নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাব

স্বেচ্ছাসেবার তিন যুগ

শফিকুল ইসলাম

সম্প্রতি ক্যাম্পেইন আয়োজন করে ১ হাজার ২০০ ব্যাগ ব্লাড ডোনেশন করে এনএসইউএসএসসি ছবি: এনএসইউএসএসসি

দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, পথশিশুদের মুখে হাসি ফোটানো, মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দান, শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ, বৃদ্ধাশ্রমে পরিবারহীন বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যসেবা—মানবিক এমন সব কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। তারা সবাই শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছুটে চলেন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। বলছি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের কথা। মানবিক এ ক্লাবের পথচলা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। ২৯ বছর ধরে মানব কল্যাণের ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের উৎসর্গ করেছেন সমাজসেবা ও মানব কল্যাণে। তারা বিশ্বাস করেন একসঙ্গে কাজ করলে সবকিছুই সম্ভব। সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন করা কঠিন কিছু নয়।

অসংখ্য কাজের সঙ্গে যুক্ত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্লাড ডোনেশন ড্রাইভ, শীতবস্ত্র বিতরণ, ইফতার ও ঈদবস্ত্র বিতরণ, ফ্লাড রিলিফ, অনুষঙ্গ, পিঠা উৎসব, বৈশাখী মেলা এবং ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট হলো সোশিও ক্যাম্প। বিভিন্ন রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্তদের রক্তস্বল্পতার জন্য প্রতি মাসেই রক্ত নিতে হয়। চলতি বছর মার্চে এনএসইউ ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পেইন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ১ হাজার ২০০ ব্যাগ ব্লাড ডোনেশন করেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালে। এছাড়া যারা ব্লাড ডোনেশন করেছেন তাদের ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস এ ও বি, এইচআইভি— এ পাঁচ ধরনের রক্ত পরীক্ষা করা হয় বিনামূল্যে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যার সময় যখন গ্রাম অঞ্চলের মানুষ আশ্রয়, বস্ত্র ও খাদ্য সংকটে পড়েন তখনো এ ক্লাবের উদ্যমী সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ছুটে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার সময় ৪ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ২৫ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল ছুটে যায় সুনামগঞ্জে। সহায়তা করা হয় ৫০০ পরিবারকে।

শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, প্রাকৃতিক পালাবদলে শীতার্ত মানুষের পাশেও দাঁড়ান এ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। চলতি বছর জানুয়ারিতে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় শীতার্ত গ্রামীণ হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ৮০০ কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন তারা। এ বছর রমজান মাসে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে অনাথ আশ্রমগুলোতে ঈদবস্ত্র বিতরণসহ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। যেখানে ৪০০ অনাথ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ঈদবস্ত্র।

সন্তানহীন হাজারো পিতা-মাতার একাকিত্ব জীবনে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের আরেকটি আয়োজনের নাম ‘অনুষঙ্গ’। একটি বৃদ্ধাশ্রম বেছে নিয়ে সবাই মিলে তাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও উপহার দিয়ে একটি দিনকে আনন্দময় করতে এ আয়োজন। গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১০০ জন সদস্যের একটি দল ২০০ জন বৃদ্ধ মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে নানা আয়োজন করে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ এবং অসচ্ছলদের প্রদান করা হয় হুইলচেয়ার।

সোশিও ক্যাম্প এ ক্লাবের সব থেকে বড় ইভেন্ট। ১০ বছর ধরে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। লক্ষ্য সামাজিক সমস্যাগুলোর প্রতিরোধ করা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। মা-বাবার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ব, তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার, নারী অধিকার, ইভ টিজিং প্রতিরোধে করণীয়সহ নানা সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য কী কী উপায় অবলম্বন করা যেতে এসব নিয়েই দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের মাঝে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন। 

ক্লাবের উপদেষ্টা মেজবাউল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘‌ সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাব এনএসইউ সব ক্লাবের মধ্যে অন্যতম। সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিজ ছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে থাকে। শিক্ষার্থীদের একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেও সাহায্য করছে এ ক্লাব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন