রাষ্ট্র এখন অত্যাচার ও নির্যাতনের কারখানা —মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাষ্ট্র এখন অত্যাচার-নির্যাতনের কারখানা হয়ে গেছে। ঘোর অন্ধকারে দেশ। সরকার রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভই দখল করে নিয়েছে। দেশের আত্মাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে বিএনপি পন্থী বিভিন্ন সাংবাদিক নেতা ছাড়াও দলটির যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দল ও জোটের নেতা, বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন মির্জা ফখরুল। 

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ বর্তমান সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী। আরেক ভাগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে। যারা সংগ্রাম করছে তারা নানাভাবে নিষ্পেষিত। একটার পর একটা মামলা দিয়ে তাদের প্রতিহত করা হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সময় পিছিয়েছে শতাধিকবার। সাংবাদিকদের গুম করে কয়েক মাস পরে ফেরত দেয়া হচ্ছে। প্রথিতযশা সাংবাদিকদের গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সমর্থনে কথা বলতে দেখলে লজ্জা লাগে।’

সরকারকে ‘দানব’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এখন জাতীয় ঐক্য দরকার। ঘরে বসে থাকার সময় নেই। রাজপথে নেমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে নামাতে হবে। অত্যাচার-নির্যাতন এখন এমন পর্যায়ে গেছে, সবাই মিলে এক জোটে লড়াই না করলে কীভাবে বের হব, আমি নিজেও বুঝতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ঈশ্বরগঞ্জে ৩০ বছর আগের মামলায় নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। সাবেক এমপি হাবিবকে ৭০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সারা দেশে বিচারের নামে চলছে অবিচার। এ থেকে আমাদের মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিকে রক্ষা করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন। সবাই মিলে আসুন এ সরকারকে বিদায় করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি।’

অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতারা সংসদে পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করেন। তারা জানান, বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন এ আইন করা হয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো প্রায় একইভাবে রাখা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘যেভাবেই বলা হোক না কেন, সাইবার নিরাপত্তার নামে সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই রয়েছে। সাংবাদিকদের হেনস্তা করতেই সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা ভুলে যায়।’

সরকার নিজেদের শাসন জারি রাখতে নানাভাবে গণমাধ্যমের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে বলে অভিযোগ তুলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এখন কেউ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সেটা আইনত অপরাধ গণ্য করা হচ্ছে। গণমাধ্যম ন্যায়সংগত কাজ করলেই গলা চেপে ধরার চেষ্টা করছে সরকার।’ 

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দল। এ এক দফা দাবি আদায়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতারা। তারা বলছেন, এক দফা দাবি আদায় হলেই মুক্তি মিলবে।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে নীরব থাকা মানে তার পক্ষ নেয়া। নীরব থাকার সময় নেই। এক দফা দাবি আদায় ছাড়া মুক্তি নেই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের একাংশের সভাপতি শহিদুল ইসলাম। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি হারুন আল রশীদ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন