রিসার্চ সোসাইটি

হতে চাইলে গবেষক...

অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান

গবেষণার জন্য বিশেষ কোনো বয়স বা ডিগ্রি জরুরি নয় ছবি: ইউআইইউ

অনেকেই মনে করেন গবেষণার অর্থ হলো নতুন কিছু আবিষ্কার করার প্রচেষ্টা। যেকোনো বিষয়ে যখন তথ্য বা উপাত্ত বর্তমান থাকে না সেই বিষয়গুলোয় সিদ্ধান্তে আসার জন্যই গবেষণার প্রয়োজন হয়। নতুন কিছু আবিষ্কার করতেই হবে, সেটা জরুরি নয়। সুতরাং কোনো এক গবেষক তার গবেষণা প্রবন্ধে যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে আমি যদি কোনো ভিন্ন পন্থা বা ভিন্ন তথ্য উদঘাটন করতে চাই, তা নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব।

অনেক ক্ষেত্রেই মনে হবে যে একটি গবেষণার বিশেষ কোনো ব্যবহারিক বা তাত্ত্বিক প্রয়োগ সুস্পষ্ট নয়, সে গবেষণাটি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাব বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ধরনের উন্নয়ন হয়েছে তা হঠাৎ করে একটি বিশেষ গবেষণার ফল নয়। এ উন্নয়নগুলো হয়েছে ক্রমাগত ধাপে ধাপে। তাই কোনো গবেষণাকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। প্রকৃত অর্থে গবেষণা ছাড়া বিশ্বের উন্নয়ন থমকে যাবে। 

প্রতিটি সুস্থ মানুষের মধ্যে একটি জিজ্ঞাসু গবেষণাপ্রবণ মন রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক গবেষণা করার জন্য কিছু বিশেষ মনমানসিকতার প্রয়োজন হয়। প্রথমত, জিজ্ঞাসু মন ও অজানা বিষয় জানার ব্যাপারে আগ্রহ ও উৎসাহ। দ্বিতীয় যে বিষয়টি দরকার সেটি হলো ধৈর্য। গবেষণায় যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে হলে সময়ের প্রয়োজন, তাই অধৈর্য হওয়ার সুযোগ নেই। তৃতীয়ত দরকার একাগ্রতা। গবেষণার জন্য একাগ্রতার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। গবেষণার কাজে সাফল্যের পথ সবসময় মসৃণ নয়। তাই ব্যর্থতা দেখে একাগ্রতার ব্যত্যয় ঘটলে সাফল্যের পথ আরো বন্ধ হয়ে যায়। চতুর্থত, গবেষণা উপভোগ করতে হবে। আগের যে কয়টি বিষয় বলেছি তার প্রতিটি ধরে রাখা বেশ সহজ হয় যখন আমরা গবেষণা কার্যক্রম উপভোগ করি। গবেষণা কার্যক্রম উপভোগ না করলে গবেষণায় বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

স্নাতকোত্তর পর্যায় গবেষণা শুরু করার মোক্ষম সময়। গবেষণার জন্য বিশেষ কোনো বয়স বা ডিগ্রি জরুরি নয়। তবে গবেষণার জন্য যে মৌলিক জ্ঞান বা স্কিল থাকা প্রয়োজন তার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু শিক্ষার প্রয়োজন হয়। যেকোনো ডিগ্রি পর্যায়েই লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে তা করা উচিত প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করতে পারেন। তাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা দূর করতে সহযোগিতা করতে পারেন এবং সর্বোপরি তাদের গবেষণাকে উৎসাহিত করতে পারেন। ক্যাম্পাসভিত্তিক রিসার্চ ক্লাব গবেষক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন। তবে গবেষক শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা থাকলে গবেষণা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। রিসার্চ ক্লাবের দায়িত্ব হতে পারে গবেষক ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার প্রস্তুতিমূলক ট্রেনিং কোর্স করানো, যেখানে গবেষণার পদ্ধতিগত বিষয়ে আলোচনা করা, কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট গবেষণার বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায় তা শেখানো এবং সর্বোপরি প্রস্তাবিত গবেষণার বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কোন গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বিষয়ে আধুনিক জ্ঞান লাভ করতে পারবেন— এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। একটি বিষয়ে বলে রাখা ভালো, সব ছাত্র-ছাত্রীই যে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় উৎসাহিত হবেন এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে গবেষণা উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষকরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা তাদের কোর্সের মধ্যে যদি ছোট ছোট গবেষণাভিত্তিক প্রজেক্ট বা অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারেন তাহলে গবেষণাকাজে ছাত্র-ছাত্রীরা উৎসাহিত হবেন এবং তাদের মনে গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহ জন্মাবে। 

অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান: ইমেরিটাস অধ্যাপক ও নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন