বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ

ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন নামছে নতুন ৪০টি ব্যক্তিগত গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার অসহনীয় যানজটের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্যকে দায়ী করে আসছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উন্নত বিশ্বের শহরগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশে ঘটছে এর উল্টোটি। ঢাকায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাজধানীতে বাড়ছে যানজট-বিশৃঙ্খলা। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। ঢাকার অসহনীয় যানজটের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্যকে দায়ী করে আসছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার কারণেই মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। গত এক দশকে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এখন  যারা ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, তাদের বেশির ভাগই একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। ফলে ঢাকার রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়িতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। ফ্লাইওভার বানিয়েও লাভ হয়নি। বরং এগুলো দিন দিন বোঝায় পরিণত হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন তারা।

নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ৭০-এর দশকে ইউরোপে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। ২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে পালিত হবে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। দেশের ৬২টি সরকারি বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে আজ দিবসটি উদযাপন করা হবে।

গতকাল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস-২০২২ উদযাপন জাতীয় কমিটি। এতে জানানো হয়, বছর জ্বালানি ব্যবহার যানজট নিয়ন্ত্রণ করি, ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত রাখি স্লোগানে দিবসটি উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিকে ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে সাইকেল শোভাযাত্রা, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ: বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয় শীর্ষক লাইভ টক শো, বসবাসযোগ্য ঢাকা: ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা, পার্কিংয়ের পরিবর্তে এলাকাভিত্তিক ছোট আকারের সামাজিকীকরণের সুযোগ গড়ে তোলার আহ্বানে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে কার ফ্রি স্ট্রিট এবং ডিটিসিএ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে একটি আলোচনা সভা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপচয় হচ্ছে, বাড়ছে দূষণ। এসবের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ব্যক্তিগত গাড়ি। কিন্তু দেশে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ, প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং মানসম্মত ফুটপাত তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি পুরনো যানবাহন যথাযথ প্রক্রিয়ায় জীবনাবসানের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো সম্পন্ন হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সেজন্য এখন থেকেই নগরবাসীর কাছে বার্তা দেয়া দরকার। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের মাধ্যমে বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিটিসিএর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (মাস ট্রানজিট) একেএম হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (টিএমপিটিআই) মোহাম্মদ রবিউল আলম, ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হায়দার কামরুজ্জামান প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন