বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে পড়তে পারেন ইউআইইউতে

শফিকুল ইসলাম

ছবি: ইউআইইউ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শুধু ধনিক শ্রেণীর। সমাজে এমন একটি বয়ান প্রচলিত আছে। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে অনেক খরচ, এমন ভাবনা থেকেও অনেক শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হন না। তবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীরা যে বিনা খরচে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারেন সে প্রচারণা হয়তো খুবই কম। দেশের মানুষের আর্থিক সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে এবং উচ্চশিক্ষায় বিদেশমুখিতা কমাতে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে উল্লিখিত দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ। ইউআইইউতে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৩ শতাংশ হারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। এ স্কলারশিপের মাধ্যমে বিনা খরচে চার বছরের স্নাতক শেষ করতে পারেন একজন শিক্ষার্থী। যেটি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৩ শতাংশ হারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও বিনা খরচে পড়তে পারেন ইউআইইউতে। চলতি বছর বৃত্তি, ওয়েভারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

 এ বিষয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, ‘‌পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব সবার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য অনেক বেশি। এসব অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের যদি আমরা উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজ এলাকায় ফিরে গিয়েও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশের ২৪০টি থানার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে পড়ার সুযোগ রয়েছে ইউআইইউতে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন চাকরি নিশ্চিত করতে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (আরএ) হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সাধারণত পিএইচডির শিক্ষার্থীরা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে থাকে, তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু পিএইচডি নেই, তাই গবেষণায় আগ্রহী স্নাতকের মেধাবী শিক্ষার্থীদের আরএ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী গবেষণায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ পাবে।’ 

ইউআইইউতে মেধাভিত্তিক রয়েছে বেশকিছু স্কলারশিপ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ এবং গোল্ডেন ৫ প্রাপ্তদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড় দেয়া হয়। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড়ের ব্যবস্থা। এজন্য ন্যূনতম ‘ও’ লেভেলে ৪টি ‘এ’ থাকতে হবে আর ১০০ শতাংশ ছাড়ের জন্য ‘ও’ লেভেলে ৫টি ‘এ’ আর ‘এ’ লেভেলে ১টি ‘এ’ ও ১টি ‘বি’ থাকতে হবে। 

এ তো গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে স্কলারশিপ সুযোগ-সুবিধা। আপনি যদি পিছিয়ে পড়া দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের কেউ না হন, কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল গোল্ডেন ৫ নয় অথবা ইংরেজিমাধ্যমের শিক্ষার্থীও নন তবু শতভাগ টিউশন ফি ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতি সেমিস্টার ফাইনাল রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড় দেয়া হয়, যার বার্ষিক পরিমাণ প্রায় ১২-১৩ কোটি টাকা।

এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাই-বোন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী কোটা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভাই-বোন কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, করপোরেট কোটা, উপজাতি কোটা, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য টিউশন ফি ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথ অলিম্পিয়াড, ইন্টারন্যাশনাল ফিজিকস অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন অথবা জাতীয় কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং কনটেস্টে শীর্ষ ৩০তম স্থান পর্যন্ত অর্জন করবেন এমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ইউআইইউর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে (সিএসই) পড়ার জন্য ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড় দেয়া হয়।

ইউআইইউর হেড অব অ্যাডমিশন নাজমুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থাও রয়েছে। মেধাবী অথচ দরিদ্র এমন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) পক্ষ থেকে দেয়া হয় আর্থিক অনুদান।’ 

ইউআইইউর স্কলারশিপ বা বিশেষ সুযোগ-সুবিধার বিস্তারিত জানা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন