম্মানসূচক ‘নাইট অফিসার’ খেতাব। সফল এ শিল্পোদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার ঈদ উদযাপনের গল্প। আলাপচারিতায় ছিলেন বদরুল আলম

শৈশবে আমরা থাকতাম আজিমপুর কলোনিতে। সেখানে অনেক মানুষ থাকত। ঈদের সময় জমজমাট থাকত আরো বেশি। আমার পাঁচ বোন, ভাই নেই। আমাদের শৈশবের ঈদে স্বাভাবিকভাবেই নতুন জামাকাপড়ের প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। আমরা নতুন জামা লুকিয়ে রাখতাম যেন কেউ না দেখে। চেষ্টা করতাম দুই সেট জামা সংগ্রহ করার। এক সেট মা-বাবা দিত, আরেক সেট আসত এদিক-ওদিক থেকে। শৈশবে ঈদ ছিল, যখন আমরা নিজেরা আনন্দ করেছি। আর এখনকার ঈদ হচ্ছে অন্যের আনন্দের মাঝে নিজের আনন্দ খুঁজে নেয়া। এখন মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, যারা গরিব, তারা কী করছে, তারা কি খেতে পারছে, কাপড় কিনতে পারছে? আমার কারখানায় অনেক লোক কাজ করে, তাদের কী অবস্থা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে এখন অন্যদের আনন্দটাই আমার আনন্দ হয়ে যায়। এখন অন্যের আনন্দের দিকে তাকিয়ে থাকি।

কভিড মহামারীর সময় একবার ঈদে আমি হাসপাতালে ছিলাম। জানালা দিয়ে দেখছিলাম, লোকজন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, বাচ্চারা মাথায় টুপি পরে হেঁটে যাচ্ছে, ভালোই লাগত দেখে। কী সুন্দর ঈদ করছে তারা! কভিড হওয়া সত্ত্বেও তারা ঈদের আনন্দ ভোলেনি। এখন অন্যের আনন্দই নিজের আনন্দ। অতীত ও বর্তমান ঈদের পার্থক্য এটাই—আগে নিজেই আনন্দ করতাম, এখন অন্যের আনন্দ দেখে আনন্দ পাই।

ঈদের সময় বন্ধ থাকায় কারখানায় যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের সুযোগটা হয়নি। তবে ঈদের পরে আমরা অনুষ্ঠান করি। ঈদের পর শীতকাল থাকলে পিকনিক হয়। যেমন কয়েক দিন আগে আমরা কারখানায় পিঠা উৎসব করেছি। কিন্তু পাশের কারখানায় ধর্মঘট চলছিল বেতন বাড়ানোর দাবিতে। আমরা তো জানুয়ারির ১ তারিখেই ইনক্রিমেন্ট দিয়ে দিয়েছিলাম। ওরা হয়তো কোনো কারণে দিতে পারেনি। সে যা-ই হোক, ধর্মঘট ইস্যুতে যখন পাশের কারখানার সামনে পুলিশ আসে, তখন ওই কারখানার শ্রমিকরা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলছিলেন, ‘দেখেন পাশের কারখানায় কত সুন্দর উৎসব চলছে আর আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি বেতন বৃদ্ধির জন্য।’ 

আমাদের অনেক অনুষ্ঠান হয়। ১৬ ডিসেম্বরে একটা বড় অনুষ্ঠান হয়, শীতকালে হয় পিঠা উৎসব, বর্ষাকালে চটপটি-ফুসকার উৎসব। এসব উৎসবে আমি শ্রমিকদের সঙ্গেই থাকি। ঈদের দিন দেখতে না পেলেও অন্যান্য উৎসব যখনই হয়, তখন শ্রমিকদের আনন্দটা থাকে দেখার মতো।

আমাদের কারখানায় প্রত্যেকে কিন্তু ঈদ উপহার পায়। উপহার হিসেবে সেমাই, পোলাও চাল, গরমমসলা, চিনি, দুধ, তেল, বিস্কুট দিচ্ছি প্রত্যেককে। প্রায় ২ হাজার ৮০০ শ্রমিকের প্রত্যেকে পাচ্ছে। এভাবে কারখানার প্রত্যেক স্তরের শতভাগ কর্মী ভিন্ন ভিন্ন গিফট হ্যাম্পার পাচ্ছে। কারখানায় গেলে শ্রমিকদের মুখে এসব উদ্যোগের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তারা বলে, ‘স্যার আমরা এটা পেয়েছি, ওটা পেয়েছি, আমরা খুব খুশি।’ এসব প্রতিক্রিয়া আমার খুব ভালো লাগে। এনভয় লিগ্যাসি, শেলটেক গ্রুপ ও গ্রিন টেক্সটাইল—সব মিলিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান ১৫ হাজারেরও বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন