নতুন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজেটের বাইরে দ্রুত অর্থ ছাড় চায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

মেসবাহুল হক

ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, পরিবর্তনশীল রণকৌশল প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্রমাগত সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। এজন্য তারা বহরে যুক্ত করতে চায় আধুনিক প্রযুক্তির অ্যাটাক হেলিকপ্টার। এরই মধ্যে হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি এমআই-২৮এনই অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধরনের আকাশযান কেনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় নিয়মিত বাজেটের বাইরে আলাদা অর্থ ছাড়ের প্রয়োজন। খাতে দ্রুত অতিরিক্ত থোক বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এমআই-২৮এনই অ্যাটাক হেলিকপ্টার যেকোনো আবহাওয়ায় শত্রুর ওপর হামলা চালাতে সক্ষম। রাতে অভিযান পরিচালনা করতে এর রয়েছে অত্যাধুনিক নাইট ভিশন সিস্টেম। হেলিকপ্টারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে শত্রুর অবস্থানের পাশাপাশি তাদের জনবল সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের রয়েছে সশস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য আটটি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ মেরামতে একটি মেইনটেন্যান্স, রিপেয়ার অ্যান্ড ওভারহল (এমআরও) স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৯৫০ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিমান বাহিনীর অনুকূলে আটটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয় এবং সি-১৩০জে বিমানসহ অন্যান্য বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ মেরামতে এমআরও স্থাপনে মোট হাজার ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে পরবর্তী পাঁচ অর্থবছরে বাহিনীর বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না করে অর্থ বিভাগে থোক আকারে রিজার্ভ রাখা এবং আকাশযান ক্রয়ের চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর বিমান বাহিনীর অনুকূলে অর্থছাড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয়া বিমান বাহিনীর চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, পরিবর্তনশীল রণকৌশল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্রমাগত সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি বিশেষভাবে অপরিহার্য। বিমান বাহিনী একটি প্রযুক্তিনির্ভর বাহিনী। কারণে স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য রাশিয়া থেকে তত্কালীন অত্যাধুনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, এমআই-১৭ হেলিকপ্টার এএন-২৪ পরিবহন বিমান সংগ্রহ করেছিলেন।

এর ধারাবাহিকতায় বিমান বাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছে আধুনিক জঙ্গি বিমানসহ প্রশিক্ষণ জঙ্গি বিমান, সর্বাধুনিক মডেলের পরিবহন বিমান, পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমান, বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার, উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ব্যবস্থা, স্বল্প মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমসহ গোলাবারুদসামগ্রী। আধুনিকায়নের ফলে বিমান বাহিনী স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ন্যস্ত দায়িত্ব সূচারুরূপে পালনের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

চিঠিতে বিমান বাহিনী জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও বহরে হেলিকপ্টার সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী বিমান বাহিনীতে মোট ১২টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সমসাময়িক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে পাঁচ বছরের মধ্যে বিমান বাহিনীর জন্য আটটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দুই দশকের বেশি সময় ধরে সি-১৩০বি বিমান ব্যবহার করে আসছে উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি সি-১৩০জে সিরিজের পাঁচটি বাহন বাহিনীর বহরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সি-১৩০ সিরিজ বিমানের পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য দক্ষতা অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিমান বাহিনী সি-১৩০জের একটি এমআরও স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এমআরও স্থাপনের জন্য কানাডার ক্যাসকেড অ্যারোস্পেসের সঙ্গে জিটুজি চুক্তি সম্পাদনের জন্যও প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।

বিমান বাহিনীর জন্য আকাশযান কেনা ব্যয়বহুল উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাহিনীর নিয়মিত বাজেট থেকে এসব আকাশযান কেনা হলে পরবর্তী সময়ে চুক্তিমূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে পরিচালন বাজেট কমাতে হয়। নিয়মিত বাজেট থেকে কেনা হলে কিস্তি পরিশোধ এবং পরিচালন কার্যক্রম উভয় ক্ষেত্রেই সবসময় ঘাটতি থেকে যায়। এক্ষেত্রে শুধু আকাশযান কেনার জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ বিমান বাহিনীতে দেয়া হবে তা নিয়মিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না করে অর্থ বিভাগ থেকে থোক আকারে রিজার্ভ রেখে বিমান বাহিনীকে অবহিত করা যেতে পারে বলে বিমান সদর দপ্তর মনে করে। পরবর্তী সময়ে আকাশযান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত হলে অর্থ ছাড়করণের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন