ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ১৫ বছর

ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুকান্ত কুমার সরকার। পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। তবে স্নাতক শেষে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। একাডেমিক যোগ্যতা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় কম শারীরিক উচ্চতা। ক্যারিয়ার নিয়ে যখন ক্রমেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন তখন সুকান্তর পাশে দাঁড়ায় ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)। পিডিএফের ক্যারিয়ারভিত্তিক বিভিন্ন কর্মশালায় আবারো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সুকান্ত। 

শুধু সুকান্ত সরকারই নন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার প্রায় অর্ধসহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কাছেই পিডিএফ এক ভরসার নাম। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি বর্তমানে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এসব শিক্ষার্থীর উন্নয়নে কাজ করছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পিডিএফের পক্ষ থেকে ৪৫০-এর অধিক শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেয়া হয়েছে। আর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬ জন স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া স্নাতক শেষে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করেছে সংগঠনটি। 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বশেমুরবিপ্রবি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজে পিডিএফের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৫, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২০, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৫, বশেমুরবিপ্রবিতে ২৫, ঢাকা কলেজে ১০ ও ইডেন কলেজে ১৫ জন প্রতিবন্ধকতার শিকার শিক্ষার্থী পিডিএফের সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন। এই আট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছেন প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

স্কলারশিপ ও কর্মসংস্থান ছাড়াও সংগঠনটির অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মশালা, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার শিক্ষার্থীদের চলাচলের উপযোগী ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ, শ্রুতলেখক ব্যাংক, ভয়েস ব্যাংক এবং অ্যাডমিশন হেল্প ক্যাম্প। এছাড়া সম্প্রতি প্রতিবন্ধকতার শিকার শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের উদ্দেশ্যে ইউএনডিপির সঙ্গে একটি যৌথ ট্রেনিং প্রজেক্ট চালু করেছে সংগঠনটি। 

পিডিএফের প্রতিষ্ঠাতা ড. মিজানুর রহমান কিরণ বলেন, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলোরি টেইলরের কথায় উৎসাহিত হয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করি। এ সময় উপলব্ধি করেছি, শারীরিক বা মানসিকভাবে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও তাদের মেধা, দক্ষতা এবং বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মানসিকতা স্বাভাবিক ব্যক্তিদের চেয়ে অনেকাংশেই বেশি। তবে সেক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন হয় যথাযথ পরিবেশের। পিডিএফ এ ধরনের পরিবেশ নিশ্চিতেই কাজ করছে। সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিক। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য সরকারি সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে উঠবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন