সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্ক

আয়তনের তুলনায় সাপ বেশি চলে আসছে লোকালয়ে

নূর আহমদ, সিলেট

সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্ক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সম্প্রতি নিলেট নগরীর বালুচর এলাকার লোকালয় থেকে সাড়ে ৯ ফুট একটি বার্মিজ অজগর উদ্ধার করা হয়। স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ এটি উদ্ধার করে। এরপর অজগরটি তুলে দেয়া হয় বন বিভাগরে হাতে। বন বিভাগ গত ২৪ আগস্ট অজগরটি টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে পার্কে ছেড়ে দেয়া সাপগুলো তাদের নিয়মিত বিরক্ত করছে। যখন-তখন বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। বন বিভাগও বলছে পার্কে জায়গার তুলনায় সাপ বেশি হয়ে গেছে। এর পরও টিলাগড় ইকোপার্কে সাপ অবমুক্তকরণ থামছে না।

সিলেট প্রকৌশল কলেজের কাছে অবস্থিত একটি রিজার্ভ ফরেস্টে টিলাগড় ইকোপার্কের অবস্থান। ফরেস্টের ১১২ একর জায়গা নিয়ে ২০০৬ সালে পার্কটি স্থাপন করা হয়। এটি সিলেট বন বিভাগ, বন অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প। পার্কটিতে রয়েছে নানা প্রজাতির সাপ। দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেয়ার পর বিভিন্ন আলাদা শেডে তারের জালের বেড়া দিয়ে তা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

সাপ নিয়ে কাজ করা সামাজিক সংগঠনগুলো বলছে, টিলাগড় ইকোপার্কে আয়তনের তুলনায় সাপের সংখ্যা বেশি, তাই সাপ ধরা পড়লে এখানে সাপ অবমুক্ত করা নিরাপদ নয়। জায়গা কম হওয়ায় সাপগুলো মানুষের বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। এতে এলাকায় আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুধু গত ২৪ আগস্ট নয়, এর আগেও সাপ অবমুক্তকরণ অব্যাহত রেখেছে বন বিভাগ। গত ৩ আগস্ট হিলুয়াছড়া চা বাগান থেকে একটি অজগর উদ্ধার করে বাগান কর্তৃপক্ষ। এরপর সেটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলে বন বিভাগ ইকোপার্কে অবমুক্ত করে। ২০২১ সালের ৮ আগস্ট ইকোপার্কসংলগ্ন বালুচর, আলুরতল এবং মেজরটিলা এলাকার বসতবাড়ি থেকে রাত ও পরদিন সকালে তিনটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়। পরে সাপ তিনটি টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাপ উদ্ধার ও অবমুক্ত করার খবর সব সংবাদ ও গণমাধ্যমে না এলেও প্রতিনিয়ত অবমুক্তকরণ অব্যাহত রয়েছে। এতে খাবারের সন্ধানে সাপগুলো বাসাবাড়িতে প্রবেশ করছে।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিকল্যাণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার এ অঞ্চলে বন্যপ্রাণী ধরা পড়লে তার চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে। প্রাধিকারের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ জানান, গত ২৯ জুলাই সিকৃবির সুহিসিনী দাস হলে একটি সাপ দেখার তথ্য পান। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রাধিকারের রেসকিউ উইংয়ের সদস্যদের জানালে রাকিব, রিমন, সাঈম ও জাভেদ সাপটিকে উদ্ধার করতে যান। উদ্ধার কাজে গিয়ে প্রাধিকারের সদস্যরা জানতে পারেন, বাহাদুর নামে এক ব্যক্তি সাপটিকে উদ্ধার করেছে। পরবর্তী সময়ে কাঁঠাল চত্বর থেকে সাপটিকে সংগ্রহ করেন প্রাধিকারের সদস্যরা। সাপটি ছিল নির্বিষ দুধরাজ। পরবর্তী সময়ে সাপটিকে টিলাগড় ইকোপার্কসংলগ্ন জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়।

বণ্যপ্রাণী ও সাপ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের অ্যানিমেল রেসকিয়ার শ্রীবাস নাথ বলেন, ‘২৪ আগস্ট রাতে বালুচর এলাকা থেকে আমাদের খবর দিলে সাড়ে ৯ ফুট লম্বা একটি বার্মিজ অজগর সাপ বন বিভাগরে কাছে হস্তান্তর করেছি। পরে সেটা টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়।’

শ্রীবাস বলেন, ‘আমরা বন বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সাপ ইকোপার্কে অবমুক্ত না করে খাদিম জাতীয় উদ্যানে করার জন্য। তবু ইকোপার্কে সাপ অবমুক্ত করা হয়। আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ধারণা করছি, টিলাগড় ইকোপার্কের আয়তনের তুলনায় সাপের সংখ্যা বেশি। তাই সাপের খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা আছে। ফলে ক’দিন পরপরই সাপ লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে চলে আসে। তাই বাস্তবতার আলোকে ইকোপার্কে সাপ অবমুক্ত নিরাপদ নয় বলে আমাদের মনে হয়। এক্ষেত্রে পাশের খাদিম জাতীয় উদ্যানে অনেক জায়গা,  ওখানে অবমুক্ত করা নিরাপদ। এছাড়া একান্ত যদি ইকোপার্কে অবমুক্ত করতে হয় তবে একটি নির্দিষ্ট স্থান ঘেরাও দিয়ে সেই জায়গায় অজগর অবমুক্ত করা যায়। এতে সাপ বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা নেই, আবার খাবারেও সমস্যা হবে না।’

স্থানীয় আলুরতল এলাকার সুমন আহমদ বলেন, ‘তিনি নাইট গার্ডের চাকরি করেন। পার্কের মধ্য দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়। সকালে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সড়কে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের দেখা মেলে। ইদানীং বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে অজগর, যা আগে তেমন দেখা যেত না। আমরা সবসময় বলি অন্তত বিষাক্ত সাপ যাতে অবমুক্ত না করা হয়। কারণ রাতে চলতে গিয়ে আমরা নিরাপত্তাহীতায় ভুগছি।’

এ ব্যাপারে বন বিভাগের সিলেট রেঞ্জ কর্মকর্তা ও ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার শহিদুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে বিষধর সাপ খুব একটা ধরা পড়ে না। সাধারণত অজগর জাতীয় সাপ খাবারের জন্য হয়তো লোকালয়ে চলে আসে। ইকোপার্কে আর সাপ অবমুক্ত না করার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। টিলাগড় ইকোপার্কের আয়তন অনেক কম, মাত্র ১১২ একর। সে তুলনায় খাদিম জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ৭০০ একর। আমরা চেষ্টা করি, সাপসহ বিষাক্ত কোনো প্রাণী ধরা পড়লে তা খাদিম জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করতে। সর্বশেষ যে অজগরটি টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়েছে তা মূলত পরিবহন সমস্যার কারণে করতে হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন