অক্সিজেন সরবরাহের পর সিসিইউ থেকে কেবিনে খালেদা জিয়া —মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতির ফলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে অক্সিজেন লেভেল স্বাভাবিক হয়ে এলে তাকে কেবিনে আনা হয়েছে। হাসপাতালে গতকাল খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় রোববার দিবাগত মধ্যরাতে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। রাতভর সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে কেবিনে আনা হয়। 

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিসিইউ থেকে ওনাকে কিছুক্ষণ আগে কেবিনে আনা হয়েছে। তবে এতে স্বস্তির কোনো কারণ নেই। এটাকে স্থিতিশীলও বলা যাবে না। তার শারীরিক অবস্থা ওঠানামা করছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মাঝরাতে সিসিইউতে নিয়ে অক্সিজেন দিয়ে সেটা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, অতিদ্রুত তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার, যেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এজন্য তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছে তার পরিবার। বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’ 

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটমুক্ত নয় বলেও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম, লড়াই করা জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়া গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চলেছেন। গতকাল রাতে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল। আজ সকালে আবার কেবিনে নেয়া হয়েছে। ডাক্তাররা বলেছেন, তার পরও তিনি এখনো ক্রাইসিসের বাইরে নন।’ 

দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়, গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে শিফট করতে হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই সংকটাপন্ন মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে আজকে সকালে তিনি একটু বেটার। তার পরও তিনি এখনো ক্রাইসিসের বাইরে নন।’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে সারাক্ষণই বলছি, তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। ডাক্তাররাও একই কথা বলছেন। তাকে দ্রুত বিদেশে অ্যাডভান্স মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো অত্যন্ত জরুরি। এটা সম্পর্কে এখন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে এমনকি পূর্ব বিশ্ব, চীনও এখন কনসার্ন। তারা খালেদা জিয়াকে অনেক উঁচুতে দেখে। তাকে তারা দেখে গণতন্ত্রের নেত্রী হিসেবে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তাকে তারা সেভাবে দেখে। কয়েকদিন আগে আমাদের এখানে জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা খুব উদ্বিগ্ন।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান আদালত। একই বছর দুর্নীতির আরেক মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন