![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_375751_1.jpg?t=1722049785)
চাঁদপুর
আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০২৩ সালে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের মে মাসে প্রকল্পটি
শেষ করার কথা। গত ১০ মাসে
৫ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আইয়ুব আলী। যদিও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক প্রকৌশলী ইমরান দাবি করেছেন এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ শতাংশ কাজ
শেষ হয়েছে। তবে দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের বাকি
৯৫ শতাংশ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আশপাশের অনেক দোকান, বাড়িঘর উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। উচ্ছেদ শেষে কাজ শুরু করতে বেশ সময় লেগেছে। টার্মিনাল ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ৩১০টি পাইলিংয়ের মধ্যে ১০ মাসে ৪৫টির কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চাঁদপুর আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ কোটিতে। প্রকল্পে ১ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার এলাকায় চারতলার তিনটি ভবন নির্মাণসহ ঘাটে স্থাপন করা হবে নতুন পন্টুন, গ্যাংওয়ে ও পার্কিং ইয়ার্ড। এছাড়া প্রশস্ত করা হবে লঞ্চঘাটের সামনের রাস্তা। নির্মাণ করা হবে এক্সটারনাল ব্রিজ। এছাড়া থাকবে জেটিসহ পার্কিং ইয়ার্ড, বিশ্রামাগার ও শৌচাগার। ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ শাকিল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চাঁদপুর লঞ্চঘাটটি চলমান হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করতে সময় লেগেছে। তাই কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তাছাড়া পাইলিং করতে গিয়েও আমাদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রায় সময়ই ৪০-৫০ ফুট মাটির নিচে পাথর পাওয়া যাচ্ছে। এতে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তার পরও আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আইয়ুব আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে সামনে কাজের অগ্রগতি হবে। এখানকার স্থাপনা সরাতে আমরা হিমশিম খেয়েছি। ঘাটটি সরিয়ে আমরা কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু জায়গা পাইনি। স্থাপনা উচ্ছেদে আমাদের সময় লেগেছে। তাই কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। তাছাড়া আগামী সাতদিনের মধ্যে বাকি স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চাঁদপুর নৌবন্দর। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে চাঁদপুরসহ লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার যাত্রী যাতায়াত করেন। বর্তমানে চাঁদপুর লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে। এ ঘাটে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও ঈদ উৎসব কেন্দ্র করে তা বেড়ে দাঁড়ায় লক্ষাধিক। বিপুল পরিমাণ যাত্রীর চাপ সামলানোর মতো সক্ষমতা ছিল না লঞ্চঘাটটি। চাঁদপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল লঞ্চঘাটটির আধুনিক নৌবন্দরে রূপান্তর করার। তবে নির্ধারিত সময়ে বন্দরের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হোক। তবে কাজের যে গতি, তাতে মনে হয় না আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে। বর্তমানে লঞ্চে যাতায়াত করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পন্টুনে দাঁড়ানোর জায়গা নেই।’
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক প্রকৌশলী ইমরান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লঞ্চঘাটে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি কাজের মান ঠিক রাখতে প্রতিনিয়িত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সামনের দিকে কাজের গতি আরো বাড়বে, যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়।’
এ প্রসঙ্গে জেলা বন্দর কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া সামনে ঈদ ঘিরে যাত্রীসংখ্যা আরো বাড়বে। যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকার্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কাজের গতি দেখে মনে হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জনবল সংকট রয়েছে।’