প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তারা

করহার না বাড়িয়ে আদায়ে নজর দেয়ার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে র‍্যাপিড আয়োজিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীসহ অতিথিরা ছবি: র‍্যাপিড

দেশের অর্থনীতিকে ফলপ্রসূ করতে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে করহার না বাড়িয়ে কর আয়ের দিকে নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড) আয়োজিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

আলোচনা সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘কিছু জায়গায় হয়তো আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এর সঙ্গে আমাদের অর্জনগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, আমাদের মানুষের চাহিদার ধরন বেড়েছে। একসময় মানুষ ভাত-কাপড়ের দাবি করত, এখন আর মানুষ ভাত-কাপড়ের দাবি করে না। এখন মানুষ সুন্দর জীবনযাপনের দাবি করে। এগুলো কিন্তু আমাদের অর্জন। এগুলোর জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমরা এর শেষ বিন্দুতে পৌঁছে গেছি, তা বলছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাজেট শুধু কোনো সংখ্যা বা অংক নয়, কিংবা কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাবও নয়। বাজেট প্রণীত হয় কয়েকটি বিষয় নিয়ে। একটি সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষ, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও মানুষের প্রতি সরকারের যে দায়বদ্ধতা, তার ওপর বাজেট নির্ভর করে। প্রতিটা সরকারের পলিটিক্যাল এজেন্ডা থাকে। সেই এজেন্ডাকে অর্থনৈতিকভাবে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজেট দিতে হয়।’

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এবারের বাজেট হবে জনগণের বাজেট। আমাদের হতাশার কিছু নেই। আমরা ১ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে শুরু করেছি। এবার ইনশা আল্লাহ আমরা ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট করব।’

সরকার কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে আগ্রহী দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমানোর একটা প্রক্রিয়া হলো সুদহার বাড়ানো। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাজেটে প্রতিফলিত হবে।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্য মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘জমির খাজনা আদায়ের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে তহশিল আছে। অথচ রাজস্ব আদায় প্রতিষ্ঠান জেলা পর্যায়ে গিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কর দেয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। মানুষকে স্পষ্ট করতে হবে, করের টাকায় কী হয়। করের টাকা ব্যয়ে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে।’

মূল্যস্ফীতির দিকে ইঙ্গিত করে নাসের শাহরিয়ার আরো বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এতকিছু বোঝে না, তারা শুধু মূল্য বোঝে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যা যা করা দরকার, আগামী বাজেটে তার সবকিছুই করতে হবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘বাজেট পাস করা হয়, কিন্তু বাস্তবায়নে খুব একটা লক্ষ্য রাখা হয় না। বাজেট তৈরির সময় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা যাবে। আমাদের দেশে বাজেট প্রক্রিয়াকে গোপন করে রাখা হয়, এটা ঠিক নয়। আগে থেকেই এতে চুলচেরা বিশ্লেষণ থাকতে হবে। যে সংসদের ৮০ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী, বাজেট পাস হওয়ার পর তারা নিজেরাই বলে, এটা ঠিক হয়নি, ওটা ঠিক হয়নি।’

রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ডাকাডাকি করতে গেলে হয়রানির কথা আসে। এক্ষেত্রে সবার প্রতি সমান আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে আবদুল মজিদ বলেন, ‘বড় করদাতাদের ছাড় দিলে ছোট করদাতারা উৎসাহ পাবে না। কর আদায়ের ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যার হাতে যে ক্ষমতা আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলোয় হিসাব খোলার সময় ব্যক্তি করদাতা কিনা, তা দেখতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই একটা সামাজিক আন্দোলন দরকার। 

র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এমএ রাজ্জাক বলেন, ‘বাজেটকে নম্বর বা সংখ্যার বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে। কীভাবে ও কোথায় ব্যয় করলে বাজেট ফলপ্রসূ হবে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাজস্ব আহরণ বাড়িয়ে সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।’

র‍্যাপিডের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ বলেন, ‘প্রাক-বাজেটে অনেক কিছুই আলোচনা করা হয়। কিন্তু বাজেটে সেসব আলোচনার কতটুকু প্রতিফলিত হয়, তা জানানো দরকার।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘কভিড ও বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে যেসব ক্ষতি হয়েছে, সেজন্য আমরা চাইলেও এবারের বাজেটে অনেক কিছু করতে পারব না। তবে বাজেটে করহার বাড়ানো কোনোভাবেই উচিত হবে না। বিপরীতে কার্যকর কর পরিমাণ বাড়াতে হবে।’ 


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন