ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

দেশের প্রথম ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন জাবিসাস

মেহেদী মামুন

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়গুলোতে বিদ্যায়তনিক জায়গাগুলোতে সাংবাদিকতার চর্চা ছিল সীমিত। সত্তরের দশকে তার কলেবর বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত কোনো সংগঠন পাওয়া যায় না। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় একই সময়ে পেয়েছে একটি সাংবাদিক সংগঠন, যা কালের পরিক্রমায়ও ধরে রেখেছে সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। অর্ধশতকেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, যা জাবিসাস নামেই পরিচিত। জাবিসাসের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম ও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য একরামুল করিম জানান, দেশের জন্য যখন ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠার লড়াই। সবকিছু নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টা। ভস্মস্তূপ থেকে নতুন করে পথচলার সূচনা। সেই লড়াইয়ে সাতজন সদস্য নিয়ে ১৯৭২ সালের ৩ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস) নামের স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম এ ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠনের যাত্রা যেন এক অন্য রকম মাত্রা যোগ করেছিল।

প্রতিষ্ঠাকালীন কোনো অফিস না থাকলেও পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের (তৎকালীন ১নং হল) ক্যান্টিনের পাশে একটি রুমে কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল নিয়ে অফিস চালু হয়। সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রয়াত জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। জাবিসাসের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম ব্যাচের প্রয়াত রাশেদ আহমেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দ্বিতীয় ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের মোহাম্মদ কাশেম। রাশেদ আহমেদ আলী জাবিসাসের একটি স্মরণিকায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন যে কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময় চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের সাংবাদিকতা তাকে অনুপ্রেরণা জোগাত। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে সাংবাদিকতা করতে ও সাংবাদিক সংগঠন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম বলেন, ‘‌আজ গর্বের সাথে বলি জাবিসাস প্রতিষ্ঠার সাথে আমি জড়িত ছিলাম। আমাদের সময়ে আমরা ছয়-সাত জন সাংবাদিক ছিলাম। এর মধ্যে আমি প্রথমে অবজারভার এবং পরে দৈনিক জনপদ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি। ভূগোল বিভাগের ছাত্র আশরাফ মোহাম্মদ ইকবাল ছিল দৈনিক বাংলায়, যে পিআইডির পরিচালকও হয়েছিল। বাংলার বাণীতে প্রথমে ছিল অর্থনীতির ছাত্র শাহাদাত হোসেন। পরে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অর্থনীতির ছাত্র গোলাম আব্বাস হেলাল সেখানে কাজ করে। সে ছিল জাবিসাসের একজন। দৈনিক সংবাদে ছিল কবি নির্মলেন্দু গুণের ছোট ভাই শৈবালেন্দু গুণ, রফিকুল হক ছিল দৈনিক ইত্তেফাকে, বাংলাদেশ টাইমসে ছিল ইসলাম শরীফ। পরিসংখ্যানের ছাত্র মতিউল আলম ছিল বাংলাদেশ অবজারভারে আর অর্থনীতির ছাত্র আনু মুহাম্মদ (বর্তমানে অধ্যাপক) সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করত।’

জাবিসাস উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘‌দেশের প্রথম ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সমবয়সী এ সংগঠনের অর্জনের খাতা অনেক ভারী। বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের কল্যাণে আগামী দিনের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার উদাহরণ হয়ে থাকুক জাবিসাস।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন