অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও জ্যানেট ইয়েলেনকে টিআইবির চিঠি

যুক্তরাষ্ট্রে পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : টিআইবি

বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ও অবৈধ সম্পদ জরুরি ভিত্তিতে জব্দ করে তা ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাষ্ট্রের (টিআইইউএস) সঙ্গে যৌথভাবে পাঠানো চিঠিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও জ্যানেট ইয়েলেনের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়।  

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র চ্যাপ্টারের দুই নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও গ্যারি কালম্যান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কতিপয় সাবেক বাংলাদেশী কর্মকর্তা ও তাদের ঘনিষ্ঠদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের গুরুতর প্রমাণ এখন বের হয়ে আসছে। এসব সম্পদ মূলত বাংলাদেশের জনগণের। এজন্য আমরা মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে এ ধরনের সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হলে তা চিহ্নিত ও জব্দ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এসব সম্পদ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হোক, যাতে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে আরো স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যায়। সাবেক মন্ত্রী, ব্যাংকার, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মারাত্মক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।  

এছাড়া চিঠিতে দুর্নীতি ও মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান ও গ্যারি কালম্যান। এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী ব্যক্তি বা কোম্পানির পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে মার্কিন সরকার তদন্ত করে দেখতে পারে এবং এসব সম্পদ ও সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট জব্দের মাধ্যমে এগুলোকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আইনজীবী ও আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করতে পারে যাতে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, সিআইডি, এনবিআর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের মতো সংস্থাগুলোর সংস্কার ও সক্ষমতা তৈরি করে যায়। এতে এসব সংস্থা আত্মসাৎকৃত সম্পদ চিহ্নিত করার পাশাপাশি এর প্রমাণভিত্তিক জব্দকরণ ও তা পুনরুদ্ধারে দ্রুত আইনপ্রয়োগ করতে পারে। এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষত দুবাই) এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, স্থানীয় নাগরিক সমাজসহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার যৌথভাবে কাজ করতে পারে যাতে করে আর্থিক বিধিনিষেধ ও ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত ও মূল লক্ষ্যদের চিহ্নিত করা যায়।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাসের এ ক্রান্তিলগ্নে সময়োপযোগী সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে প্রয়োজনীয় সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার মাধ্যমে প্রকৃত অংশীদারের দৃষ্টান্ত রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে, গত ৩০ আগস্ট যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীর উদ্দেশে বাংলাদেশীদের অবৈধ সম্পদ ফ্রিজ ও দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলো টিআইবি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক চারটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছিল টিআইবি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন