ফেনীতে পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছে না অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা

নুর উল্লাহ কায়সার I ফেনী

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চাহিদা অনুযায়ী ফেনীতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অপর্যাপ্ত। একটি মাত্র প্রতিবন্ধী সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে এখানে। সেটাও চলছে ক্লিনিক্যাল থেরাপিস্ট ছাড়া। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে শিশু বিকাশ ইউনিট। সেখানেও শূন্য রয়েছে মেডিকেল অফিসারের পদ। এছাড়া জেলার একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলে রয়েছে নানামুখী সংকট। এসব শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বছরের পর বছর সেবা নিয়েও সুফল পাচ্ছে না শিশুরা। সেবার অপর্যাপ্ততার কারণে অনেক সময় হাল ছেড়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র ফেনী কার্যালয়ে ১৩টি পদ রয়েছে। তবে সেখানে কর্মরত রয়েছেন আটজন। চিকিৎসায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল পিজি থেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট ও ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট নেই কেন্দ্রটিতে। তার পরও সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে আসছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা আবুল হোসাইন মোহাম্মদ উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের পর থেকে অন্তত ৯৮ হাজার ব্যক্তিকে ঘূর্ণায়মান সেবা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ হাজার নিবন্ধিত ব্যক্তি পর্যায়ক্রমে নিয়মিত সেবা নিচ্ছে। জনবল সংকট ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান আরো ভালো করা যেত।’

একই অবস্থা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিকাশ ইউনিটের। দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল অফিসার নেই। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সেখানে নিয়ে গেলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাসপাতালের পুরনো ভবনে বেশ কয়েক বছর ধরে শিশু বিকাশ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ইউনিটে পাঁচজন জনবলের মধ্যে তিনজন কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে একজন থেরাপিস্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন সহকারী দিয়ে ইউনিটটি পরিচালনা করা হচ্ছে। মেডিকেল অফিসার অন্যত্র বদলি হওয়ায় সেবার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।’

ফেনী শহরের মিজান রোডে রয়েছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। সেখানেও নানামুখী সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে দাবি প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাকারিয়া ফারুকের। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ২০১০ সালে এটি এমপিও লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুলটি বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে পার করছে। এখানে বয়সভিত্তিক পাঁচটি শ্রেণীতে ১০২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থী অনুপাতে ১০ জন শিক্ষক প্রয়োজন, কিন্তু পাঁচজন দিয়ে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’

তবে তুলনামূলক আশার খবর দিয়েছেন ফেনী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদে প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্তদের জন্য সেবা কার্যক্রম বহুগুণে বেড়েছে। ফেনী জেলায় ১২ হাজার ১৩৯ জনকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে এনডিডি প্রতিবন্ধী রয়েছে ৩ হাজার ৯০৮ জন। ফেনীতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১০৮ জন অটিজম শনাক্ত হয়েছে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ভাতা দেয়া হচ্ছে। তবে জেলায় প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ও পরামর্শ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় দানশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে ভালো মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন