দূষণ কমাতে প্রপস পুনর্ব্যবহার করছে হলিউড

ফিচার ডেস্ক

সুপারম্যান, টোটাল রিকল আর স্টার ট্রেকের আউটফিট

লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি ওয়্যারহাউজ দেখা যায়, যেখানে নানা ধরনের পরিত্যক্ত বস্তু রয়েছে। এখানে আছে প্রচুর ফুলদানি, সোফা, নানা ধরনের আর্টওয়ার্ক, কৃত্রিম গাছপালা, প্লাস্টিক বিন ইত্যাদি। এগুলো বিক্রির জন্য নয়। নানা সিনেমার সেট থেকে এসেছে এসব। ফেলে দেয়া বস্তুগুলো বিভিন্ন নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল অন্যান্য জায়গায় ব্যবহারের জন্য বিনামূল্যে দেয়া হয়। ইকো সেট নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজটি করে। এরা বিভিন্ন প্রডাকশন হাউজে জিরো ওয়েস্ট স্ট্যান্ডার্ডে নানা ধরনের প্রপসও দিয়ে থাকে। এখানে একটি বিষয় খুবই আশ্চর্যজনক। কোনো কাজে লাগবে না মনে করা বস্তুগুলোও কেউ না কেউ নিয়ে যায় এবং প্রতিটি বস্তুই একটা নতুন জীবন লাভ করে।

ওয়্যারহাউজে অনেক সময় সিনেমা বা টিভির প্রডাকশন হাউজের কর্মীরা আসেন ধারণা নিতে কীভাবে প্রপস বানানো যায়। ডিসপোজ করার খরচটা এখানে বেঁচে যায় কারণ সেটা এখান থেকেই করা হয়। একটি প্রডাকশন হাউজ এভাবে কাজের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠতে পারে। সিনেমায় অনেক ধরনের প্রপস ব্যবহার করা হয়, যা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা সম্ভব। যেমন জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ডমিনিয়নে বড় আকারের ডাইনোসরসহ অন্যান্য প্রপস রয়েছে, যা দ্বিতীয়বার ব্যবহার সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব। সিনেমার ডাইনোসরটি সিলিকন ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি। গ্রিন ক্লোভার নামে যে কোম্পানিটি ডাইনোসর তৈরি করেছে, তারা এরই মধ্যে ডাইনোসরটি গলিয়ে ফেলেছে, যেন তা পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা যায়। এমনকি স্টান্টে ব্যবহূত তারগুলোও গলিয়ে নতুন করে ব্যবহার করা হচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে প্রায় প্রতিটি প্রডাকশন হাউজ। ২০৩৫ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। আবর্জনা কমাতে প্লাস্টিকের বোতল কাগজের ব্যবহারও কমানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রসঙ্গে নেপচুন এনভায়রনমেন্ট সলিউশনসের সাসটেইনেবিলিটি কনসালট্যান্ট বলেন, আবর্জনা প্লাস্টিকের মতো জিনিসগুলো খালি চোখে দেখা যায় বলে তা মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে বস্তুগুলো পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে, তাছাড়া অন্যান্য নানা বস্তুর পুনর্ব্যবহার সম্ভব।

পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান অ্যালবার্টের সার্টিফিকেট পেতে হলে নানা ধরনের বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে হবে। যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়। তবে নানাভাবে বিভিন্ন প্রডাকশন প্রতিষ্ঠানকে কাজের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কপ-২৭-এর সঙ্গে সঙ্গে প্যারিস চুক্তি অনুসারে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে টিভি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি নীতির আওতায় আনার চিন্তা করা হয়েছে। চুক্তি অনুসারে প্রতিটি দেশই শতাব্দীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য করণীয় ব্যাপারে একমত হয়েছে।

বর্তমানে সিনেমা টেলিভিশনে দেখানো বহু সেট, প্রাণী ইত্যাদি ভিজুয়াল এফেক্টের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। কিন্তু শুটিংয়ের অন্যান্য কাজের কারণে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বস্তু ব্যবহার করা হয়। এগুলো শুটিংয়ের পর কোনো কাজেই আর লাগে না। এসব নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নষ্ট করার চেয়ে পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের দূষণ কমানো সম্ভব।

আরেকটি সহজ সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে। কাগজ একটি অন্যতম ব্যবহার্য বস্তু। স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে কল শিট, নানা কাজেই এর ব্যবহার হয়। কিন্তু চাইলেই এগুলোকে ডিজিটাল মাধ্যমে (সেলফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ) নিয়ে আসা যায়। এর মাধ্যমে প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ কাগজ-বর্জ্য তৈরি হয় তা কমানো সম্ভব। আর পোস্ট প্রডাকশন ডিজিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি তো এখন কমবেশি হচ্ছে। কিন্তু সত্যি বলতে সেখানেও অনেক বস্তুগত প্রপ উপাদান প্রয়োজন হয়। সেগুলো এড়ানোর উপায় নেই কিন্তু পুনর্ব্যবহার এখানে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। ইকো সেটের কো-অর্ডিনেটর রিস মেডফেজারের মতে, ছোট পরিসরে শুরু করা হলেও ইকো সেট একাই মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারবে না।

তবে তার সহকর্মী জোডি ওয়াক্সম্যান অবশ্য আশাবাদী। তিনি মনে করেন, নতুন প্রজন্ম নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বলে এখন পরিবর্তন আসা সম্ভব। এখন প্রডাকশন ক্রুরা একবার ব্যবহারের পর নষ্ট করে ফেলা তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। ডোনেশন কো-অর্ডিনেটর জোডি বলেন, আগে হলে একটা ফ্রিজ ব্যবহারের পর ফেলেই দিত। এখন নতুন করে আবার ব্যবহার করা হয়।

সময়ের সঙ্গে জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং নানা কাজে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ নষ্টকারী উপাদান পরিবেশে ফেলে রাখার পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে ইকো সেটের ছোট পদক্ষেপটি বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারে। প্রডাকশন হাউজগুলো নিজেদের স্বার্থে খরচ কমানোর জন্য হলেও কাজে অংশগ্রহণ করলে বর্জ্য কমার পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হবে।

 

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন