বরিশালে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, পুলিশ হেফাজতে গৃহকর্তা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বরিশাল

বরিশালে প্রয়াত সাবেক ইউপি সদস্যের বাড়িতে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। অচেতন অবস্থায় আরেক নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি বুধবার গভীর রাতে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামের। স্বজন পুলিশের দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

মৃতরা হলেন সাবেক ইউপি সদস্য মৃত দেলোয়ার হোসেনের মা লালমুন নেছা বেগম (৯৫) তার ছেলে সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী রিপা আক্তার (২৩) আর স্ত্রী মিনারা বেগম (৫৫) গুরুতর অবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনায় রিপা আক্তারের স্বামী সোলায়মানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইব্রাহিম জানান, সাবেক ইউপি সদস্য মৃত দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে চারটি ঘরের তিনটিতে লোকজন থাকে। বাকি একটি ঘর থাকে তালাবদ্ধ। বুধবার রাতে তিনটি ঘরে কোনো পুরুষ সদস্য ছিল না। রাত ১২টার দিকে প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম নামের এক নারী শব্দ পেয়ে জানালা খুলে দেলোয়ার মেম্বারের বাড়ির সামনে সাদা শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তখন মরিয়ম কে কে বলে ডাক দিলে লোকটি চলে যায়। এরপর মরিয়ম ওই ঘর থেকে বের হয়ে দেলোয়ার মেম্বারের ঘরের সামনে গেলে দরজা খোলা দেখেন, কিন্তু ঘরের ভেতর অন্ধকার ছিল। পরে তিনি ঘরে ঢুকে তিন নারীকে খাটে শোয়া অবস্থায় দেখেন। তাদের জাগানোর চেষ্টা করেও না পেরে বাড়ির অন্যদের ডাক দেন। পরে তিন নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লালমুন নেছা রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।

গৃহবধূ রিপা আক্তারের পরিবারের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের জেরে রিপাকে তার স্বামী শাশুড়ি মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। হত্যার বিষয়টি আড়াল করতে রিপার স্বামী সোলায়মান হোসেনের শতবর্ষী দাদিকেও হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খাবার বা অন্য কোনোভাবে বিষপ্রয়োগ করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টিকে চুরি বলে চালাতে ঘরের পাশে সিঁদ কাটা হয়েছে। পুলিশও মনে করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বুধবার রাত ২টার দিকে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের থেকে ১৫০ গজ দূরে ঘটনাস্থল। তবে আমরা গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। হাসপাতালে নেয়ার পর লালমুন নেছা রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করা হয়, মিনারা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ওসি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে রূপ দেয়ার জন্য চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।  

বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সিঁদ কেটে দুর্বৃত্তরা ঘরে প্রবেশ করে নারীদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে সেটা নিশ্চিত, কিন্তু বিষ খাবারের সঙ্গে মেশানো ছিল কিনা সেটা পরীক্ষা না করে নিশ্চিত বলা যাবে না। ঘরের আলমারি ওয়্যারড্রোব অক্ষত ছিল। তাই চুরি করার জন্য ঘটনা ঘটানো হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত নই। বিষয়টি তদন্ত করে মূল ঘটনা উদঘাটন করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোলায়মানকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন