১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সারা দেশে ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে এসব কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোড মার্চ ও দোয়া মাহফিল। আজ শুরু হয়ে এ কর্মসূচি চলবে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। তবে মাঝে তিনদিন কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। রাজধানীর গুলশানে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে এটি ঘোষণা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। মির্জা ফখরুলও এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

বিএনপির এসব কর্মসূচির মধ্যে সমাবেশগুলো মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। আর রোড মার্চের কর্মসূচিগুলো দেশের বিভিন্ন বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি ঘোষিত নতুন কর্মসূচি হলো আজ ঢাকা জেলার জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ। ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেটের পথে রোড মার্চ। ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ। একই দিন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সারা দেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দোয়া। ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালীর পথে রোড মার্চ। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ। ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে রোড মার্চ। একই দিন ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন। এছাড়া ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ। ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ। ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন। আগামী ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের পথে রোড মার্চ। ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ। ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রামের পথে রোড মার্চ। 

সিলেট বিভাগের রোড মার্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ের নেতারা যোগ দেবেন। বরিশাল বিভাগের রোড মার্চে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। খুলনা বিভাগের রোড মার্চে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা যোগ দেবেন। ময়মনসিংহ বিভাগের রোড মার্চে অংশ নেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। চট্টগ্রাম বিভাগের রোড মার্চে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অংশ নেবেন। 

বিএনপির সমমনা দলগুলো যেসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব সেগুলোয় অংশ নেবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন কখন কোনদিকে রূপ নেবে, সেটা রাস্তাই বলে দেবে। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সরকারই টিকে থাকতে পারে না। এ সরকারও পারবে না। এরই মধ্যে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’ 

বিএনপির সাবেক সিনিয়র নেতা সমশের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের গুঞ্জন নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘খন্দকার এখন আমাদের দলের সদস্য নন। সমশের মবিন চৌধুরীও আমাদের দলের সদস্য নন। সুতরাং তাদের মতো সিদ্ধান্ত তারা নিতেই পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বিএনপি হচ্ছে বিশাল প্রবহমান নদীর মতো। এখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো যায়, তাতে বিএনপির কিছু যায় আসে না।’ 

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে এককভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করে তাহলে জনগণ সেটা মেনে নেবে না। সারা দুনিয়া জানে, এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তার পরও যদি তারা নির্বাচন করে তাহলে শুধু জনগণ বা আমরা নই, গোটা দুনিয়া বুঝবে সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে।’ 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘অপশক্তিকে দূর করার জন্য বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে বিশ্বাস করি। আমাদের পন্থা শান্তিপূর্ণ। তা সরকার মানবে কি মানবে না এটা সরকারের বিষয়। পুরো বিশ্বের কাছে সরকারের নৈতিক পরাজয় এরই মধ্যে হয়ে গেছে। তবে আমাদের কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছি যেখানে মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার টিকে থাকতে পারবে না।’ 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন