ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব

তারা সবাই তরুণ গবেষক

শফিকুল ইসলাম

চা শ্রমিকদের জীবনযাপনের ওপর গবেষণা করতে শ্রীমঙ্গলে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ক্লাবের তরুণ গবেষকরা ছবি: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ক্লাব

‘‌আমরা সবসময় একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি যে ইউনিভার্সিটির একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উপলব্ধি কাজ করে। ইস যদি রিসার্চ পেপার পাবলিশ করার সুযোগ পাওয়া যেত! কিংবা গবেষণায় হাতেখড়ির সুযোগ পাওয়া যেত। আমরা সবসময়ই চেয়েছি এমন একটা প্লাটফর্ম গড়তে যেখানে শিক্ষার্থীরা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পরই গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারবে, সেই সঙ্গে গবেষণামনস্ক হয়ে উঠবে। এ চিন্তাধারা থেকেই গঠন করা হয় ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব।’ ক্লাব প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প বলছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লাব্বী আহসান।

২০২২ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব। লক্ষ্য তরুণ গবেষক তৈরি। বর্তমানে তিন শতাধিক সক্রিয় সদস্য কাজ করছেন এ ক্লাবে। তারা সবাই তরুণ গবেষক। নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রিসার্চ পেপার রাইটিং, উইকলি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার আয়োজন, রিসার্চ পেপার পাবলিশিং, কোলাবরেটিভ ইভেন্ট আয়োজন, প্র্যাকটিক্যাল রিসার্চ প্রোগ্রাম, ফিল্ড রিসার্চ, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট ইত্যাদি। ক্লাবের সদস্যরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভিন্ন খাত সম্পর্কিত ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করে থাকেন। শুধু পরিদর্শনেই সীমাবদ্ধ নয়, তরুণ এ গবেষকরা খুঁজে বের করেন অনেক অজানা তথ্য। এসব তথ্য একত্র করে পরবর্তী সময়ে হ্যান্ডনোট তৈরি করেন তারা। আবার সেগুলো বিভিন্ন দিবসে প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।

ক্লাবের সদস্যরা যেহেতু ইউনিভার্সিটি ফ্রেশার হিসেবেই ক্লাবে জয়েন করেন, তাই শুরু থেকে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমেই বিভাগ অনুযায়ী সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। এরপর টিম বিল্ডিং ওয়ার্কশপ ও মেন্টরিং সেশনের আয়োজন করা হয়। সেই সঙ্গে থাকে গ্রুপভিত্তিক গবেষণাপত্র লেখার আয়োজন। ক্লাবের মেন্টররা হাতেকলমে শেখান গবেষণাপত্র লেখার প্রয়োজনীয় সব খুঁটিনাটি বিষয়। প্রতিটি সদস্য গবেষণার মৌলিক বিষয়ে শুরু থেকেই প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। যেমন কীভাবে পেপার হেডিং সিলেক্ট করতে হবে, কীভাবে অ্যাবস্ট্রাক্ট লিখতে হয়, কীভাবে রিসার্চ টপিক ও ইস্যু সিলেক্ট করতে হয়। প্রতি মাসেই কয়েকটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করেন সংগঠকরা। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সদস্যদের।

গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো ক্লাবটি রিসার্চ ডে উদযাপন করে। যেখানে রিসার্চ পেপার প্রেজেন্টেশন, কুইজ কম্পিটিশন, ডিসকাশন সেশন ও থিম পেপার পাবলিশিংয়ের মতো অনেক আয়োজন ছিল তরুণ গবেষকদের জন্য। ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া ওয়ার্কশপ, রিসার্চ ইন্ট্রোডাকশন ওয়ার্কশপসহ আরো অনেক ইভেন্ট আয়োজন করে ক্লাবটি। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোশ্যাল ও হিস্টোরিক্যাল সাইট পরিদর্শন অন্যতম আয়োজন। সম্প্রতি সংগঠন থেকে একটি গবেষণা টিম বান্দরবানের আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর একটি রিসার্চ পরিচালনা করেছে। সেই সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনযাপনের ওপরও একটি গবেষণা চালিয়েছেন এ তরুণ গবেষকরা। 

ক্লাবের বর্তমান সভাপতি আবতাহি নূর বলেন, ‘‌আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। কয়েকটা রিসার্চ পেপার পাবলিশিংয়ের কাজ চলমান। আমাদের পরিকল্পনা হলো ক্লাবের নিজস্ব একটা রিসার্চ ম্যাগাজিন বের করা। আশা করি আমরা পারব, এতে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি উজ্জীবিত হবে।’ 

ক্লাবের মডারেটর ও উপদেষ্টা, ব্র‍্যাক বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ড. তার্নিমা ওয়ারদা আন্দালিব বলেন, ‘‌‌শিক্ষার্থীরা রিসার্চ নিয়ে খুব আগ্রহী। তাদের উদ্দীপনা নতুন করে সম্ভাবনা জোগাচ্ছে। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বহুদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমরা কাজ করছি বেশকিছু পাবলিকেশন নিয়ে। ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব প্রতি বছর রিসার্চ ডে ও ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ কেইজ কম্পিটিশন আয়োজন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে। ভবিষ্যতে আমরা ক্লাবকে দেশের প্রথম সারির রিসার্চ ক্লাব হিসেবে দেখতে চাই। হাজার হাজার শিক্ষার্থী যেন ক্লাবের মাধ্যমে রিসার্চে হাতেখড়ি নিয়ে ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করে যেতে পারে এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন