১৯৭৫ সালের মে মাসে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় ৫৮ শতাংশ

‘বাংলাদেশ’ বুলেটিন

(ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রকাশিত ইংরেজি পাক্ষিক ‘‌বাংলাদেশ’ বুলেটিনের ১ জুন, ১৯৭৫ সংস্করণের ‘‌টাকা এক্সচেঞ্জ রেট চেঞ্জড’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে হুবহু অনূদিত। তখন বৈদেশিক লেনদেনে প্রধান মুদ্রা ছিল পাউন্ড স্টার্লিং। রিজার্ভও হিসাব করা হতো পাউন্ড স্টার্লিংয়ে।) 

প্রতি পাউন্ড স্টার্লিংয়ের বিনিময় হার ৩০ টাকায় স্থির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ১৭ মে থেকে সিদ্ধান্তটি কার্যকরের কথা। ঢাকায় গত ১৫ মে এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয় বলে বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতি পাউন্ড স্টার্লিংয়ের বিনিময় হার এখন প্রায় ১৮ টাকা ৯৭ পয়সা। পাউন্ডের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের পাশাপাশি আমদানিতে লাইসেন্স ফি এবং এক্সচেঞ্জ ট্যাক্স বা বিনিময় কর প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ঢাকা থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, এছাড়া হোম রেমিট্যান্স স্কিম বাতিলেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা ১৬ মে থেকে কার্যকর হয়েছে।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‌বাংলাদেশ সরকার টাকার বিনিময় হার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রতি পাউন্ড স্টার্লিং বিনিময় হচ্ছে প্রায় ১৮ টাকা ৯৭ পয়সায়। নতুন বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রতি পাউন্ড স্টার্লিং পাওয়া যাবে ৩০ টাকায়। এ সিদ্ধান্ত ১৯৭৫ সালের ১৭ মে থেকে কার্যকর হবে।’

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে এ এক নতুন সিদ্ধান্ত। অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশের রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে পাট শিল্পসহ রফতানিমুখী অন্যান্য শিল্পের উৎপাদনকারীরা তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারি ভর্তুকির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছেন। এ ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান করতে গিয়ে উন্নয়নে বিনিয়োগ করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিতে হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এর ফলে দ্রব্যমূল্য টানা বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি আরো জোরালো হয়ে ওঠার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নও ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যেও টাকার বিনিময় হার ধরে রাখার কারণে বৈধপথে বাণিজ্যও ব্যাহত হয়েছে। 

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে রফতানি সম্প্রসারণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও বেড়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। টাকার নতুন বিনিময় হার এর ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে যে আয় বাড়বে, তা দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির পাশাপাশি দেশের শিল্প খাতের উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় কর্মসংস্থান বাড়ানোও সম্ভব হবে। বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ায় আমদানি ও রফতানি শুল্ক থেকেও রাজস্ব আহরণ বাড়ানো সম্ভব হবে। আহরিত রাজস্ব সরকারের ব্যয় নির্বাহে যত বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে, মূল্যস্ফীতির চাপও ততটা হ্রাস পাবে। অন্যদিকে উন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের পক্ষেও অর্থনীতির সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।  

সরকার এর পাশাপাশি আমদানি লাইসেন্স ফি ও এক্সচেঞ্জ ট্যাক্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ১৯৭৫ সালের ১৭ মে থেকে কার্যকরের কথা। টাকার নতুন বিনিময় হার কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৭ মে ব্যাংকগুলোয় সাধারণ লেনদেন বন্ধ রাখার কথা। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন