নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা মহাসড়ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে শতভাগ বিল উত্তোলন

নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়ক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শেষ না করেই শতভাগ বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধু তা-ই নয়, এরই মধ্যে জামানতের ৫০ শতাংশ টাকাও তুলে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা চূড়ান্ত বিলের সঙ্গে বাস্তবে সম্পাদিত কাজের ব্যত্যয় পাওয়া গেছে। এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১৭ দশমিক ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৭-২০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজ পায় কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স লিমিটেড। ২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময়সীমা দুই দফা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। তবে ২০২১ সালের ৭ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে ওই বছরের ৩০ জুন চূড়ান্ত বিল তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর মাত্র তিন মাস না পেরোতেই একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর জামানতের ৫০ শতাংশ অর্থও তুলে নেন ঠিকাদার। পাঁচটি প্যাকেজে ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সঙ্গে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।

কাজ সমাপ্ত না হওয়া এবং বিল তুলে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।’

এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়। তাতে কর্ণপাত না করায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কাজগুলো চিহ্নিত করে এবং মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক মাপ গ্রহণ করে। তবে প্রাথমিক মাপ গ্রহণ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা চূড়ান্ত বিলের সঙ্গে বাস্তবে সম্পাদিত কাজের ব্যত্যয় পাওয়া যায়। কাজ শেষ না করেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করায় প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, ২০২২ সালে বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ধীরগতির অভিযোগে কুমিল্লার মোহাম্মদ আলমের মালিকানাধীন রানা বিল্ডার্স লিমিটেডকে কালোতালিকাভুক্ত করেছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। একই বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে ৪০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ প্রসঙ্গে ঠিকাদার মোহাম্মদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকায় আমাদের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত জমির মালিকরা আমাদের লোকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। তবে চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করলেও জামানতের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা এখনো আমি পাওনা আছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের আরো কাজ চলমান। নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ ফেলে কোথাও পালিয়ে যাব না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন