ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ

‘‌আমার ভাষার চলচ্চিত্র’

আনিসুর রহমান

ছবি: ডিইউএফসি

সিনেমার পোস্টার, গলা উঁচিয়ে হাঁকডাক, লাইন ধরে টিকিট কাটা, অবশেষে ঠেলাঠেলি করে সিনেমা হলে প্রবেশ এবং মূল অডিটরিয়ামে সিনেমা দেখা। বাইরে চলে কে কোন সিনেমা দেখবেন তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। প্রথম দেখায় নব্বইয়ের দশকের সিনেমা হল মনে করতে পারেন যে কেউ। কিন্তু না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিতআমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসবের দিনটি ছিল এমন ঘটনাবহুল।

বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো বাংলা সিনেমাকে নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) উৎসবের আয়োজন করা হয়। দুই বাংলার দর্শকপ্রিয় সিনেমার সপ্তাহব্যাপী মহড়া চলে। তরুণ সিনেমাপ্রেমীরা পরিচিত হয় রুপালি পর্দার চলচ্চিত্রের সঙ্গে। উৎসবের মধ্য দিয়ে সোনালি দিনের বাংলা ছবিগুলো যেন প্রাণ ফিরে পায়।

ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব আত্মপ্রকাশ করে ২০০২ সালে।চলচ্চিত্রে বাংলার মুখ নামে। সময়টা ছিল বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শিল্পের সংকটকাল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষিত রুচিশীল সমাজে দেশী চলচ্চিত্রের তেমন আবেদন ছিল না। বিশ্ব চলচ্চিত্র নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন সংস্কৃতিসচেতন মহলের নিয়মিত চর্চা অব্যাহত থাকলেও দেশী চলচ্চিত্রের প্রতি সবাই ছিল বিমুখ। ঠিক সেই সময় দর্শক টানতে সক্ষম হয়চলচ্চিত্রে বাংলার মুখ 

প্রথমবার দর্শকদের সাড়া পেয়ে নিয়মিত আয়োজনে রূপ নেয় বাংলা চলচ্চিত্রের উৎসব। পরের বছর আয়োজিত হয়সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র। ২০০৪ সাল থেকেবাংলা চলচ্চিত্র উৎসব নামে প্রথমবারের মতো একই সমান্তরালে প্রবাহিত হতে থাকে দুই বাংলার চলচ্চিত্রের ধারা। সোনালি দিনের রুপালি পর্দার ছবিগুলো দেখানো হয় ২০০৫ সালে বাংলার ছবি উৎসবে। ২০০৬ সালের আয়োজন ছিলবাংলা চলচ্চিত্রের ৫০ বছর শিরোনামে। অবশেষে উৎসব থিতু হয়আমার ভাষার চলচ্চিত্র নামে ২০০৭ সালে। এর পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে উনিশটি সফল আয়োজনের শেষে ২০২১ সালে থমকে দাঁড়ায় কভিড-১৯ মহামারীর সামনে। ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো বাংলা চলচ্চিত্রের উদযাপনে রঙে রঙিন হয়নি টিএসসি প্রাঙ্গণ। মহামারীর পরবর্তী ২০২২ সালের বসন্তে আবারো নবোদ্যমে আমার ভাষার চলচ্চিত্রের সুর আবারো প্রতিধ্বনিত হয় চিরচেনা পরিমণ্ডলে। 

শুধু সিনেমা দেখানোতেই সীমাবদ্ধ নয়, ২০২৩ সালে আয়োজিত ২১তম আসরে প্রথমবারের মতো শুরু হয়যুক্তি তক্কো গপ্পো নামে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব। পর্বে উঠে আসে চলচ্চিত্রকর্মী, নির্মাতা, অভিনেতা, সমালোচক চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অংশগ্রহণে দেশের চলমান চলচ্চিত্রের সংকট, সম্ভাবনা নিয়ে মুক্ত আলোচনা তর্ক-বিতর্ক। বাংলা চলচ্চিত্রের আদিপুরুষ হীরালাল সেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রয়াস থেকে ২০১৭ সালেআমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪২৩ থেকে প্রবর্তিত হয় হীরালাল সেন পদক। বিগত এক বছরের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী তীর্থ প্রতীম বলেন, ‘সমসাময়িক এবং ধ্রুপদি বাংলা চলচ্চিত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, একটি সংস্কৃতিমনা সুস্থ দর্শকশ্রেণী গড়ে তোলাই‍‌আমার ভাষার চলচ্চিত্র’’ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। চলচ্চিত্রের প্রাণ হচ্ছেন দর্শক, রুপালি পর্দার সেই সোনালি দিনগুলো আমরা চাই তাদের ফিরিয়ে দিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন