সমুদ্রের অংশ হয়ে যেতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা: আইনুন নিশাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলা। এসব জেলার অংশবিশেষ আগামী ১০০ বছরের মধ্যে সমুদ্রের অংশ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত। এই পরিবর্তনটা আগামী ৫০ বছরের মধ্যেও হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। 


শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) নামক একটি সংগঠন ‘উপকূলের জীবন ও জীবিকা: সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে। 

জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) একটি প্রতিবেদনের আলোকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ১০০ বছরের মধ্যে যশোর থেকে গোপালগঞ্জ, গোপালগঞ্জ থেকে চাঁদপুর ও চাঁদপুর থেকে ফেনী—এসব জেলার দক্ষিণাংশ সমুদ্রের অংশ হয়ে যাবে। এই পরিবর্তন ৫০ বছরের মধ্যেও হয়ে যেতে পারে।

 এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব—এই সারির মধ্যাঞ্চল লবণাক্ত হয়ে যাবে। ঢাকা শহর খুব উঁচু। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ২৫ ফুট। ঢাকা শহরের চারপাশ লবণাক্ত হয়ে যাবে। কামরাঙ্গীরচর বা জিঞ্জিরার উচ্চতা পাঁচ থেকে ছয় ফুট। এসব এলাকা পানির তলায় চলে যেতে পারে। লবণাক্ততার সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতকে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সম্মতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে লবণাক্ততা সমস্যার শুরু। উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে লবণাক্ততা বাড়া শুরু হয়েছে। 

ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রকৃতি বদলাচ্ছে। আমাদের এই প্রকৃতিকে বুঝতে হবে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশ আজ চার ঋতুতে পরিণত হয়েছে। আষাঢ়েও এখন বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না। ফলে জীবন-জীবিকায় সংকট বাড়ছে। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদীর দখল করে প্রস্তুত করা স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদী দখল করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবে না। নদী বাঁচাতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। 


 সংলাপে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আসা জলবায়ুর অভিঘাতে ভুক্তভোগীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি, বর্জ্য থেকে পানিদূষণও ইলিশের অভয়াশ্রমের প্রবেশপথে নানা প্রকল্পে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভরা মৌসুমে ইলিশের দেখা না মেলার মূল কারণ। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন সমুদ্রে দীর্ঘ ডুবোচর, রাবনাবাদ, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ায় ইলিশের আনাগোনা কমে গেছে। কক্সবাজার সংলগ্ন মাতারবাড়ি অঞ্চলে উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ ও মৎসজীবীদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে। 

তারা বলেন, উপকূলের লবণ চাষের জন্য উল্ল্যেখযোগ্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়াতে লবণ চাষিদের জমিতে লবণ পানি প্রবেশ করানো বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের বাধ দেওয়ার কারণে লবণ পানি প্রবেশ করিয়ে পানি শুকিয়ে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে এখন পানিও আসে না, আর তাই লবণ চাষও হয় না। যার ফলে লবণ চাষের ওপর নির্ভরশীল চাষিরা পড়েছেন জীবিকার সংকটে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন