![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_334628_1.jpg?t=1722054942)
মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একটি সমঝোতা (এমওইউ) সই হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের উপস্থিতিতে এমওইউতে স্বাক্ষর করেন তত্কালীন এমডি এহসান খসরু। এ নিয়ে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, পদ্মা ব্যাংকে ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ডেল মরগান। চার-ছয় মাসের মধ্যেই মূলধন ও ঋণ হিসেবে এ অর্থ হাতে পাবে ব্যাংকটি।
আকস্মিক এ ঘোষণা ওই সময় দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। অনিয়ম-দুর্নীতিতে ধুঁকতে থাকা দ্য ফারমার্স থেকে পদ্মা ব্যাংকে রূপ নেয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির দুর্দশা কাটছিল না। এর মধ্যেই ব্যাংক খাতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগের ঘোষণা অনেককেই বেশ অবাক করে তুলেছিল। ডেল মরগানের মতো প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ব্যাংকটিকে উঠে দাঁড়াতে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করছিলেন সবাই। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে চলে আসার ঘোষণা দেয়া সে বিদেশী বিনিয়োগের আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
ওই ঘোষণার দেড় বছর পর এখন পদ্মা ব্যাংকের বর্তমান এমডি বলছেন; যুক্তরাষ্ট্র নয়, প্রতিষ্ঠানটি তাইওয়ান থেকে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছে। পদ্মা ব্যাংকের মালিকানায় অংশ নেয়ার জন্য তাইওয়ানের ‘সানি
ব্যাংকের’ সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
অথচ মার্কিন বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশকিছু আর্থিক সুবিধা ও নীতিছাড় নিয়েছিল পদ্মা ব্যাংক। দেশের ব্যাংকগুলো বাধ্যতামূলকভাবে মোট আমানতের ১৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসাবে রাখছে। পদ্মা ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ হার নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আবার বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাংকটিকে লোকসান না দেখানোর মতো নজিরবিহীন সুযোগও করে দেয়া হয়েছিল। যেসব শর্তে ব্যাংকটিকে এসব সুবিধা দেয়া হয়েছিল, তার কোনোটি পূরণ হয়নি। এর মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগ আনার জন্য ব্যাংকটি আবারো সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে।
ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। অপসারণ করা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে দ্য ফারমার্স থেকে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে পদ্মা ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে জোগান দিতে হয়েছে ৭১৫ কোটি টাকার পুঁজি। ২০১৮ সালের এপ্রিলে দেয়া এসব পুঁজির বিপরীতে এখন পর্যন্ত ১ টাকাও মুনাফা পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। উল্টো ধারাবাহিক লোকসানের কারণে ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে মূলধনের দ্বিগুণের বেশিতে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে মূলধন জোগানের অন্যতম শর্ত ছিল, পদ্মা ব্যাংক দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। ব্যাংকগুলো তখন পুঁজিবাজারে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেবে। কিন্তু পুনর্গঠনের পাঁচ বছর পার হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কোনো শর্ত পূরণ করতে পারেনি পদ্মা ব্যাংক। এ অবস্থায় বিনিয়োগ নিয়ে হতাশ আইসিবি ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার জন্য ক্রেতা খুঁজছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে
আসার শর্তে পদ্মা ব্যাংকে আমরা বিনিয়োগ করেছিলাম। ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে আমরা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু এতদিনেও ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। তালিকাভুক্তির শর্তও পূরণ করতে পারেনি। ঘোষণা অনুযায়ী বিদেশী বিনিয়োগ আনতেও ব্যর্থ হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়ে আইসিবি এখন পর্যন্ত কোনো রিটার্ন পায়নি। আমরা পদ্মা ব্যাংকে থাকা অংশীদারত্ব বিক্রি করে দিতে চাই। এজন্য নিজেরা দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কেনার আগ্রহ দেখায়নি।’
পদ্মা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটির ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পুঞ্জীভূত এ লোকসানকে ইনট্যানজিবল অ্যাসেট বা অদৃশ্য সম্পদে রূপান্তর করেছে পদ্মা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে করা এ অদৃশ্য সম্পদের সংস্থান করার জন্য ব্যাংকটিকে ১০ বছর সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ ও ২০২৪ সাল হবে পদ্মা ব্যাংকের ‘মরাটরিয়াম
পিরিয়ড’। ২০২৫ থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের মুনাফা থেকে এ ইনট্যানজিবল অ্যাসেট সমন্বয় করা হবে। ততদিন পর্যন্ত ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে লোকসানের হিসাব গোপন রাখতে পারবে ব্যাংকটি। তবে লোকসান সমন্বয়ের সময়সীমা পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংক শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। বিদেশী বিনিয়োগ না এলে এ সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
পুনর্গঠনের পর থেকেই নতুন ঋণ দেয়া বন্ধ রেখেছে পদ্মা ব্যাংক। তারপরও ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। গত বছর শেষে পদ্মা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৫৯ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল খেলাপির খাতায়। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মূলধন সংরক্ষণেও ছাড় পেয়ে আসছে পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটির ওপর পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মূলধন সংরক্ষণে ছাড় না পেলে পদ্মা ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ঘাটতির পরিমাণ হতো ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। ঝুঁকিভারিত সম্পদের (রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেট) বিপরীতে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ গিয়ে ঠেকত ৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায়। এ ঘাটতির ফলে পদ্মা ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিআরএআর) হতো ঋণাত্মক ৫৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ছয় বছরের বেশি সময় ধরে পদ্মা ব্যাংকে আটকে আছে সরকারি ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার আমানত। ব্যাংকটিতে রাখা আমানতের সুদও সময়মতো পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। দফায় দফায় তাগিদ দেয়া হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ফেরত দিতে পারেনি পদ্মা ব্যাংক। উল্টো সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতকেও মূলধনে রূপান্তরের জন্য পদ্মা ব্যাংক থেকে এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
কোনো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত পরিশোধ করতে আরো ১০-১৫ বছর সময় নিতে চাইছে ব্যাংকটি। যেমন সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল ফারমার্স ব্যাংক ঢাকার বিভিন্ন শাখায়। সে অর্থ সুদসহ গিয়ে ঠেকেছে ৭৩৬ কোটি টাকায়। পদ্মা ব্যাংক আমানতের এ অর্থ ১৫ বছরে পরিশোধের প্রস্তাব দিয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ব্যাংকটিকে সময় দিয়েছে ১০ বছর। একইভাবে জীবন বীমা করপোরেশনের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে ব্যাংকটি। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আমানতের অর্থ ফেরত দিতেও একই পরিমাণ সময় চেয়েছে পদ্মা ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনেও আমানতের পাশাপাশি সুদ পরিশোধে পদ্মা ব্যাংকের ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সাল শেষে পদ্মা ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ৫ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ছিল শীর্ষ ১০ আমানতকারী প্রতিষ্ঠানের। এসব আমানতের বিপরীতে জমা হওয়া ২৮২ কোটি টাকার সুদ পদ্মা ব্যাংক পরিশোধ করতে পারেনি।
গত বছরের মার্চে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে যোগ দেন তারেক রিয়াজ খান। এক বছরের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘খেলাপি
হয়ে যাওয়া ঋণ আদায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা সফলও হয়েছি। খেলাপি ঋণ থেকে ২০২২ সালে ২০৬ কোটি টাকা নগদে আদায় সম্ভব হয়েছে। পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করা হয়েছে আরো ৪০০ কোটি টাকার ঋণ। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭৮ শতাংশ। গত বছর শেষে খেলাপি ঋণের হার ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। নতুন ঋণ দিতে না পারলেও ২০২২ সালে আমরা শতভাগ মার্জিনে ১৫০টি ঋণপত্র (এলসি) খুলেছি। গত বছর পদ্মা ব্যাংকে ৪৫০ কোটি টাকার আমানত বেড়েছে।’
ঘোষণা দিয়েও বিদেশী বিনিয়োগ আনতে ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে তারেক রিয়াজ খান বলেন, ‘ব্যাংক
খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আনা অনেক কষ্টকর কাজ। এজন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও সময়ের প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমরা এমওইউ স্বাক্ষর করেছিলাম, তারা বড় অংকের ফি ও চার্জ অগ্রিম চেয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না থাকায় আমরা সেটি দিতে পারিনি। এখন আমরা তাইওয়ানের সানি ব্যাংকের কাছ থেকে বিনিয়োগ আনার জন্য আলোচনা চালাচ্ছি।’
মূলধন হিসেবে ১৬৫ কোটি টাকা করে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংকে মোট ৬৬০ কোটি টাকা জোগান দেয়া হয়েছিল। এর বাইরেও ব্যাংকটিকে কলমানি, মেয়াদি আমানত ও সাব-অর্ডিনেট বন্ড হিসেবে অর্থ ধার দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। যেমন অগ্রণী ব্যাংক মূলধন হিসেবে পদ্মা ব্যাংকে জোগান দিয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে মেয়াদি আমানত হিসেবে ব্যাংকটিতে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা। পদ্মা ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেট বন্ডও কিনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে পদ্মা ব্যাংকের কাছে অগ্রণীর পাওনার পরিমাণ ৪৬৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য তিন ব্যাংকেরও একই ধরনের পাওনা রয়েছে পদ্মা ব্যাংকের কাছে। এসব পাওনা থেকে সুদ কিংবা মুনাফা কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
পদ্মা ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার সময় রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে তিন বছর সোনালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রায়ত্ত এ দুটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে তিনি পদ্মা ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। জানতে চাইলে আতাউর রহমান প্রধান গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পদ্মা
ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের ব্যাংক খাতের স্বার্থ রক্ষার্থে আমরা ব্যাংকটির মালিকানায় গিয়েছি। তবে সেটি স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত ছিল না। সরকারের নির্দেশেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পদ্মা ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়েছে। আমি যতদিন ব্যাংকটির পর্ষদে ছিলাম, ততদিন পদ্মা ব্যাংক নতুন কোনো ঋণ দেয়নি। আগের দেয়া ঋণ আদায়ই ছিল ব্যাংকটির প্রধান কাজ।’
আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘যে
পরিস্থিতিতে আমরা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, সেটি ছিল ব্যাংকটির সংকটাপন্ন সময়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মালিকানায় যুক্ত না হলে ব্যাংকটি এতদিন টিকে থাকতে পারত না। আমরা চেয়েছি, সবার আগে ছোট আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে। বেশকিছু খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়েছে। আবার কিছু আমানত পরিশোধও করা হয়েছে। তবে দুই-তিন বছরে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে— এমন প্রত্যাশা করা সঠিক হবে না। এজন্য দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে।’
পদ্মা ব্যাংককে টেনে তুলতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির সঙ্গে এমওইউ সই করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমওইউতে ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত সময়সীমার জন্য তিন বছর মেয়াদি বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগ আনারও। তবে এমওইউর শর্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ছিটকে পড়ছে পদ্মা ব্যাংক।
বিদেশী বিনিয়োগ আনার স্বার্থে পদ্মা ব্যাংককে কিছু নীতিছাড় দেয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এখন
যদি বিদেশী বিনিয়োগ না আসে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো বাতিল হবে। বিদেশী বিনিয়োগ আনার জন্য যে সময়সীমা ছিল, সেটি শেষ হয়ে গেছে। ব্যাংকটি থেকে নতুন করে সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, দ্য ফারমার্স ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল ৩৯ জন ব্যক্তি উদ্যোক্তা ও ১০ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে। চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা ব্যাংকটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতও ওই সময় ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন।