ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে রফতানি খাতে নগদ সহায়তা নিয়ে জারি করা সার্কুলার পরিবর্তন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ২৪ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপনে রফতানি খাতের জাহাজীকৃত ৪৩টি পণ্যের ওপর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে ১ জানুয়ারি থেকে প্রণোদনা কমানো এবং পাঁচটি পণ্যে বাতিলসহ বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়। নগদ সহায়তা কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির ১৩ দিনের মাথায় তা আবার সংশোধন করা হলো। সরকারের সিদ্ধান্তের পর গতকাল এ-বিষয়ক সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন সার্কুলারেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাঁচ পণ্যের ওপর প্রণোদনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত ছিলেন না, যা সরকার মেনে নিয়েছে। এছাড়া ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নন-ট্র্যাডিশনাল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। সেটি আবার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ছিল, যার সমাধান হয়েছে। তবে গত বছরের আগস্টে জারি করা সার্কুলারে জুন পর্যন্ত প্রণোদনার সময় উল্লেখ ছিল। কিন্তু সেটি পরিবর্তন করে ১ জানুয়ারি থেকে বাতিলের কথা বলা হচ্ছে। এখন নতুন করে যে সংশোধনী দেয়া হলো সেখানে বলা হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। এতে সমাধান হচ্ছে না। বরং জটিলতা থেকে যাচ্ছে।
নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাস্তবায়নের তারিখ তারা ফেব্রুয়ারি থেকে দিয়েছে। আমি মনে করি এটা সঠিক হয়নি। তারা একটা সার্কুলারে বলেছে, জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সে অনুযায়ী আমি কাঁচামাল কিনেছি। ক্রয়াদেশ নিয়েছি। স্পিনিং মিল যে সুতা আমার কাছে বিক্রি করেছে, তার দামের সঙ্গে প্রণোদনা হিসাব করে টাকা নিয়ে গেছে। তাহলে এখন যদি বলেন জুনে নয়, ফেব্রুয়ারি থেকে প্রণোদনা কমিয়ে দেবেন, তাহলে তো আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৭ সাল থেকে প্রণোদনা তুলে দিতে হবে। এখন আপনি ২০২৫-এর জানুয়ারি থেকে এক ধাপে কমান, আর ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে আরেক ধাপ কমিয়ে তারপর জিরো করে দেন আমরা একমত। কিন্তু এখন কেন এসব করছেন? তার পরও যদি করেন ঠিক আছে, তাহলে জুলাই থেকে হতে পারে। কিন্তু এখন কেন?’
৩০ জানুয়ারির সার্কুলার বাতিল করে গতকাল জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, দেশের রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার চলতি অর্থবছরে ৪৩টি খাতে রফতানির বিপরীতে রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রদান করছে। এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিজ অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজার্স (এএসসিএম) চুক্তি অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোনো রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রদান করা যাবে না। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। এরূপ উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে একত্রে প্রত্যাহার করা হলে রফতানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার ক্রমান্বয়ে হ্রাসের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া আগের মতোই নতুন বাজার হিসেবে গণ্য হবে। এসব বাজারে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ নগদ সহায়তা মিলবে। গত ৩০ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে এসব বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা বাতিল করা হয়েছিল। এছাড়া আগের প্রজ্ঞাপনে পাঁচ এইচএস কোডের বিপরীতে রফতানি হওয়া পাঁচ পণ্যে নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা হলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে সেসব পণ্যে নগদ সহায়তার সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পাঁচ পণ্য হচ্ছে নিট কাপড়ের তৈরি টি-শার্ট, শার্ট, ট্রাউজার, ওভেন কাপড়ের জ্যাকেট ও ব্লেজার। এর বাইরে ৩০ জানুয়ারি জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে যেসব খাতে নগদ সহায়তা যা কমানো হয়েছিল, তা বহাল থাকবে বলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে রফতানিমুখী বস্ত্র খাত একাই পেয়েছে ৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।