গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ

সুদহার না বাড়ানোর আহ্বান এফবিসিসিআই সভাপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকঋণের সুদহার না বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির এক সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ আহ্বান জানান। 

এ সময় মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশী বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সুদহার না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সুদহার বাড়ানো হলে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ 

করোনা মহামারী, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বিবেচনায় নিয়ে সব খাতের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের সুবিধা দেয়ার আহ্বানও জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। নির্ধারিত দামে যেন ব্যবসায়ীরা ডলার কিনতে পারেন এজন্য গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ব্যবসায়ীবান্ধব গভর্নর উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে করোনা মহামারীর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে আর্থিক ও নীতিসহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পলিসি সহায়তার কারণে করোনা মহামারীর ধকল সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত ধকলও সন্তোষজনকভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে।’

মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু ব্যবসা পরিচালন ও সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি এখনো ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়। কোনো নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে কামনা করেন। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার আহ্বান জানাই।’

গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণে ধাপে ধাপে বাড়তে পারে।’ এ সময় তিনি জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, নারীকেও জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। 

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যেন নারীদেরও জামানতকারী হিসেবে গ্রহণ করে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে। নারীদের ঋণপ্রাপ্তি সহজীকরণে ব্যাংকগুলোকে সম্প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এরই মধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প খাতে নারীরা যেন আরো এগিয়ে আসতে পারেন সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরো সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এরই মধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা।’

সৌজন্য সাক্ষাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মুনির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাছের, নির্বাহী পরিচালক, মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন