লালমনিরহাটে তিস্তায় জেগেছে ৭২ চর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চর ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

তিস্তার সঙ্গে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করায় শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। নদী শাসন না হওয়ায় গতিপথ পরিবর্তন করেছে তিস্তা। এরই মধ্যে লালমনিরহাটে তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্ট ৭২টি চর জেগেছে। এসব চরে স্থানীয় কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা। শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিই তিস্তাবেষ্টিত। লালমনিরহাটের দহগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করে গাইবান্ধায় গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে তিস্তা। নদীটি কোথাও তিন-সাত কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. নুরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে পানিপ্রবাহ গড় ১০০০-১ হাজার ৮০০ কিউসেক রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের মধ্যে মাত্র একটির ছয় ইঞ্চি তুলে পানিপ্রবাহ রাখা হয়েছে। এ কারণে ভাটিতে পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে। চলতি মার্চে একই ধরনের পানিপ্রবাহ থাকবে। বৃষ্টিপাত শুরু হলে ধীরে ধীরে পানিপ্রবাহ যেমন বাড়বে, তেমনি ভারতে সেচ কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। এ সময় ভারতে পানিপ্রবাহ কিছুটা বাড়বে। তখন বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ বাড়বে।’

তিস্তা নদীপারের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘তিস্তায় এখন পানি নেই। আমরা তিস্তার বুকে একের পর একর জমিতে ফসল ফলাচ্ছি।’

প্রায় ২৪০ বছরের পুরনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। ২০১৪ সাল থেকে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। তবে তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার চীনের সেই প্রস্তাবনার আলোকেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে তিস্তাপাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লালমনিরহাট জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জনগণকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন। বিষয়টি সরকারও গুরুত্ব দিয়েছে। এজন্য সংসদের চলতি অধিবেশনে আমি জনগণের পক্ষে বিষয়টি বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছি। এখন সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ। তবে তিনি যখন পদ্মা সেতু তৈরি করে দেখিয়েছেন, ঠিক সেই পথে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবেন।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৭২টি ছোট-বড় চর জেগে উঠেছে। তিস্তা ভরাট হওয়ায় বর্ষাকালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বন্যার কারণে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন