শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজ

বদলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের ধরন

শফিকুল ইসলাম

সময়ের পরিক্রমায় বদলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের ক্ষেত্র ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চাকরি নিয়ে আলাপ উঠলে প্রথমেই শুনতে হয় ‘‌চাকরির বাজার হাহাকার’। চাকরি আজকাল ‘সোনার হরিণ’। পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই খণ্ডকালীন চাকরি খোঁজেন। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান আর যোগাযোগের দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই এ সোনার হরিণ বাগে আনা যায়। পাঁচ বছর আগেও খণ্ডকালীন চাকরিতে শিক্ষার্থীদের যেমন আগ্রহ ছিল এখন সেটিতে ভাটা পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই খণ্ডকালীন চাকরি করতে এখন আর আগ্রহী নয়। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, শিক্ষার্থীরা যারা অর্থ উপার্জনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই টিউশনি করেন। বাজারে হোম টিউটরদের চাহিদা বেশ ভালো। একটা সময় ছিল শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরিকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় বদলে যাচ্ছে এ চিত্র। কাজের স্বাধীনতা, আর্থিক সুবিধা ও অর্থ আয়ের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বেছে নিচ্ছেন নিজের পছন্দসই কাজ। অনেকেই হচ্ছেন উদ্যোক্তা। কেউ স্বল্প পুঁজি নিয়ে নিজে যে কাজটিতে দক্ষ ও যেটি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এমন সব কাজ স্টার্টআপ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। আবার কেউ কেউ  ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ভিডিওগ্রাফি, গ্র্যাফিক ডিজাইনার, রাইডার, ফুড ডেলিভারি, অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউব ও ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি, সৌখিন গাছের চারা বিক্রি, কাস্টমাইজেড পেইন্টিং, পেন্সিল স্কেচ তৈরি, শাড়ি- থ্রিপিসে হ্যান্ড পেইন্টসহ বিভিন্ন অর্নামেন্টস বিক্রি করছেন। হোম মেইড কেকসহ নানা খাবার বিক্রি, মৌসুমি ফল, খেজুর, মধু, নিজ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রিসহ পছন্দের নানা কাজ বেছে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর সবই করছেন পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে। শিক্ষার্থীদের এসব উদ্যোগ খণ্ডকালীন চাকরির চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন ও কাজের স্বাধীনতা যেমন তৈরি করেছে তেমনি অনেকেই বড় পরিসরে শুরু করেছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘টিউশনি পাওয়া সহজসাধ্য নয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতদের অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর টিউশনি মেলে। এর বাইরে টিউশন মিডিয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য প্রথম মাসের বেতনের টাকা এজেন্সিকে চার্জ বাবদ দিতে হয়। টিউশনি করাতে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে কিংবা বাসে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়; কিন্তু প্রাপ্তি সামান্যই। মাসিক বেতন ৫-৭ হাজার টাকা। ওদিকে খণ্ডকালীন চাকরিতেও কাজের সময়ের তুলনায় তেমন ভালো অর্থ পাওয়া যায় না। যারা একটু বেশি প্যাশনেট তারা টিউশন বা খণ্ডকালীন চাকরি না করে নিজে থেকেই কিছু করছেন। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অস্থায়ী আয়ের উৎস টিউশনি। খণ্ডকালীন কাজের নেই সুযোগ। সাধারণত ক্যাম্পাসসংলগ্ন সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ছাড়াও কখনো কখনো উত্তরা, এয়ারপোর্ট ও ঢাকা শহরেও ছুটতে হয় শিক্ষার্থীদের। টিউশনির সম্মানী নিয়ে সন্তুষ্ট নন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। টিউশনির বাইরে এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরাও মৌসুমি ফলের ব্যবসা, আঞ্চলিক ঐতিহ্যবাহী খাবার, অনলাইনে নানা ব্যবসা,  ফ্রিল্যান্সিং, ভিডিও এডিটিং,  ভ্লগিং, কনটেন্ট তৈরি, ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে নানা কাজে যুক্ত রয়েছেন। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব মিয়া। ৫০ হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার তার চ্যানেলের। সজীব বলেন, ‘পড়াশোনার সঙ্গে আয় ছাড়াও অনেক মানুষের সংযোগ হচ্ছে। এগুলো আমাকে অনেক কিছু শিখতে ও শেখাতে সাহায্য করছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমান শাকিল জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও প্রায় এক। রাজশাহীতে টিউশনি পেতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় শিক্ষার্থীদের। টিউশন পেতে পূরণ করতে হয় নানা রকমের শর্ত। টিউশনির বাইরে অনেকেই ছোট ব্যবসা পরিচালনা করেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক কাইয়ুম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সময়কাল, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্বসহ নানা কারণে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ নেই শিক্ষার্থীদের। তবে অনেকেই টিউশনি, কেউ কেউ ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন বিজনেস, ফটো-ভিডিওগ্রাফিসহ বিভিন্ন ছোটখাটো কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে পড়াশোনা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন